• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

গুমের ঘটনায় উদ্বেগ বিশিষ্টজনদের

সৎ, সাহসী সাংবাদিকতায় প্রেরণা হয়ে থাকবেন এবিএম মূসা

প্রকাশ:  ০১ মার্চ ২০১৮, ০২:১২
অনলাইন ডেস্ক

বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে দেশে সাংবাদিকতাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন এবিএম মূসা। সহজভাবে অকপটে সত্যকে উচ্চারণ করেছেন সাহসের সঙ্গে। বর্তমান সময়ের সাংবাদিকদের অবশ্যই এবিএম মূসার কর্মময় জীবন পাঠ করতে হবে, তা না হলে আদর্শ ও সাহসী সাংবাদিক হওয়া সম্ভব নয়। সত্য নিখোঁজ হয়ে গেছে।

এটি সমাজ থেকে হারিয়ে গেছে। ভয়ের সংস্কৃতিতে ঢুকে গেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ প্রয়োজন। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এবিএম মূসা-সেতারা মূসা ফাউন্ডেশন আয়োজিত এবিএম মূসার ৮৭তম জন্মদিন উপলক্ষে আজীবন সম্মাননা ও স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সুপার নিউমারারী অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত আলী খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয় প্রবীণ সাংবাদিক কামাল লোহানীকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তাকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন এবং সেতারা মূসা ক্রেস্ট প্রদান করেন।

সম্পর্কিত খবর

    এসময় প্রধান অতিথির হাতে কিছু বই উপহার হিসেবে তুলে দেন এবিএম মূসার কন্যা মরিয়ম সুলতানা রুমা। অনুষ্ঠানে ‘‘নিখোঁজ সংস্কৃতি ও সংবাদমাধ্যমের সংবেদনশীলতা’’ শীর্ষক শিরোনামে স্মারক বক্তৃতা উপস্থাপন করেন দৈনিক সমকাল-এর সাংবাদিক আবু সাঈদ খান।

    আজীবন সম্মাননা পাওয়া প্রবীণ সাংবাদিক কামাল লোহানী সেতারা মূসার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, এবিএম মূসা সাংবাদিকতায় সততা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে গেছেন। ভাষা সংগ্রামী ছিলেন এবিএম মূসা। গাড়ির নম্বর প্লেটে বাংলা লেখার পরিবর্তন তার কারণেই হয়েছে বলে এই প্রবীণ সাংবাদিক উল্লেখ করেন। সাংবাদিক ইউনিয়নের বিভক্তি তাকে সবসময়েই মর্মাহত করেছে। দ্বি-খণ্ডিত ইউনিয়নকে কয়েকবার চেষ্টা করেও ঐক্যবদ্ধ করতে পারেননি।

    অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান প্রধান অতিথির বক্তব্যে গুমের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এটি সভ্যতার পরিপন্থি। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের করণীয় আছে। সাংবাদিকরা আরো কিছু করলে গণতন্ত্র উপকৃত হবে। এবিএম মূসা ইংরেজি ও বাংলা উভয়ই ব্যবহার করেছেন। তিনি ছিলেন অনুকরণীয় সাংবাদিক। ড. আনিসুজ্জামান আরো বলেন, আজকের তরুণরা তার থেকে কিছু শিখলে আমরা লাভবান হবো। সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার অনুষ্ঠানে নির্বাহী সভাপতির বক্তব্যে বলেন, এবিএম মূসা একজনই। দ্বিতীয় মূসা ভাই আর হবে না। তিনি একটি পত্রিকাকে চমৎকার করে তুলতে পারতেন। আমরা তার কাছ থেকে শিখেছি।

    প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, সত্য নিখোঁজ হয়ে গেছে। এটি সমাজ থেকে হারিয়ে ফেলেছি। ভয়ের সংস্কৃতিতে ঢুকে গেছি। এর থেকে উত্তরণ প্রয়োজন। সাহস করে সত্য বলতে পারছি না। সংসদ সদস্য শিরিন আখতার বলেন, গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তির পরিবারের অপেক্ষা মৃত্যুর চেয়েও কষ্ট বেশি। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দায়িত্ব-কর্তব্য অনেক বেশি। এগুলো সবই অপরাধ। বাসে আগুন দিয়ে মারাও অপরাধ। এসবের বিচার করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধে আছি।

    নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, গুম হলে পরিবারের যে কষ্ট হয়, পরিবারের সদস্য ছাড়া কেউ বুঝবে না। তিনি বলেন, দেশে মিথ্যার সংস্কৃতি চলছে। কেউ গুম হলেই সংশ্লিষ্টরা বলে ফেলেন জানা নেই। ঘটনার আড়াল করার চেষ্টা করা হয়।

    স্মারক বক্তৃতায় আবু সাঈদ খান বলেন, নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। অতীতেও হতো। তখন নিখোঁজ মানে সাধারণত ঘর পালানো বা নিরুদ্দেশ হওয়া বোঝানো হতো। নিখোঁজ আর নিরুদ্দেশ ছিল প্রায় সমার্থক। সে সময়ের নিখোঁজরা ঠাঁই পেয়েছে গল্প, উপন্যাস ও চলচ্চিত্রে। গুম বৈশ্বিক ঘটনা। এটি ঘটেছে নানা দেশে। গুম এখন বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয়। বাংলাদেশে গুম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সব সরকারের শাসনকালে গুম ও আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। কোন আমলে কত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে তা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক আছে। কিন্তু রহস্য উদঘাটনের তেমন উদ্যোগ কখনোই ছিল না, এখনো নেই। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও বহুলাংশে নির্বিকার।

    নিউ ইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ‘ডব উড়হদঃ ঐধাব ঐরস, ঝবপৎবঃ উবঃবহঃরড়হং ধহফ ঊহভড়ৎপবফ ফরংধঢ়ঢ়বধৎধহপব রহ ইধহমষধফবংয- প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু ২০১৬ সালেই কমপক্ষে ৯০ জন ব্যক্তি জোরপূর্বক নিখোঁজের শিকার হয়েছেন। যদিও গোপনে আটকে রাখার কিছু সপ্তাহ পর অথবা মাসের মধ্যে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। কিন্তু হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২১টি ঘটনা লিপিবদ্ধ করে। সেখানে আটককৃতদের পরে হত্যা করা হয় এবং অন্য ৯ জনের অবস্থান এখনো অজানা। আটককৃত ৯০ জনের মধ্যে বিরোধী দলের বিশিষ্ট নেতাদের তিনজন পুত্র রয়েছেন, যাদের ২০১৬ সালে আগস্ট মাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। একজনকে গোপনে ৬ মাস আটক রাখার পর ছেড়ে দেয়া হয় এবং অন্য দু’জন এখনো নিখোঁজ। ২০১৭ সালের প্রথম পাঁচ মাসে ৪৮টি নিখোঁজ তালিকাভুক্ত হয়েছে।

    বিভিন্ন সংস্থার হেফাজতে থাকাকালীন তাদের ওপর নির্যাতন ও বাজে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।’ ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়, ‘সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করার প্রয়োজন মনে করছে না, তার পরিবর্তে নীরব থাকছে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে একই ভূমিকা প্রত্যাশা করছে। এই নীরবতা ভঙ্গ করা প্রয়োজন।’ ‘হংকংভিত্তিক এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (এএইচআরসি) ও দেশীয় মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের (২০১৭) সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮ বছর ৯ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৩৯৫ জন নিখোঁজ হয়েছেন।

    পরবর্তী সময় তাদের মধ্য থেকে ৫২ জনের লাশ পাওয়া গেছে। ফিরে এসেছেন ১৯৫ জন। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ১৪৮ জন।’ ‘এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৩৯৫ জন গুমের ঘটনার মধ্যে ১৪৮টিতে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে র‌্যাবের বিরুদ্ধে। পুলিশের ৪৬ জনকে, র‌্যাব ও ডিবি যৌথভাবে ১১ জনকে, ডিবি ১০৬ জনকে, শিল্প পুলিশ ও আনসার ১ জন করে এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে ৮২ জনকে তুলে নেয়ার অভিযোগ ওঠে।

    ‘মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য মতে, ২০০৭ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৫৪০ জনকে তুলে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৭৮ জনের লাশ পাওয়া গেছে। ৩৪৭ জন নিখোঁজ।’ পরিবারগুলোর দাবি-ভিকটিমকে র‌্যাব, ডিবি বা পুলিশ পরিচয়ে বাড়ি, কর্মস্থল বা রাস্তা থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। তবে কোনো কোনো অপহরণের ঘটনা অজ্ঞাত রয়েছে। স্বজনরা থানায় জিডিও করেছে। সংশ্লিষ্ট আইনপ্রয়োগ সংস্থা যথারীতি অস্বীকার করে। ভিকটিমের মধ্যে অনেকে এখন জেলে আছেন, কেউ কেউ ফিরে এসেছেন, কেউ বা ফিরেছেন লাশ হয়ে। আর যারা জেলে নেই, জীবত বা মৃত অবস্থায় ফেরেননি। কেউ জানে না- তারা এখন কোথায়, জীবিত না মৃত। র‌্যাবসহ সব সংস্থাই এটি অস্বীকার করে আসছে। সর্বশেষ খবর, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে- গুম এখনো চলছে।

    ‘অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনা ঘটছে নিয়মিতভাবে। এর প্রধান শিকার হচ্ছেন বিরোধীদলীয় সমর্থকরা। গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের কারও কারও লাশ মিলেছে। চলতি ফেব্রুয়ারিতে গুমবিষয়ক জাতিসংঘের একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কাছে একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গুমের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত বছর ৮০ জনের বেশি মানুষ গুমের শিকার হয়েছে।

    পর্যালোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, এসব অভিযান যে বিরোধী পক্ষ বা ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনের লক্ষ্যেই হয়েছে তা বলা যাবে না। দেখা গেছে- শুরুতে ক্লিনহার্ট অপারেশন, বন্দুকযুদ্ধ বা গুমের শিকার সন্ত্রাসীরাই। বলা যায়, রাজনৈতিক পরিচয়ধারী সন্ত্রাসীদের ক্ষেত্রে সরকার বা বিরোধী দল বিবেচনায় আনা হয়নি। ফলে এসব কার্যক্রম জনপ্রিয়তাও লাভ করেছে, চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের মৃত্যুতে সাধারণ মানুষ উল্লাসও করেছে। এখন প্রশ্ন, জনতা উল্লসিত হলেই কি তা সমর্থনযোগ্য? সংবাদমাধ্যমের সংবেদনশীলতা প্রসঙ্গে আবু সাঈদ খান বলেন, বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা অনন্য।

    পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যম সোচ্চার ছিল, মুক্তিযুদ্ধে সাংবাদিকদের ভূমিকা ছিল, ভূমিকা ছিল মুক্তাঞ্চল থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রেরও। স্বাধীনতা-উত্তর গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামেও সংবাদমাধ্যম সহযাত্রী। তথ্যপ্রযুক্তি আইন ৫৭ ধারায় অনেককে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এটি বাতিল হলেও নতুন করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারার খাঁড়া উদ্যত। উপসংহারে তিনি বলেন, মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে। ঝরে যাচ্ছে বহু স্বজনের স্বপ্ন। হারিয়ে যাওয়া মানুষের শিশুসন্তানরা কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাদের মা-বাবা।

    এমন কান্না থামানোর দায়িত্ব কার? তাদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব কার? সরকার-প্রশাসন কি এ দায়িত্ব নেবে না? রাষ্ট্র কি জননিরাপত্তা দেবে না? আমরা শুনতে চাই, আমরা বোঝতে চাই না, আর কোনো দেশে কত মানুষ গুম হয়েছে; অতীতে গুম ছিল কী ছিল না! কেউ কেউ অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করেন। বলেন, অন্য দেশের তুলনায় নিখোঁজের সংখ্যা বেশি নয়। এ মন্তব্য অবান্তর। আমরা আন্তর্জাতিক কনভেনশনের আলোকে রাষ্ট্রের কাছে দাবি জানাই- একজনও যেন গুমের শিকার না হয়। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে ঐকমত্য থাকতে হবে যে, আইনবহির্ভূতভাবে কেউ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করবে না। প্রশ্ন আসতে পারে- রাজনীতিতে যখন আদর্শবাদ গৌণ, ছলে বলে কৌশলে ক্ষমতায় যাওয়া বা থাকাই মুখ্য, নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে যখন ঝগড়া চরমে; তখন এ আশা কতটুকু বাস্তব?

    অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন প্রবীণ সাংবাদিক আবদুর রহিম, সাংবাদিক দিল মনোয়ারা মনু। উপস্থিত ছিলেন নিউজ টুডের সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, এবিএম মূসার জামাতা ব্যারিস্টার এম আফতাব উদ্দিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। এবিএম মূসার জীবনী পাঠ করেন কবি ও সাংবাদিক হাসান হাফিজ।

    অনুষ্ঠানের শুরুতে রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করেন জান্নাতুল ফেরদৌসী লাকী। অনুষ্ঠানে এবিএম মূসার কন্যা পারভীন সুলতানা ঝুমা ঘোষণা করেন এখন থেকে প্রতিবছর ক্রীড়া সাংবাদিকতায় একজনকে পুরস্কার প্রদান করা হবে এবং ভবিষ্যতে নারী কল্যাণ ট্রাস্ট গঠনের চিন্তাও করা হচ্ছে।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close