• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

ভিনদেশী ক্যাঙ্গারুর ঘরে নতুন অতিথি

প্রকাশ:  ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭, ০১:৪৮ | আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭, ০২:২৬
মাহমুদুল হাসান, গাজীপুর

সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চাকে থলিতে নিয়ে মা ক্যাঙ্গারু রোদ পোহাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পর বাচ্চাটি বুকের থলে থেকে মুখ বের করে চার পাশ দেখছে। আবার মাঝে মাঝে মায়ের পাশে কিছুক্ষণ শুয়ে পুনরায় থলিতে ঢুকে যাচ্ছে। অপর একটি ক্যাঙ্গারু মা ক্যাঙ্গারুর সামনে পায়ে ভর দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে খেলা করছে। দর্শনার্থীরা দূর থেকে এমন দৃশ্য দেখে মুগ্ধ।

সম্প্রতি গাজীপুরের বঙ্গববন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে একটি মেয়ে শাবকের জন্ম হলেও গত মঙ্গলবার থেকে এটিকে প্রকাশ্য হতে দেখা যাচ্ছে। ক্যাঙ্গারু শাবকের দিকে কর্তৃপক্ষও বাড়তি নজর রাখছেন। ক্যাঙ্গারু শেডে নতুন অতিথির জন্য সবুজ ঘাসে মুড়ানো পাহারি পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। আরও মাস তিনেক পর মায়ের থলে থেকে শাবকটি বের হয়ে সবুজ ঘাসে বিচরণ করবে।

সম্পর্কিত খবর

    এ নিয়ে পার্কে তিনটি মেয়ে ক্যাঙ্গারু হলো। কোনো পুরুষ ক্যাঙ্গারু নেই। গত অক্টোবরে এই শাবকের বাবা একমাত্র পুরুষটি মারা গেছে।

    পার্কের ওয়াইল্ডলাইফ সুপারভাইজার সরোয়ার হোসেন খানের ভাষ্যনুযায়ী, ক্যাঙ্গারু শাবক ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগ পর্যন্ত মায়ের থলিতে থাকে। তখন শাবকের চোখ ফোটে না। শরীরে লোমও থাকে না। জন্মের সময় এদের আকার টিকটিকির মতো হয়ে থাকে যার দৈর্ঘ্য হয় সর্বোচ্চ ৪ সেন্টিমিটার। বাচ্চা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মায়ের থলেও বড় হতে থাকে। ৩/৪ মাস বয়স হলে কখনও মাথা কিংবা কখনও পা বের করে শাবকটি। কিন্তু এ সময় এটি থলে থেকে মাটিতে নামে না। জন্ম নেওয়া বাচ্চাটি মায়ের বুকে থাকা থলের উষ্ণতায় বড় হতে থাকে। বুকের থলির ভেতর নিপল থাকায় বাচ্চা মায়ের দুধ খেতে পারে। ছয় মাস বয়স হওয়ার পর বাচ্চাটি মাটিতে নামে। প্রায় আট মাস বয়সে ক্যাঙ্গারু শাবক অনেকটাই স্বাধীনভাবে খাবার খেতে ও চলাচল করতে শেখে এবং তখন আর থলিতে ঢোকে না।

    এক বছর পর্যন্ত বাচ্চা মাঝে-মধ্যে মাতৃদুগ্ধ পান করে। পুরুষ ক্যাঙ্গারু সাধরণত ২০/২৪ মাসে এবং মেয়ে ক্যাঙ্গারু সাধারণত ২০/২২ মাসে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়। তবে পরিবেশ-পরিস্থতির কারণে এই সময়ের কিছুটা তারতম্য হতে পারে। ক্যাঙ্গারু পালং শাক, পাকা কলা, কচি ঘাস, লতাপাতা ও অন্যান্য শস্য খাবার খেতে পছন্দ করে।

    সাফারী পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, পার্কে কোনো প্রাণী শাবক প্রসব করলে তাৎক্ষণিকভাবে সাধারণদের জানানো হয় না। জন্ম নেওয়া শাবকগুলোর একটি নির্দিষ্ট বয়স হওয়ার পর তা প্রকাশ্য করা হয়। বিভিন্ন রোগ-বালাই, সংক্রামক ব্যাধি, আবহাওয়া ও পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পরই বিষয়টি সর্বসাধারণকে জানানো হয়। কিছুদিন পর বাচ্চাটিকে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোতালেব হোসেন জানান, ক্যাঙ্গারু বিদেশি পরিবেশের প্রাণী। আমরা এখানে প্রাণীগুলোকে বিশেষ পরিবেশে বড় করেছি। সে তার প্রাকৃতিক পরিবেশের মতোই এই পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিয়েছে বলেই গত বছর এবং এ বছর বাচ্চা প্রসব করেছে।

    এর আগে ২০১৩ সালের আগস্টে আফ্রিকা থেকে রেড ক্যাঙ্গারু জাতের একটি পুরুষ ও দুইটি স্ত্রী ক্যাঙ্গারু কিনে এই সাফারি পার্কে আনা হয়। ২০১৫ সালে প্রথম শাবক জন্ম নেয় এবং পরে সেটি মারা যায়। ২০১৬ সালে জন্মের কয়েক মাস পর দ্বিতীয় শাবকটিও মারা যায়। এরপর ২০১৭ সালের অক্টোবরে পার্কের একমাত্র পুরুষ ক্যাঙ্গারুটি মারা গেছে।

    ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘের বাজার থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নে সাফারি পার্কটি অবস্থিত। ভাওয়াল গড়ের ছোট ছোট টিলা ও নিচু ভূমি সমৃদ্ধ বিশাল শালবনে তৈরি করা হয়েছে এই সাফারি পার্ক। ৩ হাজার ৬৯০ একর বিশাল আয়তনের এই পার্ক উপর থেকে দেখার জন্য রয়েছে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র।

    ২০১০ সালে পার্কের কাজ শুরু হয়। আর ২০১৩ সালে পূর্ণাঙ্গ সাফারি পার্ক হিসেবে চালু করা হয়। সেখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশী প্রাণী। প্রতিদিন দেশের নানা প্রান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে দেশের বৃহত্তম এই বিনোদন কেন্দ্রে।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close