আফরোজা সোমার চার কবিতা
কবি পরিচিতি : আফরোজা সোমা
সম্পর্কিত খবর
জলে ডোবা গান
যে রয়েছে ব্যথার আড়ালে
যে গেয়েছে একাকীত্বের গান
থাকুক সে গহীনে নিবিড়
থাকুক সে একা এক তারা হয়ে দূরে উজ্জ্বল।এইখানে ঝলমলে আলোর নিচে মিহি মিহি মোহনীয় অন্ধকার
সকলে সহাস্যে করেছে বরণ; যে পারে নি হাসতে অমন,
অভিমানে যে আছে টুইটুম্বুর, উৎসব হতে যে আছে দূরে,
যে আছে ব্যথার আড়ালে— অনুজ্জ্বল একাকীত্বে ম্লান—
গভীর ক্ষতের দিকে তার— তাকানোর সময় তো নাই।তবু মনে পড়ে গেলে আজ দিঘী ভরা শ্যাওলার দিন
মনে এসে গেলে আজ খয়েরি শালিকের গান
আমি টুপ করে ডুবে যাই পদ্মপাতার তলে
জলে ডুবে মনে মনে বলি বারবার
যে কথা চোখের সামনে বলি নাই।কাকতাড়ুয়া
অনেক বসন্ত চলে যাবার পর আজ মনে হয়
সে দাঁড়িয়ে ছিল একা
নিরালম্ব দুপুরের মাঝে
কাকতাড়ুয়ার মতন ছড়িয়ে দু’হাত।একটা বসন্ত বউরি বুকের মধ্যে তার
ডেকেছিল আড়ালে নিবিড়;
মূর্ছনায় পলে-পলে
ঝুর-ঝুর হয়ে ভেঙে পড়েছিল সে, প্রতিরোধহীন।অনেক বসন্ত চলে যাবার পর সে দেখে
অর্জুনের তীরের মতন
তীব্র বসন্ত এক
বিদ্ধ করে তাকে কবে ফেলে রেখে গেছে, প্রতিকারহীন।ভালোবাসা
এমন করুণ দিনে তবু বাবুই ডেকে যায়
ঝুঁটি দুলিয়ে দুলিয়ে রোদ্রে হাঁটে লাল মোরগ
রঙিন ডালিয়া ফুলের কাছে এসে শিশু হেসে ওঠে
কোকিলের ডাকে সাড়া দিয়ে ডাকে আরেকটি কোকিল।আমার বুকের মধ্যে ছড়াচ্ছে বিষ বন্ধুর ছোঁড়া তীর
আমার চোখ হয়ে আছে রুদ্রপলাশ
তবু এই চোখের ফুলে পাখি হয়ে এসে বসে
মায়ামুখ; আমি তাকে পারি না তাড়াতে?পাখির ঠোঁটের ঘায়ে রক্তাক্ত যে ফুল
রোদের মায়ার ঘায়ে বিদ্ধ দুপুরের যে লাল মোরগ
তাকে দিও না ফুলের তোড়া, চকলেটের বাক্স উপহার
হৃদয়ের শুশ্রুষা ছাড়া মানুষের হয় না বাঁচা।সত্য ও সহোদর
আমার খাঁচায় বাঘ, বাঘের খাঁচায় আমি,
আমরা একই উদরে জন্মেছিলাম,
আমরা একে অন্যকে খেতে চাই;আমাদের মা—প্রকৃতি— বলেছেন: এর চেয়ে আর কোনো সত্য নেই;
এক জীবন নাশ-এর মধ্যেই নিহিত থাকে আরেক জীবনের বীজ,
আমরা তাই একে অন্যকে সংহার করে চলি, বপন করে চলি বীজ;আর মৃত সহোদরের মাথার কাছে শোকাতুর হয়ে বলি:
ক্ষমা করো ও প্রিয় বাঘ
ক্ষমা করো ও প্রিয় মানুষ
ক্ষমা করো ও প্রিয় ফুল
ক্ষমা করো ও প্রিয় ফল
ক্ষমা করো ও প্রিয় বীজ;
আমরা প্রাণধর্ম পালন করে চলেছি মাত্র।