• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

মুক্তিযুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকা কি এই প্রজন্ম জানে?

প্রকাশ:  ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ২০:৩০
জয়ন্ত রিপন

নতুন প্রজন্ম কি জানে আমাদের সঠিক ইতিহাস! যাদের নিজেদের জানা উচিত এবং অপরকে জানানো উচিত তারা নিস্প্রভ কেন? শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে লোকদেখানো গলাবাজি করে কি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়া সম্ভব!! নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে যে "কাউয়া" গুলো কা-কা রবে স্খলিত,যে হাইব্রিডেরা নিজের আখের গুছাতে ব্যস্ত তাদের হাত থেকে বাঁচাতে হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে,মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চেতনাকে।নতুন প্রজন্মকে সঠিকভাবে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।জানতে হবে আমাদের সঠিক ইতিহাস।

১৯৭১ সনের আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কিসিঞ্জাররের সাথে ফোনে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিক্সন বলেছিলেন, "ও আমাদের শুষে নিয়েছে ... এই মেয়েছেলেটা আমাদের চুষে নিয়েছে" ("She suckered us. Suckered us.....this woman suckered us."), । আলাপটা হচ্ছিলো ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে নিয়ে। নিক্সন বরাবরের মতো অভ্যাসবশত: এ ধরণের খারাপ শব্দ হরহামেশাই ব্যবহার করতেন।

সম্পর্কিত খবর

    ভীষন ববদমেজাজি রাগান্বিত নিক্সন কিসিঞ্জার কে তখন আরো বলেছিলেন, "ওকে এটার জন্য মূল্য দিতে হবে। ওকে মূল্য দিতেই হবে" ("But let me tell you she is going to pay. She is going to pay.")।

    নিক্সন কিসিঞ্জারকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে,চাইনিজরা ভারতের বিরুদ্ধে কোন আক্রমণাত্মক ভূমিকা নেবে কিনা। কিন্তু চাইনিজ সরকার আমেরিকান সরকারকে আশাহত করে ভারতের বিরুদ্ধে কোন ভীতিমূলক পদক্ষেপ ( "intimidate the Indians") নেয়নি, কারন দূরদর্শী চাইনীজ সরকার ততোদিনে বুঝে গিয়েছে যে,পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।

    ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে দিয়েছে ৩রা ডিসেম্বর।অপরদিকে নিক্সন ও কিসিঞ্জারের মধ্যে এই কথোপোকথন হচ্ছিলো ডিসেম্বরের ৪/৫ তারিখ।

    এর মাস খানেক আগে ইন্দিরা গান্ধী এসেছিলেন আমেরিকা সফরে। হোয়াইট হাউসে নিক্সন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরাকে ধমকের সুরে বলেছিলেন, " পাকিস্তানকে ভেঙ্গে তোমাদের কিছু অর্জন হবে না" ("nothing could be served by the disintegration of Pakistan")। ভয় দেখিয়েছিলেন, "পরাশক্তিগুলো কি ধরণের পদেক্ষেপ নেবে তার চুলচেঁরা বিশ্লেষন করা কোন ভাবেই সম্ভব না যদি ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শত্রুতা মূলক পদক্ষেপ নেয়" ( "it would be impossible to calculate with precision the steps which other great powers might take if India were to initiate hostilities".)।

    কিসিঞ্জার পরে বর্ননা করেছিলেন এইভাবে যে,নিক্সন অনেক কিছুই বোঝাচ্ছিলেন ইন্দিরাকে, ইন্দিরা এক ধরনের "নিরুত্তাপ ঔদাসীন্য" ( "aloof indifference") নিয়ে শুনেছিলেন।

    পাকিস্তান, বিশেষ করে ইয়াহিয়া খান ওই সময়ে আমেরিকা্র সাথে চীনের ২২ বছরের বাজে সম্পর্কটাকে ভালো করার ব্যাপারে দুতের ভূমিকা পালন করছিলেন। মার্কিন সরকার তাই প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে আশ্বাস চাচ্ছিলো যে, ভারত যেন কোন অবস্থাতেই এমন কোন সামরিক পদক্ষেপ না নেয় যা"পাকিস্তানকে ভেঙ্গে ফেলে" ("shatter the cohesion of West Pakistan") এবং "প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে ক্ষমতাচূত্য করে" ("overthrowing President Yahya (Khan)"।

    এরপর রচিত হলো নতুন ইতিহাস। বাংলাদেশ হলো স্বাধীন । সর্বোপরি উল্লেখ করতে চাই,সেই চিঠির কথা, যা

    ১৫ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ সনে ইন্দিরা গান্ধী নিক্সনকে লিখেছিলেন -

    "সব নিরপেক্ষ লোকেরা পক্ষপাতহীন ভাবে ২৫শে মার্চ থেকে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া নিষ্ঠুর ঘটনা পর্যবেক্ষন করে এই উপলব্ধিতেই পৌছেছে সাড়ে সাত কোটি একত্রিত বাঙ্গালীর এই বিদ্রোহ, আর এর কারণ হলো এই জনগোষ্ঠী এই উপসংহারে পৌছেছে যে তাদের জীবন, তাদের স্বাধীনতা, কাংখিত সুখের সন্ধান, অন্য কথায় বলতে গেলে কিছুই আর পাকিস্তানের কাঠামোতে সম্ভবপর নয়।"

    "All unprejudiced persons objectively surveying the grim events in Bangladesh since March 25 have recognised the revolt of 75 million people, a people who were forced to the conclusion that neither their life, nor their liberty, to say nothing of the possibility of the pursuit of happiness, was available to them")

    সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ইন্দিরা গান্ধী মরনপন লড়েছেন বাংলাদেশের পক্ষে।দৌড়েছেন বিশ্বের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত।বাংলাদেশের পক্ষে গড়ে তুলেছেন বিশ্ব জনমত।বাংলাদেশের সূমহান স্বাধীনতা অর্জনে মহান নেত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নাম এবং অবদান আমরা যেন ভুলে না যাই।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close