ভেড়ামারায় প্রস্তুত ৪১০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট

গ্যাস টারবাইন। ষ্টীম টারবাইন। দু’টি টারবাইনই প্রস্তুত। গ্যাস টারবাইনের মাধ্যমে ৩’শ মেগাওয়াট আর গ্যাসের ষ্টীম টারবাইনের মাধ্যমে ১৪০ মেগাওয়াট। প্রতিদিন ৪১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হবে জাতীয় গ্রীডে। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ভেড়ামারার কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যাান্ট এখন উদ্ধোধনের অপেক্ষায় পুরোপুরি প্রস্তুত। চলতি মাসের শেষের দিকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক ভাবে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উদ্ধোধন করবেন। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উদ্ধোধনের পর উত্তর দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের ৮ জেলার বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ হবে।

বিদ্যুৎ’র অব্যাহত ঘাটতি মোকাবিলায় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। স্থান নির্বাচন করা হয়, দেশের বৃহত্তম তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং লালনশাহ সংযোগ সড়ক সেতুর পার্শ্বেই। আর্ন্তজাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ টি পান জাপানের মারুবেনি কর্পোরেশন নামের একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানী। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৪ হাজার ১’শ কোটি টাকা। কাজটি তদারকি এবং বুঝে নেন নর্থ ওয়েষ্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানী লিমিটেড।

২০১৪ সালের জুলাই মাসে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২ হাজার ৭’শ ৮৬ টি শক্তিশালী পাইলিং এর উপর দাঁড়িয়ে থাকা এ প্ল্যান্ট টি তে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ১টা গ্যাস ইউনিট এবং ১টা ষ্টীম টারবাইন ও ১টা এইচআরসিজি স্থাপন করা হয়েছে। যা দিয়ে উৎপাদন করা হবে ৪১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সাধারণ গ্যাস টারবাইন দিয়ে ৩০০ এবং গ্যাস টারবাইন এর ফ্লু গ্যাস দিয়ে ষ্টীম টারবাইন এর মাধ্যমে উৎপাদন হবে আরো ১৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। শক্তিশালী এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ৪৭২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরীক্ষামুলক ভাবে উৎপাদনে আসে ২০১৭ সালের ৩১ মার্চ। এসময় শুধুমাত্র গ্যাস টারবাইনে ২৮৭.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করা হয়। পরে তা উন্নীত হয় ৩০০ মেগাওয়াটে। এরপর ১৫ ডিসেম্বর গ্যাস টারবাইন এর ফ্লু গ্যাস দিয়ে ষ্টীম টারবাইন এর মাধ্যমে আরো ১৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সফলতা লাভ করেন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চৌকস প্রকৌশলীরা। এরপর থেকে বানিজ্যিক ভাবে ৪১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করা হচ্ছে। গ্যাস দিয়ে প্ল্যান্ট টি চালানো হবে বলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যায় হবে মাত্র ১টাকা ৮৯ পয়সা।

ভেড়ামারায় কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আসাদ হালিম জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ১৫ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিক ভাবে ৪১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যাচ্ছে। বর্তমানে নর্থ ওয়েষ্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানী লিমিটেড এর প্রকৌশলীদের নিরলস প্রচেষ্টায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নিরবচ্ছিন ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করছে। প্রাকৃতিক গ্যাস দ্বারা সর্বনিম্ন মুল্যে উৎপাদিত বিদ্যুৎ এ অঞ্চলের বিদ্যুতের ঘাটতি পূরনের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব কিছুই প্রস্তুত। এখন শুধু উদ্ধোধনের অপেক্ষার পালা।

ভেড়ামারায় কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট’র চীফ ইঞ্জিনিয়ার ও প্ল্যান্ট ম্যানেজার মোশাররোফ হোসেন জানিয়েছেন, চাহিদা অনুযায়ী আমরা গ্যাস পাচ্ছি না। প্ল্যান্টে ৪১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রতিদিন গ্যাস প্রয়োজন ৬৫ এমএমসিএফটি। কিন্তু সেখানে পাচ্ছি মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ এমএমসিএফটি। যে কারনে আমরা পূর্নাঙ্গ ভাবে ৪১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করতে পারছি না। এ প্ল্যান্টটি সর্বোচ্চ ৪৭২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। এ কেন্দ্রটির মাধ্যমে উত্তর দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের বিদ্যুৎ এর চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।