• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

ভাষাসৈনিক গোলাম মস্তফা রতন পায়নি কোন সরকারি স্বীকৃতি

প্রকাশ:  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৪:৫০
মাদারীপুর প্রতিনিধি

১৯৪২ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কারনে কারাভোগ, ১৯৪৮ সাল থেকেই মায়ের ভাষা বাংলাকে গ্রাস করার অপচেষ্টা প্রতিহত করার প্রতিবাদে অগ্রনী ভুমিকা পালন করে ভাষা সৈনিক গোলাম মস্তফা রতন।অবশেষে ১৯৫২সালে ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০০ ছাত্রদের নিয়ে ঢাকার রাজপথে মিছিল করে আহত হলেও আজও দেয়া হয়নি তাকে কোন স্বীকৃতি। বহুবার ২১শে পদক পাওয়ার আবেদন করলেও সরকারীভাবে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও যেন, রতন কষ্টের ফসল দেখে যেতে পারে এমনটাই দাবি করে মাদারীপুরবাসী

স্বভাবতই রতন ছিলেন একজন প্রতিবাদী কন্ঠস্বর। ভাষা আন্দোলনে ঢাকায় অংশ নেওয়ার জন্য কয়েকটি জেলা ছাত্রদের নিয়ে একটি তালিকা করা হয়। ১৯৫২ সালে তৎকালীন বরিশাল বিএম কলেজের ছাত্র গোলাম মোস্তফা রতন আহবায়ক নির্বাচিত হন।এদিকে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছিল বাংলার আপামর জনতা। তাদের মধ্যে বিশেষভাবে ভুমিকা রেখেছিল বাংলর ছাত্র সমাজ।

সম্পর্কিত খবর

    তারই সাথে একাত্ততা ঘোষণা করে আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও বরিশালে।১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রয়ারি রতনের নেতৃত্বে ২০০ ছাত্র নিয়ে আন্দোলনে অংশ নিতে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঢুকতেই কার্জন হলের সামনে পুুলিশের মুহুর্মুহু গুলি শুরু হয়।এ সময় মিছিলে অংশ নেওয়া ছাত্ররা মাটিতে শুয়ে জীবন রক্ষা করেন।কিন্ত সালাম বরকত, রফিকসহ অনেকেই শহীদ হন।এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে বেঁচে যান রতন। এরপর পারিবারিক জীবন যুদ্ধ শুরু করেন।

    মুক্তিযুদ্ধে শিবচর অঞ্চলের অন্যতম সংগঠক ছিলেন ভাষা সংগ্রামী রতন। জাতীয় স্বীকৃতি না পেলেও ২০১২ সালে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান(এইম ওয়ে) তাঁকে সম্মাননা পদকে ভূষিত করে। বর্তমানে তিনি মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের চররামরায়ের কান্দি গ্রামের নিজ বাড়িতে ১২বছর ধরে অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুর প্রহর গুণছেন।

    ভাষা সৈনিক গোলাম মস্তফা রতন বলেন ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কারনে কারাভোগ করেন রতন সে কথা এখনো গর্বের সাথে জানান আমি সে সময় আন্দোলনের বিভিন্ন কাগজপত্র দিতে গিয়ে আটক হয় চট্রগ্রামে। সেখানে ১৫-১৮দিন আটক ছিলাম।একথা এখনো ভোলেনি ১৯৫২সালের সেই ভাষা আন্দোলনের কথা ধীরে ধীরে বলেন সে সময়ের ভাষা আন্দোলনের কথা তিনি বলেন ঐসময় ২শতাধিক ছাত্রদের নিয়ে ঢাকা গিয়েছিলাম সেখানে ভাষা আন্দোলনের অনেকেই শহীদ হন।আমর পায়েও গুলি লাগে তবে আমরা আমাদের দেশের বাড়ীতে চলে আসি।এরপর জীবনের অনেক সময় চলে গেলেও আজও পাইনি সরকারি কোন স্বীকৃতি।

    ভাষা সৈনিক গোলাম মস্তফা রতন এখনো তার নিজ রচিত একটি ইংরেজী কবিতা বলতে পারেন। তবে তিনি বলেন আমি যে ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছি সে বাংলা ভাষায় আমরা কথা বলতে পেরেছি, এটা আমার কাছে একটা বড় পাওয়া।

    এলাকাবাসী ও স্বজন, মিজান, আব্দুল কাদের হাওলাদার, ফরিদ, মেহেদী, মাসুদ, আরিফ বলেন, আমাদের চাওয়া একটাই সেটা হল মৃত্যু আগেই যেন সে একটা সরকারি স্বীকৃতি পায়, তাকে যেন সরকারি স্বীকৃতি দেয়া হয়। সে অনেকবার ২১শে পদকের জন্য আবেদন করেছে আজ পর্যন্ত কোন আবেদনই গ্রহন করে তাকে স্বীকৃতি দেয়া হয় নাই। গোলাম মস্তফা রতন বহু অর্জনে স্বাক্ষর রাখলেও তার জীবনের চাওয়া একটি সরকারী স্বীকৃতি বা সন্মাননা।সরকার যেন একটি সন্মাননা দিয়ে তাকে ইতিহাসে স্থান করে দেন।

    মাদারীপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) আজাহরুল ইসলাম বলেন, আমি জানতে পেরেছি আমাদের মাদারীপুরে একজন ভাষা সৈনিক এখনো বেঁচে আছে। তাকে আজ কোন সরকারী স্বীকৃতি দেয়া হয় নাই। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি এবং সে যদি ২১শে পদকের জন্য আবেদন করে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানাবো এবং আমি চাইবো সে যেন আগামীতে একটি সরকারি স্বীকৃতি পায়।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close