প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই পারবেন সমাধান দিতে
রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কথাবার্তা বা লেখালেখির কমতি নেই। যার যার চিন্তাভাবনা থেকে তারা মত দেবেন এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের ওপর হঠাৎ করে চাপিয়ে দেওয়া এই অমানবিক সমস্যার চাপে দিশেহারা মানুষ তাদের আবেগ জানাবে। তাদের মতো নানাভাবে সাহায্য করবে। কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে এর সমাধান দরকার। বাংলাদেশের সামনে যে ভবিষ্যৎ, তার সামনে যে উন্নয়ন ও উজ্জ্বলতার হাতছানি, তাকে কিছুতেই হাতছাড়া হতে দেওয়া যাবে না। সমস্যার চাপ যত বড় হোক না কেন, আমাদের মোকাবিলা করতেই হবে। আর এই মোকাবিলার জন্য দরকার সুষ্ঠু নেতৃত্ব। প্রজ্ঞা আর সাহস ছাড়া এর সমাধান অসম্ভব। মনে পড়ছে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর কথা। একাত্তরের ভয়াবহ দিনগুলোয় আমরা পালিয়েছিলাম ভারতে। সে সমস্যার চাপ ছিল আরও বেশি। দলে দলে বাঙালির ভারত পালানোর সংখ্যা পৌঁছেছিল কোটিতে। সে সময়কালে দুনিয়াও ছিল আরেক ধরনের। পাকিস্তান তখন অনেক বেশি শক্তিশালী একটি দেশ। তার গভীর গোপন দোস্ত আমেরিকা তখন এক নম্বরে। সঙ্গে ছিল চীন। এই তিন দেশের মোকাবিলা কোনো কথার কথা ছিল না। শুধু রাশিয়া বা সোভিয়েত ইউনিয়নকে পাশে নিয়ে ইউরোপ, আমেরিকা, চীনের বিরোধিতার মুখে অসাধ্য সাধন করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। সে প্রজ্ঞা আর মেধা ছিল তার রক্তে। বাকিটা এসেছিল সাধনা, ধৈর্য আর সাহসের মাধ্যমে।
আজকের বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল দেখে আমার মনে হচ্ছে ঠিক তেমন একজন নেতার প্রয়োজন। ভালো করে ভেবে দেখুন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই একমাত্র নেতা, যিনি এর সমাধানে ভূমিকা রাখবেন। আজকের বাংলাদেশে তার ইমেজ অনেক বেশি উজ্জ্বল। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তার ভাবমূর্তি এখন অন্য জায়গায়। জার্মানির মতো দেশে নির্বাচনের আগে অ্যাঞ্জেলার প্রচারণায় তিনি এবং শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এটি কোনো সাধারণ বিষয় না। আমি এখানে মানে সিডনিতে, এ দেশের মূলধারার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি তাদের ভেতর আগে খালেদা জিয়া ও বিএনপি নিয়ে যে ধারণা ছিল, তা কেটে গিয়ে এখন কেবল শেখ হাসিনাকেই চেনেন তারা। আমাদের সমাজ, জাতি বা দেশ কিছুতেই কাউকে মান্য করার বিষয় নেই। থাকলে আমরা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কূটতর্কে মাততাম না। সে সমাজে একশ্রেণির ধর্মান্ধ, উগ্র আর লেখাপড়া জানা নামের কথিত সুশীলরাই তাকে সহ্য করতে পারে না। আর কিছু জ্ঞানপাপী, যারা দেশ ও দেশের বাইরে অধ্যাপনা বা এ-জাতীয় কিছু করে নিজেদের মহাপ-িত ভাবেন, তারাই শেখ হাসিনার ঘোরবিরোধী। কারণ তাদের ধারণা, শেখ হাসিনার পরের পদটা তাদের প্রাপ্য।
সম্পর্কিত খবর
এদের কথা শুনে কাজ হবে না। আজ যে সমস্যা তার সমাধান দেবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। গতকাল তিনি মুখ খুলেছেন। স্পষ্ট করে বলেছেন, সব রোহিঙ্গাকেই ফিরিয়ে নিতে হবে। দেশের ভেতর ধর্ম সম্প্রদায় বা অন্য কারণে যত আবেগ আর অনুভূতি থাক না কেন, সমস্যা রাজনৈতিক। এর সমাধান এখন আন্তর্জাতিকভাবে করার বিকল্প নেই। কাঁচা আবেগ বা উন্মাদনা ছড়ানোর একজনও কোনো রোহিঙ্গাকে বাড়িতে রাখবেন না। দায় সরকারের। দায় জাতির। তাই আবেগের পরিবর্তে বাস্তবোচিত সিদ্ধান্ত এখন জরুরি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রক্তেও সমাধানের উত্তরাধিকার আছে। তার পিতা জাতির জনক স্বাধীন দেশ থেকে ভারতীয় সেনাদের নিয়ে যেতে ভারতকে খুব বেশি সময় দেননি। এবং তার কারণ তার ইমেজ। আমার মতো অনেকেই মানবেন শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মুখ খুললে বা ভূমিকা রাখলে ভারত, চীন, আমেরিকাসহ অনেকেই বিষয়টি আবার ভাবতে বাধ্য হবে।
অজয় দাশগুপ্ত
বাংলাদেশের সঙ্গে এখন চীন ও ভারতের যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক, তাতে তারা চাইলেই মুখ ফেরাতে পারবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি খুব ভালো জানেন, এত এত রোহিঙ্গা পালন এবং তাদের অনিশ্চিত জীবনের দায় বাংলাদেশ নিতে পারবে না। আন্তর্জাতিক সাহায্যের নামে চাল-ডালের দিন শেষ। বাংলাদেশ এখন আপনার নেতৃত্বে এমন এক উচ্চতায়, যেখানে তাকে মুখের ওপর না করার সাহস নেই কারো। আমাদের দেশের নোংরা রাজনীতির বাইরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও আপনার ইমেজ যে অনন্যতায়, তাকে এবার কাজে লাগাতে হবে।
মানবিকতার প্রশ্নে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে তার সুনাম কুড়িয়েছে। একজন শরণার্থীকেও কোথাও অপমান করা হয়নি। যারা এসেছে জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে তাদের আশ্রয়ের পাশাপাশি সেবাও দেওয়া হচ্ছে। বিবিসি দেখাল কক্সবাজার এলাকায় হাসপাতালে দেওয়া সেবা ও চিকিৎসার সচিত্র প্রতিবেদন। বিদেশের মিডিয়ায় এ সমস্যার গুরুত্ব ও বাংলাদেশের অবদানের কথা এখন বিশ্ববাসীর জানা। তারা আমাদের এই ভূমিকাকে পজিটিভভাবে নিয়েছে। সেখানে নরেন্দ্র মোদি বা পাকিস্তানের কূটচাল ধোপে টিকবে না। তা ছাড়া এখন কারো দ্বারা বা কারো ইচ্ছে হলে তথ্য গোপন রাখতে পারে না। পোড়মাটির নীতি নেওয়া মিয়ানমারের এই চেহারাও জাতিসংঘের অজানা নয়। তা ছাড়া আমরা কোনো যুদ্ধ চাই না। আমরা শান্তিতে থাকতে চাই। শান্তি কামনায় আপনার অবদান আরও একবার এ বিষয়ে আপনাকে এবং দেশকে উজ্জ্বল করুক, যাতে এই সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি বাংলাদেশ তার উন্নয়নযাত্রায় আরও বহুদূর এগিয়ে যেতে পারে।
শেখ হাসিনা আপনি দুর্দিনের কাণ্ডারি। আপনি পারবেন-ই।
লেখক: কলাম লেখক সূত্র: আমাদের সময়