• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

বিদেশের মাটিতে ডাক্তারের মহানুভবতা

প্রকাশ:  ১৬ মার্চ ২০১৮, ২০:৪০ | আপডেট : ১৬ মার্চ ২০১৮, ২০:৫৮
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

একজন ডাক্তারের রোগীর প্রতি কতটা ভালোবাসা ও রোগীকে সুস্থ করে তোলার মানসিকতা থাকতে পারে তা নিজ চোখে দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। সুযোগ হয়েছে, জীবনের হাল ছেড়ে দিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নেয়া রোগীদের একজন ডাক্তার প্রেরণা, সাহস ও ভালোবেসে নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখাতে পারে সেটিও। একই ডাক্তারের কাছে তিনি শিখেছেন যে রোগী বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করে, রোগকে পাত্তা দেয় না সেই রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। শিখেছেন হাসি মুখে রোগের সঙ্গে লড়াই করার মতো অনেক কৌশল।

এভাবেই বলছিলেন স্ত্রীকে নিয়ে কলকাতার সরোজ গুপ্ত ক্যানসার সেন্টার অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন শফিকুল ইসলাম। শফিকুলের স্ত্রী রিমা বেগম ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আর এতক্ষণ যে ডাক্তারের বর্ণনা দেয়া হলো তিনি ওই হাসপাতালেরই একজন চিকিৎসক। নাম জয়দেব চক্রবর্তী। তিনি ওই হাসপাতালে নিয়মিত রোগী দেখেন। পাশেই তার নিজের একটি হাসপাতাল রয়েছে। নাম আম্রি।

সম্পর্কিত খবর

    শফিকুল বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছিল আমাদের বিবাহবার্ষিকী। আমার স্ত্রী তখন সরোজ গুপ্ত ক্যানসার সেন্টার অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে ভর্তি। বিবাহবার্ষিকীর বিষয়টি আমার মনে ছিল, কিন্তু স্ত্রীর শারীরিক ও সার্বিক অবস্থা দেখে তা প্রকাশ করিনি। তবে কীভাবে যেন ডাক্তার জয়দেব চক্রবর্তী আমাদের বিবাহবার্ষিকীর বিষয়টি জানতে পারেন। সন্ধ্যার আগে আগে তিনি তার রুমে একজনের মাধ্যমে আমাদের ডেকে পাঠান। তিনি ডেকেছেন শুনেই বুক ধরফর করা শুরু করে আমার। ভাবলাম হয়তো কোনো খারাপ খবর দিবেন তিনি। তারপরও সাহস করে আমরা দুজনেই গেলাম ডাক্তারের রুমে। দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই যা দেখলাম, তা ছিল রীতিমতো অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয় এবং অভাবনীয় ব্যাপার।

    দেখলাম ডাক্তার জয়দেব চক্রবর্তী তার চেয়ার থেকে উঠে এসে আমার স্ত্রীকে তার টেবিলের সামনে বসালেন। টেবিলের উপর একটি বড় কেক রাখা। কেকের উপরে আমাদের বিবাহবার্ষিকীর শুভেচ্ছা লেখা। আর ঘরটি বিভিন্ন রঙের বেলুনে সাজানো। এমন দৃশ্য দেখে অজান্তেই আমার দুচোখ দিয়ে পানি বের হতে লাগলো। একই অবস্থা আমার স্ত্রীরও হয়েছিল। কথা বলতে পারছিলাম না। শুধুই চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। এত খুশি, এত খুশি হয়েছিলাম যা বোঝাবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলাম সেদিন। এই অবস্থা দেখে ডাক্তারের একজন সহযোগী আমাকে পাশের একটি চেয়ারে বসিয়ে দেয়।

    এরপর আমার স্ত্রীকে দিয়ে কেক কাটালেন তিনি। নিজে ছবি তুললেন। সেলফিও তুললেন আমাদের সঙ্গে। সেদিন অনেক দিন পর আমার স্ত্রীর মুখে সুস্থ মানুষের মতো হাসি দেখে কী যে ভালো লেগেছিল, তা বোঝাতে পারবো না।

    তিনি বলেন, প্রথমবার যখন রিমাকে নিয়ে ওই হাসপাতালে যাই তখন প্রায় দেড় মাস ছিলাম। এক দিন ডাক্তার জয়দেব বললেন, বাইরে থেকে দুটি পরীক্ষা করতে হবে, পরীক্ষা দুটো আমাদের এখানে হয় না। এতে প্রায় ৪৫ হাজার রুপি খরচ হবে। আমি বললাম, এত টাকা তো নেই আমার কাছে। বললেন, কত আছে? বললাম, ২০ হাজার। রুমে গিয়ে তিনি আরও ২৫ হাজার এতে আমার হাতে দিয়ে বললেন, এই টাকা তোকে ফেরত দিতে হবে না। তোর বউয়ের জন্য দিলাম। যা পরীক্ষাগুলো করে নিয়ে আয়।

    ডাক্তারের একের পর এক উদারতা ও সহযোগিতা দেখে বারবার মুগ্ধ হয়েছি। তিনি বলেন, নগদ প্রায় এক লাখ রুপি দিয়ে সহযোগিতা করেছেন তিনি। বিদেশের মাটিতে একজন ডাক্তার এক রোগীকে টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছে এটা যতবারই ভাবি ততবারই জয়দেব চক্রবর্তীর প্রতি শ্রদ্ধায় মাথাটা নত হয়ে যায়।

    শুধু আমার স্ত্রীর ক্ষেত্রে এ দৃশ্য দেখিনি। দেখেছি তার নিজের দেশেরও অনেক রোগীর ক্ষেত্রে। রোগী মন খারাপ করে রুমে প্রবেশ করতো বের হতো হাসি মুখে। এ এক যাদুর ডাক্তার।

    শফিকুল বলেন, আমার স্ত্রীকে ক্যান্সারের বিষয়টা আমরা কেউ বলিনি। একদিন সে (স্ত্রী) জানতে চাইল, আর কতদিন থাকতে হবে, বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে? বললাম, খুব তাড়াতাড়ি চলে যাব। কিছুদিনের মধ্যে তুমি সুস্থ হয়ে যাবে। সে যা উত্তর দিল তা শুনেও হা করে তাকিয়ে রইলাম। বলল, ঢং করার দরকার নেই, জয়দেব স্যার বলেছে আমার ক্যান্সার হয়েছে? ভালোভাবে চিকিৎসা করলে সুস্থ হয়ে যাব।

    বাংলাদেশের ডাক্তারদের কাছেও এমন প্রত্যাশা রেখে শফিকুল বলেন, এমন মুগ্ধ ব্যবহার আমাদের দেশের ডাক্তাররা করলে কোনো রোগীই অন্যদেশে চিকিৎসা নিতে যাবে না। বরং বাংলাদেশে চিকিৎসা নিতে আসবে। ভালোটা জেনেও আমরা কেন ভালো কাজ করি না সেটাই বুঝি না।

    সূত্র: জাগো নিউজ

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close