• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে ১লাখ ৩২ হাজার শ্রমিক রপ্তানি

মালয়েশিয়া হয়ে উঠছে বাংলাদেশি শ্রমিকদের আগ্রহের জায়গা

প্রকাশ:  ০৩ মার্চ ২০১৮, ২১:২৪
আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া

গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়া হয়ে উঠছে বাংলাদেশি শ্রমিকদের আগ্রহের জায়গা। চলতি শতকের শুরুর দিকে দেশটিতে বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠানো হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বাজার চালু করতে সরকার নানা উদ্যোগ নেয়। সরকারিভাবে সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টাকায় শ্রমিক পাঠানোর ব্যবস্থা জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে বিপুল টাকা খরচের চিত্রটাই পাল্টে দেয়।

তবে খুব বেশি শ্রমিক সরকারি উদ্যোগে পাঠানো যায়নি। ২০১৩ সালে জিটুটি চুক্তি সেভাবে সফল না হওয়ার পর জিটুজি প্লাস চুক্তি এই চিত্র পাল্টে দিয়েছে।

সম্পর্কিত খবর

    ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শ্রমিক পাঠাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে জিটুজি প্লাস চুক্তি হওয়ার পর থেকে এক লাখেরও বেশি শ্রমিক গেছেন এশিয়ার আলোচিত এ দেশটিতে।

    মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর মার্চে জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে জনশক্তি রপ্তানি শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৪৩ হাজার শ্রমিকের চাহিদাপত্র মিলেছে। বাংলাদেশ হাইকমিশন ছাড়পত্র দিয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার। কাজে যোগ দিয়েছেন ৮৩ হাজার শ্রমিক।

    কুয়ালালামপুর দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর সায়েদুল ইসলাম গত শনিবার বলেন, ‘মাসে কমপক্ষে ২০টি কোম্পানি পরিদর্শন করতে হচ্ছে। তবে ২০ জন শ্রমিকের জন্য চাহিদাপত্রে পরিদর্শন লাগে না। এর বাইরে হলেই আমাদেরকে যেতে হয়।

    এরই ধারাবাহিকতায় মালয়েশিয়ার প্রত্যেকটি প্রদেশের কর্মীনিয়োগ কারি ও ব্যবসায়িদের সঙ্গে মতবিনিময় করছে দূতাবাস। গত ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি পাহাং প্রদেশের ক্যামেরুন হাইল্যান্ড এর ব্যবসায়ি ও নিয়োগ কর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে দূতাবাস। রাষ্ট্রদূত মহ: শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রায় ৮০ জন নিয়োগ কর্তা ও ব্যবসায়িদের মতবিনিময় করেন এবং সেখানকার ৬টি কোম্পানী ও ৩টি সবজি বাগান পরিদর্শন করেন রাষ্ট্রদূত। এছাড়া গতকাল ৩ মার্চ থেকে ৪ মার্চ জহুর বারু ব্যবসায়ী ও নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে চলবে মতবিনিময়। জহুর বারু অবস্থান করছেন রাষ্ট্রদূত মহ: শহীদুল ইসলাম, শ্রম কাউন্সিলর সায়েদুল ইসলাম ও দূতাবাসের প্রথম সচিব শ্রম মো: হেদায়েতুল ইসলাম।

    ঢাকা ও কুয়ালালামপুরের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের দ্বিতীয় বৈঠকে পিটিএ নিয়েই আলোচনা করেছে বাংলাদেশ। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের নেতৃত্বে মালয়েশিয়াতে ঢাকা ও কুয়ালালামপুরের মধ্যে দ্বিতীয় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্টিষ্ঠিত হয়। মালয়েশিয়ার পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জেনারেল রামলান ইব্রাহিম। বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বাংলাদেশের শ্রমিকের কর্মসংস্থান, রোহিঙ্গা এবং সংস্কৃতিক সহযোগিতাসহ দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলোতে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে এগিয়ে নিতে পিটিএ নিয়ে আলোচনা করতে দুই দেশ রাজি হয়েছে।

    এছাড়া, শ্রমিক রফতানি বিষয়ক জিটুজি প্লাস চুক্তি করায় শ্রমিকদের খরচ এবং দালালদের দৌড়াত্ম কমে গেছে বলে বৈঠকে দুই দেশই একমত হয়েছে। ওই চুক্তির পর ১ লাখ ২২ হাজার শ্রমিকদের অবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়াতে ৯৮ হাজার ৮০০ শ্রমিক রফতানি হয়েছে বলে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে বৈঠকে জানানো হয়।

    আবার জিটুজি প্লাস চুক্তিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন বলা হয়েছিল ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে দ্বিগুণ টাকা। সেই সঙ্গে মিলছে অন্যান্য নানা সুযোগ সুবিধা যা এর আগে শ্রমিকরা কখনও পায়নি।

    শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় এখন মাসে বেতন কমপক্ষে দেড় হাজার রিঙ্গিত (বাংলাদেশি টাকায় ৩১ হাজার পাঁচশ টাকা)। আবার বার্ষিক লেভির টাকা (সরকারি কর) অগ্রিম দিতে হচ্ছে মালিকপক্ষকে। এটা আগে বহন করতে হতো শ্রমিকদের। বেতন থেকে মাস মাস কেটে নেয়া হতো এই টাকা। ছিল না কোনো বিমা, স্বাস্থ্যসেবা নীতিমালা বা মানসম্মত আবাসনের নিশ্চয়তা। এখন নিয়োগকর্তারাই বহন করছে সব কিছু। কোম্পানির সব তথ্যই সচিত্র মিলছে অনলাইনে। ফলে শ্রমিকদের প্রকৃত আয় বেড়ে গেছে আরও বেশি। আর এতে তারা আগের চেয়ে বেশি সঞ্চয় বা দেশে টাকা পাঠাতে পারছেন।

    বাংলাদেশের শ্রমিকরা কঠোর পরিশ্রম করতে পারে বলে নিয়োগকর্তাদের আগ্রহ বাড়ছে দেশটিতে। ক্যামেরুন হাইল্যান্ডের ষ্টবেরি বাগানের মালিক মি. লি বাংলাদেশি শ্রমিক সম্পর্কে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘বাংলাদেশিরা কঠোর পরিশ্রমী, প্রতিদিন ওভারটাইম করলেও সমস্যা হয় না। ফলে তুলনামূলক কম শ্রমিকই অনেক বেশি কাজ করতে পারে। এতে তারাও যেমন লাভবান হচ্ছে, তেমনি আমরা মালিকরাও লাভবান হচ্ছি।’

    মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারে কর্মরত শ্রমিকের সর্বোচ্চ সংখ্যা বরাবরের মত ইন্দোনেশিয়ার দখলে। ইন্দোনেশিয়ার জনশক্তি নির্মাণ খাতে দক্ষ হওয়ায় তাদের বিকল্প নেই। তবে গত তিন-চার বছরে বাংলাদেশি শ্রমিকেরাও বিপুল পরিমাণে নির্মাণ খাতে যোগ দিয়েছে।

    এখন বাংলাদেশি শ্রমিকরা সমান তালে এগিয়ে চলেছে নির্মাণ, কারখানা, সেবা, কৃষিও বাগান খাতে। নেপালের প্রায় নয় লাখ শ্রমিক সেবা, নিরাপত্তা ও কারখানা খাতে কাজ করছে। বিশেষ করে নিরাপত্তা খাতে নেপালের বিকল্প অচিন্তনীয়। তবে ইদানীং এসব খাতেও বাংলাদেশি শ্রমিকরা নিয়োগ পাচ্ছে উল্লেখযোগ্য হারে।

    মালিকরা ইদানীং নেপালিদের তিন বছরের চুক্তি নবায়ন না করে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ দিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close