• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

একজন শীর্ষেন্দু হয়ে ওঠার গল্প

প্রকাশ:  ০২ নভেম্বর ২০১৭, ১৭:৪৪
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। বাংলা সাহিত্যের এক প্রবাদপ্রতিম লেখক। বাংলা ভাষাভাষী পাঠকের কাছে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে। গল্প-উপন্যাসে, আলাপে-আড্ডায়- মানুষ, সমাজ ও সভ্যাতার কথা বলেন তিনি। জনপ্রিয়তার জন্য লেখেননি কখনো, লেখাই তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। মানুষ যখন ধর্মের কথা বলে মানুষ খুন করে, সহিংসতায় লিপ্ত হয়, কষ্ট পান তিনি। ধর্মের দীক্ষা, ইতিবাচক প্রভাব ফেলে তার লেখাতে। আজ তার জন্মদিন। ১৯৩৫ সালের ২ নভেম্বর ময়মনসিংহে গ্রহণ করেন। ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর পূর্বপশ্চিমবিডি ডট নিউজের উদ্বোধনী আমন্ত্রণে বরেণ্য এই লেখক এসেছিলেন বাংলাদেশে। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে কথা বলেছেন বিস্তর, পাঠক শুনেছেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো। সেসময় পূর্বপশ্চিমবিডি ডট নিউজ তার একান্ত সাক্ষাৎকার নিয়েছিল। সাক্ষাৎকারে তিনি সাহিত্য, ধর্ম, মানুষ এবং বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলেছেন বিশদে।

পূর্বপশ্চিম বিডি ডট নিউজ: ২ নভেম্বর আপনার জন্মদিন। জন্ম তো বাংলাদেশেই, ময়মনসিংহে।

সম্পর্কিত খবর

    শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়: আমাদের বাড়িটা ছিল ময়মনসিংহ শহরে, সেখানেই আমার জন্ম। ময়মনসিংহ অনেক সুন্দর শহর। ব্রহ্মপুত্র নদীর দুই পারে ফুলে ফুলে শাদা কাশবন আমাকে অনেক আনন্দ দিত। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন-এর শৈশবও কেটেছে এই মনোরম শহরে। তার সঙ্গে আমার প্রত্যক্ষ পরিচয় না থাকলেও গুণী এই শিল্পীর শিল্পকর্মের সঙ্গে আমার পরিচয় অনেক আগে থেকেই। এই শহরে বেড়ে উঠার গল্প আমার অনেক লেখায় বিশেষ করে ‘যাও পাখি’ উপন্যাসে লিখেছি। ময়মনসিংহ শহরের সঙ্গে আমার আত্মার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এই শহরে আমার জন্ম ও বেড়ে উঠার কিছুটা সময় পার হলেও আমার পৈতৃক ভিটা কিন্তু ময়মনসিংহে নয়। আমার পৈতৃক ভিটা অর্থাৎ দেশের বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে। তবে দেশের বাড়ি অর্থাৎ ঢাকার বিক্রমপুরে যাইনি কখনো। বিক্রমপুর অনেক ঐতিহ্যবাহী জায়গা। বিখ্যাত সাধক অতীশ দীপঙ্করসহ অনেক মহান ব্যক্তি জন্মেছিলেন বিক্রমপুরে। আমার বাবা বিক্রমপুরে জন্মালেও তিনি পৈতৃকসূত্রে বসবাস করতে শুরু করেন ময়মনসিংহ শহরে। কেননা বিক্রমপুর থেকে আমার দাদু মোক্তারি করতে চলে এসেছিল ময়মনসিংহ শহরে। তখন ময়মনসিংহ শহরে অনেক ফৌজদারি মামলা হতো। ফৌজদারির জন্য তখন ময়মনসিংহ বিখ্যাত, মানে মারপিট, দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগেই থাকতো সেখানে। তো সেখানেই আমার জন্ম, আমার দাদার বাসায়। আমার মা-ও পূর্ববঙ্গের মেয়ে না, পশ্চিমবঙ্গের মেয়ে। কিন্তু ইনসিডেন্টলি আমার দাদার বাড়ি ময়মনসিংহেই। ময়মনসিংহেই আমার বাবা-মার বিয়ে হয়, সেখানে আমি জন্মাই, আমার দিদি জন্মায়। সেটাতো পুরো ড্রিম লাইফ।

    পূর্বপশ্চিম বিডি ডট নিউজ: এই যে ড্রিম লাইফের কথা বললেন, সেটা কেমন ছিল- বিশদে বলবেন কী? শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়: ব্রহ্মপুত্র নদীর ধারেই ছিল আমাদের বাড়ি। এতো সুন্দর লাগতো! সামনেই ব্রক্ষপুত্র, আমাদের বাড়ি থেকে দেখা যেত নদীর বুকে নৌকা চলার দৃশ্যপট। বাড়িতে চারটে ঘর ছিল, আমার মনে আছে। আমরা বলতাম পুবের ঘর, পশ্চিমের ঘর, আর বড় ঘর। আমার ঠাকুরদা জমিদারের ছেলেকে পড়াতেন এক সময়, মুক্তাগাছার জমিদারের ছেলে। ওই জমিটা দাদুকে দিয়েছিলেন বসবাস করার জন্য।

    পূর্বপশ্চিম বিডি ডট নিউজ: সেখানে কত বছর বয়স পর্যন্ত ছিলেন? শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়: বছর তিন-সাড়ে তিন পর্যন্ত টানা ছিলাম। তারপর ওইদিকে, মানে আমরা পশ্চিমবঙ্গে চলে গেলাম। তখন যুদ্ধ চলছে, সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার। সেই থেকে ওইখানে অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে এক নতুন জগতের মধ্যে আমাদের পথ চলা শুরু। যেহেতু খুব ছোটবেলায় মাতৃভূমি ছেড়ে গিয়েছিলাম, তাই মাতৃভূমি ত্যাগের স্মৃতি আমার বাবা-দাদার মতো আমাকে পীড়িত করেনি। বেড়ে উঠতে উঠতেই আমার মায়ের কাছে গল্প শুনে শুনে আমার শৈশব স্মৃতিকে নতুন করে ভাববার সুযোগ পেয়েছি। মায়ের কাছে ময়মনসিংহ শহর, চারপাশের পরিবেশ ও প্রতিবেশিদের অনেক গল্প শুনেছি। সেই সব গল্প স্বপ্নের মতো, অর্থাৎ ভাবনাকে আলোড়িত করা ড্রিম লাইফের অংশ। আমার লেখা অনেক উপন্যাসের উপজীব্য সেই দিনগুলি নানা স্মৃতি। বাংলাদেশে যেহেতু জন্ম, এখানে আমি যতবার আসি, নিজেকে কখনো অতিথি মনে হয় না। মনে হয় যেন নিজের দেশেই এসেছি।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close