• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ধর্ষণ অার ধর্ষণখবর-পরবর্তী পুরুষতান্ত্রিক-সমাজ বার্তা

প্রকাশ:  ২১ এপ্রিল ২০১৮, ১৫:২৯ | আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০১৮, ১৫:৪৭
সুস্মিতা চক্রবর্তী

পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ভয়ঙ্কর রকমের চূড়ান্ত বলপ্রয়োগ অার লিঙ্গীয় নির্যাতনের নাম ধর্ষণ। এখন এর বিকারের মাত্রা অত্যাধিক অার প্রায় সর্বত্র। অন্তত খবর হিসেবে ধর্ষণ এখন এক অাতঙ্কের নাম। কত বীভৎসজনকভাবে যে ধর্ষণ সংঘটনের খবর অামাদের সামনে প্রতিনিয়ত হাজির হয়! এসব ভয়ঙ্কর খবর দেখে এর প্রতিকার নিয়ে আমরা যত না ভাবি তার চেয়েও অধিক ভাবি কীভাবে নারীকে অারও পাবলিক পরিসর থেকে অদৃশ্যমান করা যায়! অপ্রিয় হলেও সত্যি যে, এতে করে শেষ পর্যন্ত বিদ্যমান সমাজেরই সুবিধা হয়। নারীর নিরাপত্তাকে বাস্তব কারণে উপলক্ষ করে নারীকে অাবদ্ধ করা হয় কখনো পোশাকের পোটলায় কখনো গৃহাভ্যন্তরে অাগের চেয়ে বেশি বেশি। এ হেন ধর্ষণখবরপূর্ন পরিবেশ-পরিস্থিতেতিতে, অভিভাবকেরা বোশির ভাগ ক্ষেত্রে ন্যায্য ভয় থেকেই তার মেয়েকে কোণঠাসা করেন নানাভাবে তাদের স্বাধীনতার সীমানাগুলোকে সঙ্কুচিত করেই। অার এখানেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের জিত।

বর্তমান সময়ে সব বয়সী নারীরা এমনকি মেয়েশিশুও যেভাবে বিশেষ পোশাকে চোখমুখ ঢেকে চলাচল করে সে সব দেখে মানবিক কারণে দূঃখ লাগে! নারীশিশুধর্ষণ-নিপীড়নের সংবাদ এভাবেই সমাজে নারীর জন্য অারও পরাধীনতার পাটাতন শক্ত করে। নারীর পোশাকই এমনকি খোদ নারীই তার ধর্ষণ-নিপীড়নের কারণ-- এ হেন চালু অার প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক বার্তাই এতে করে অধিক শক্তিশালী হয়! অথচ ধর্ষণের মত নিপীড়ন ঘটে যে পুরুষের কারণে তাদের সমাজ-সুবিধা অনঢ় থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খোদ ধর্ষকের কোনো বিচারই হয় না। বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে ধর্ষকও পার পায় অার যে নারী নিপীড়িত হয় তার হেনস্থার কোনো শেষ থাকে না।

সম্পর্কিত খবর

    যে মেয়েশিশুটি সমাজ-দেশের জন্য অন্য পুরুষশিশুর মতোই ডানপিটে অার শক্ত-স্বাবলম্বী মানুষ হয়ে সমাজে বিকশিত হয়ে উঠতো-- নারীনিপীড়নের অাকছার ঘটনা তার জন্য সব সুন্দর পথ অনায়াসে রুদ্ধ করে দিতে উদ্যত হয়। ধর্মীয় বা সামাজিক-সাংস্কৃতিকভাবে প্রতিক্রিয়াশীল অধিকাংশ সমাজই এ সুযোগটা কাজে লাগায়। ফলে ধর্ষণ অার অহরহ ধর্ষণসংবাদ বহনকারী মাধ্যমগুলো শেষ পর্যন্ত নারীর জন্য একটা পরাধীনতার জগত নির্ধারণ করে দেয়-- কখনো প্রত্যক্ষভাবে কখনো পরোক্ষভাবে। এ নির্ধারণে ভূমিকা রাখে বিদ্যমান পুরুষতন্ত্র আর তার নানা এজেন্টসমূহ। অথচ পৃথিবীটা ন্যায্যতা অার মানবিকতায় অন্তত কিছুটা ভরপুর হলেও ধর্ষণের মতো ঘটনার চূড়ান্ত বিচার নিশ্চিত হতো, ধর্ষণের পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ দায় সামাজিকভাবে নারীকে নিতে হতো না! এমনকি ধর্ষণ প্রতিরোধে সামাজিকভাবে-রাষ্ট্রীয়ভাবে নারীকে অধিকতর শক্তিশালী বানানোর নানান ইতিবাচক পদক্ষেপে ছেয়ে যেত দেশ-কাল। কিন্তু হায়, বিদ্যমান সমাজ তো নারীকে তার সুবিধানুযায়ী ভূমিকায় রাখতে চায়। অামরা নিজেরাই কি নারীকে পুরোপুরি স্বাধীন অার শক্তিশালীরূপে সর্বত্র বিরাজিত দেখতে চাই? উত্তরটা সম্ভবত না-ই!

    রাজশাহী: ২০ এপ্রিল, ২০১৮

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close