• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

পঞ্চগড়-১ ও ২ আসনের চালচিত্র

আওয়ামী লীগে কোন্দল, নেতৃত্বহীন বিএনপি

প্রকাশ:  ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৪:৪৩ | আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:৪৭
পঞ্চগড় প্রতিনিধি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ধীরে ধীরে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে দেশের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ে। এ জেলায় রয়েছে পঞ্চগড়-১ আসন (পঞ্চগড় সদর, তেতুঁলিয়া ও আটোয়ারী) এবং পঞ্চগড়-২ আসন (বোদা, দেবীগঞ্জ)। দুটি আসনে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে দ্বন্দ্ব-কোন্দল থাকলেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা জনসংযোগ ও প্রচার প্রচারণা শুরু করেছেন বহু আগেই। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে প্রার্থীদের শেষমুহূর্তের ছোটাছুটি চলছে।

সম্পর্কিত খবর

    জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে এলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে কোন্দল ও একে অপরের সঙ্গে দূরত্ব কমেনি। সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে নেতৃবৃন্দের গ্রুপওয়ারী রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন কমিটি গঠন, নেতাকর্মীদের ভূমিকা, অবমূল্যায়ন ইত্যাদির কারণে এ দূরত্ব বাড়ছে বলে জানা গেছে। সে সঙ্গে কেউ কেউ ক্ষমতার দাপট দেখানোর জন্য হচ্ছে আলোচনা সমালোচনা। এ পরিস্থিতিতে আরো একটি গ্রুপ গড়ে তোলার তৎপরতায় সব পর্যায়ে চেইন অব কমান্ড নড়বড়ে হয়ে পড়ার জন্য স্থানীয় রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন ও দলের খুঁটি আরও মজবুত হওয়ার পরিবর্তে ক্রমান্বয়ে দুর্বল ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।

    এদিকে নেতৃত্বহীন হয়ে পড়েছে পঞ্চগড় জেলা বিএনপি। সর্বস্তরের বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ায় বিএনপি নেই অবস্থা বিরাজ করছে। বছরের পর বছর ধরে চলা বিবদমান দু’টি গ্রুপের কোন্দল নিরসনের পরিবর্তে জটিল করে তোলার জন্য এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে শহর থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা, বিভ্রান্তি বাড়ার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করলেই এ বিরাজমান অচলাবস্থার অবসান হতে পারে বলে অনেকে মনে করছে।

    আসুন পঞ্চগড় জেলায় দুইটি আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তৎপরতায় চোখ রাখি।

    পঞ্চগড়-১ (সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী)

    পঞ্চগড় সদর উপজেলা, তেঁতুলিয়া উপজেলা এবং আটোয়ারী উপজেলা নিয়ে গড়া পঞ্চগড়-১ আসনটি দীর্ঘদিন ছিল বিএনপির দখলে। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক স্পিকার ব্যরিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারকে হারিয়ে দেন আওয়াামী লীগ প্রার্থী মোঃ মজাহারুল হক প্রধান। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল জাসদকে এ অাসনে ছাড় দেওয়ায় আওয়ামী লীগের পঞ্চগড় জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মজাহারুল হক প্রধান। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবু সালেককে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাসদের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হক প্রধান।

    একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাসদ থেকে এবারও প্রার্থী হবেন নাজুমল হক প্রধান। জোটের প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। তবে জোট থেকে মনোনয়ন না পেলেও তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীর এ আসনে এবার নিজ দলের প্রার্থী চান। এক্ষেত্রে সাবেক সাংসদ মোঃ মজাহারুল হক প্রধান আশা করছেন দলীয় মনোনয়নের। ক্ষমতাসীন দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্যদের মধ্যে রয়েছেন জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক পঞ্চগড় সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট, প্ধারনমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের জনপ্রেক্ষিত বিশেষজ্ঞ নাঈমুজ্জামান মুক্তা ওআটোয়ারী উপজেলার আওয়ামী লীগ শিল্পপতি আলহাজ মো. মনির হোসেন।

    দেশের সবচেয়ে উত্তর প্রান্তের এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার মুহম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার। শারীরিক কারণে এই বর্ষিয়ান নেতা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অপারগতায় তার ছেলে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির প্রার্থী হতে পারেন।পঞ্চগড় পৌরসভার একাধিকবার নির্বাচিত মেয়র ও পৌর বিএনপি’র সভাপতি মোঃ তৌহিদুল ইসলাম মনোনয়নের জন্য তৎপর রয়েছেন। অপরদিকে ২০ দলীয় জোট থেকে এ আসনে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি মরহুম শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে জাগপার কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান জুঁই মনোনয়ন চাইবেন।

    জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু সালেক এবার ১৪ দলের প্রাথী হতে আগ্রহী। জাতীয় পার্টি জোটগতভাবে নির্বাচনে না করলে লাঙ্গল প্রতীকেই নির্বাচন করবেন। বিএনপি ও জামায়াত জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন না হলে জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবদুল খালেক স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন।

    পঞ্চগড়-২ (বোদা ও দেবীগঞ্জ)

    বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত পঞ্চগড়-২ আসনে দীর্ঘদিন ছিল বিএনপির আধিপত্য। ২০০৮ সালের নির্বাচনে টানা তিনবারের বিএনপি সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেনকে হারিয়ে দিয়ে এ আসন দখল করে নেন আওয়ামী লীগের মো: নুরুল ইসলাম সুজন। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী জাসদের এমরান আল আমিনকে হরিয়ে নির্বাচিত হন তিনি।

    আগামী নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার আশা করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন। এ আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে আগ্রহীদের তালিকায় আরো রয়েছেন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) ডা. মো. শাহজাহান মন্ডল, দেবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আব্দুল মালেক চিশতি। পাশাপাশি ১৪ দলীয় জোটের হয়ে প্রার্থিতা দাবি করবেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বোদা মহিলা কলেজের অধ্যাপক এমরান আল আমিন। জোটের মনোনয়ন না পেলে জাসদের হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন।

    পঞ্চগড়-২ আসনে সাবেক এমপি মরহুম মোজাহার হোসেন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি মো. শফিউল আলম প্রধানের মৃত্যুর পর গ্রহণযোগ্য প্রার্থীর সংকটে পড়েছে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট। বিএনপির টিকিটে এ আসনে এবার নির্বাচন করতে চানা সাবেক সাংসদ মোজাহার হোসেনের সহধর্মিণী বিলকিস নারগিস হোসেন। ধানের শীষে নির্বাচনে আগ্রহীদের মধ্যে আরো রয়েছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন আজাদ ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা নীতিশ কুমার বকসি ওরফে বাবু মুকুল বকসী। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বোদা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা সফিউল্লাহ সুফি। ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন চান তিনি। জোটের মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন জামায়াতের এই নেতা।

    এনই

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close