• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

সারাদেশে নির্মাণ হচ্ছে ৬৪টি দেশীয় যাত্রাপালা

প্রকাশ:  ০৫ জানুয়ারি ২০১৯, ২০:৪০
বিনোদন প্রতিবেদক
ছবি: প্রতিবেদক

যাত্রাপালা বাঙালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। এক সময় বাংলাদেশের গ্রাম ও শহরে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল যাত্রাপালা। যাত্রাপালার মধ্যে ঐতিহাসিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের পাশাপাশি উঠে আসে সামাজিক নানা অসংগতি ও অনিয়মের প্রতিচিত্র। গত শতকের নব্বই দশক পর্যন্ত যাত্রা একটি জনপ্রিয় শিল্প মাধ্যম হিসেবে এ দেশের দর্শকমহলে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল। সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন কারণে যাত্রাশিল্প তার অবস্থান হারিয়েছে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি যাত্রাশিল্পের সুদিন ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে নানবিধ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ‘যাত্রা শিল্পের নবযাত্রা’ শ্লোগান ধারণ করে যাত্রা-নীতিমালা প্রণোয়ন করা হয়েছে এবং কয়েক বছর ধরে শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃক যাত্রাদল নিবন্ধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে, ইতোমধ্যে ১০৬টি যাত্রাদলকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। যাত্রাদল নিবন্ধনের লক্ষে গত ১২ ও ১৩ নভেম্বর ১০ম যাত্রানুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ইতোমধ্যে ‘ঈশা খাঁ’ শিরোনামে একটি প্রতœযাত্রা নির্মাণ এবং মুনীর চৌধুরী রচিত ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ নাটককে যাত্রাপালায় রূপান্তর করে ম ায়নের ব্যবস্থা করেছে। বর্তমানে পাঁচটি যাত্রাপালা নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় দেশের ৬৪ জেলায় ৬৪টি দেশীয় যাত্রাপালা নির্মিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে ৬৪টি দেশীয় যাত্রাপালা নির্বাচন করে জেলায় পাঠানো হয়েছে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে পালাগুলোর নির্মাণ ও ম ায়ন কার্যক্রম শেষ হতে যাচ্ছে। শিল্প সংস্কৃতি ঋদ্ধ সৃজনশীল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে আমাদের সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ইতিবাচক পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে যাত্রাশিল্পের হারানো গৌরব ফিরে পাবে বলে প্রত্যয় ব্যাক্ত করেছেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

শিল্পে ঐক্যতানের সমন্বয়ে দেশজ ও আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি চর্চা লালন ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। নাটক, পাপেট, চলচ্চিত্র, যাত্রা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে ইতোমধ্যে বেশকিছু কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগ। এর মধ্যে অন্যতম যাত্রাপালা। যাত্রাপালা আমাদের দেশের সুদূর অতীতে গ্রামে সুরুচিপূর্ণ ও আকর্ষনীয় বিনোদন হিসেবে দর্শককে বিপুল আনন্দ প্রদান করতো এবং বিনোদনের অন্যতম শিল্প মাধ্যম ছিলো যাত্রাপালা। যাত্রাপালার পুরনো সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার লক্ষে ও যাত্রা শিল্পেকে দর্শকনন্দিত করার জন্য শিল্পকলা একাডেমি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী’র পরিকল্পনায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ২০১২-১৩ অর্থ বছরে দেশের ৬৪টি জেলা শিল্পকলা একাডেমির অংশগ্রহণে ৭৬টি মুক্তযুদ্ধভিত্তিক নাটক নিয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় নাট্যোৎসব’, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে দেশের ৬৪ জেলার অংশগ্রহণে আয়োজন করে ‘স্বপ্ন ও দ্রোহের নাট্যোৎসব’, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে দেশের ৬৪টি জেলা শিল্পকলা একাডেমি অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় ‘সাহিত্য নির্ভর জাতীয় নাট্যোৎসব’ এবং মানুষের প্রয়োজনীয়তা ও সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতেকে সামনে রেখে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে মূল্যবোধের নাট্যউৎসব আয়োজন করে। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে জেলাভিত্তিক কৃষ্টি ও সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ অবলম্বনে নির্মিত হয় ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাটক। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৬৪ জেলায় নির্মিত হচ্ছে দেশীয় যাত্রাপালা। এছাড়াও আগমী ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে নির্মিত হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ৬৪টি নাটক।

ইতোমধ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় সুষ্ঠু যাত্রা শিল্পের প্রসারের জন্য যাত্রা শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০১২ প্রণিত হয়েছে। এই নীতিমালার আলোকে ২০১৩ থেকে শিল্পকলা একাডেমি যাত্রাশিল্প নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করেছে। একাডেমিতে আবেদন ও নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১০৬টি যাত্রাদলকে নিবন্ধন সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও যাত্রাশিল্পের উন্নয়নে দেশব্যাপী প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনীসহ বিভিন্নভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।

পিবিডি/ হাসনাত

যাত্রা,বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি,নাটক
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close