এমপি আউয়ালের খিস্তিখেউর ভাইরাল
পিরোজপুর সদর আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এ কে এম আব্দুল আউয়াল এবং জেলার নাজিরপুর উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতা ও জাহাজ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নান্না মিয়ার কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এই আলাপন থেকে জানা যায়. নান্না মিয়ার জাহাজ জোর করে নিজের নামে লিখিয়ে নিতে এমপি আওয়াল ক্যাডার পাঠিয়েছেন এবং বিষয়টি নিয়ে তিনি অশালীন ভাষায় গালিগালাজও করতে শোনা গেছে।
তাহসান আহমেদ নামের একটি আইডি থেকে শনিবার বিকেলে পিরোজপুর-১ আসনের এমপি আউয়ালের অশালীন ভাষায় গালাগালি ও হুমকির েইই অডিও রেকর্ড জেলার ৭৫ জন ফেসবুক ব্যবহারকারীকে ট্যাগ করা হয়। এরপরই এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। হজ করে আসা একজন সংসদ সদস্যের অশ্লীল খিস্তিখেউর নিয়ে সর্বত্র চলছে তুমুল সমালোচনা।
সম্পর্কিত খবর
অডিওতে শোনা যায়, এমপি আউয়াল ওই আওয়ামী লীগ নেতার মোবাইল ফোন ব্যবহার করেই ক্যাডারদের সঙ্গে আড়ালে কথা বলেন। একপর্যায়ে ক্যাডারদের নির্দেশ দেন ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে মারধর করে সাদা স্ট্যাম্পে পেছনের তারিখে স্বাক্ষর রেখে তাঁকে স্বরূপকাঠি ছাড়া করতে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি আউয়াল এলোমেলো কথা বলেছেন। প্রথমে তিনি বলেন, ‘আপনি ভুল করছেন, নান্না নামে স্বরূপকাঠিতে কোনো আওয়ামী লীগ নেতা নাই।’ এরপর তিনি ওই অডিওর কণ্ঠ নিজের নয় বলে দাবি করার চেষ্টা করেন। বলেন, ‘ওই কণ্ঠ তো আমার নাও হইতে পারে। ওইটা যে আমার কণ্ঠ সেটার প্রমাণ কী?’ পরে আরো প্রশ্ন করতে একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘নান্নার সঙ্গে আমার প্রতিদিনই কথা হয়। সে তো আমার শেল্টারেই চলে। আমি তাঁকে মারতে লোক পাঠাব কেন?’ জাহাজ কি আপনার না নান্নার জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নান্নার জাহাজ আসবে কোত্থেকে। ওইটা বানাইন্না হইছে দু-তিনজন মিল্ল্যা।’
এমপি আউয়াল আরো বলেন, ‘এইটা তো কোনো সমাধান না, ঢাকায় বইস্যা কত মানুষেই আমার বিরুদ্ধে কত অপপ্রচার করে। তাতে আমার কী হইছে। একজনের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ করলেই তো হয় না। এখন যদি আমি আপনারে বলি—আপনি সংবাদ প্রকাশের কথা কইয়া আমার কাছে চাঁদা দাবি করছেন, তাইলে কি ঠিক অইবে? কিন্তু আমি কইলে তো কইতে পারব।’ শনিবার দুপুর থেকে তাহসান আহমেদ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে প্রচার করা পিরোজপুর-১ আসনের এমপি আউয়ালের অশালীন ভাষায় গালাগাল ও হুমকির একটি অডিও। এতে পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার ৯ নম্বর কলার দোয়ানিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নান্না মিয়ার সঙ্গে শবে বরাতের রাতে এমপির কথোপকথন ছিল।
অডিও রেকর্ডের বিস্তারিত—
নান্না : আস্লামালেকুম ভাইজান
আউয়াল : কী ব্যাপার, শবেবরাতের দিন তুমি আবার কী বিরক্ত করো?
নান্না : ভাইজান, শিশির ভাই আইছে।
আউয়াল : জাহাজ নামবে না, নামবে না জাহাজ।
নান্না : জাহাজের নিচের পিলারপুলার ফাইড্ডা গেছে। হেইগুলা একটু ঠিকঠাক করার পরে আমনে আইলে নামামু।
আউয়াল : সব যায় যাউক, জাহাজ নামবে না। আমি আসব, ফয়সালা অইবে, তারপর দেখা যাবে।
নান্না : আচ্ছা ঠিক আছে, আপনে আইবেন তারপর জাহাজ নামামু।
আউয়াল : নামাবা ঠিকই; কিন্তু জাহাজের কাছেও আসবা না।
নান্না : তাইলে শিশিরকে একটু কইয়া দেন।
এরপর নান্না নিজের মোবাইল ফোনে এমপি আউয়ালের পাঠানো ক্যাডার শিশিরকে ধরিয়ে দেন।
আউয়াল : হালারপো হালারে ধইর্যা চোপার দিয়া দে। দিয়া কবি তুই আর স্বরূপকাঠি আবি না। কঠিনভাবে দিবি। হালার এত বড় সাহস অইয়া গেছে আমার লগে দুই নম্বরি করে।
এরপর আরেক ক্যাডারকে আউয়াল : দেখ ও যা কয়, হেডা যদি ঠিক অয় তাইলে ঠিক কর, ঠিক কইর্যা কবি তুই আর স্বরূপকাঠি আবি না..., কঠিনভাবে দিবি আর বলবি স্বরূপকাঠি আর আসবি না। খয়রাতি ছিল, ওর মতো লোক আমার সাথে দুই নম্বরি করতে সাহস পায়।’
এরপর মোবাইল ফোন লালনকে দিতে বলেন এমপি আউয়াল।
লালনের উদ্দেশে আউয়াল : কাজ লাগলে করা; কিন্তু জাহাজ নামবে না। কাজ করা, তোর লগে খাতির অউক। কি কইছি কতা বুজো নায়। কাজ লাগলে কর। ও জাহাজ নামবে না। জাহাজ আমার।’
আবার আউয়াল : একটা কাজ কর, সাদা স্ট্যাম্প আইন্না হালারপো হালারে জাইত্যা ধইর্যা সই ল। সই দেয়ার পর ওরে চিত কইরা থো। ব্যাগ ডেটে, ব্যাগ ডেটে সই লবি। ও যদি কোথাও কমপ্লেইন করে তাইলে ডেটে যেন মেলে না।’
‘কেউ যেন দেহে না, ও আবার শোনে নাকি? সবই তো কইতে আছি!’ এরপর আউয়ালের হাসি...
লালন : না না, আমরা দূরে আইছি, শোনে না।
পরে আর একটি অডিও রেকর্ডিংয়ে নান্নাকে অশ্লীল গালি দিয়ে আউয়াল : তোরে লাল দালানের (জেলখানা) ভাত খাওয়ামু। দেহি তোরে কোন ঠাকুর দাদা কোন বাপে আইসা ঠেকায়। আমি বাপের পোলা হইলে তোরে লাল দালানে না ঢুকাইয়া ছাড়তেছি না। দাঁড়া তোরে ঢাকা দিয়াই আমি ধরাইয়া দিমু।’
এরপর মোবাইল ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে নান্না মিয়া বলেন, ‘আমার জীবন এখন হুমকির মুখে। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর আরো বিপদে পড়েছি।’ কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলেন, ‘আমি এর আগে এলজিইডির একটি কাজে ২০ লাখ টাকা দিয়েছি। কিন্তু এক টাকাও ফেরত দেয় না। এই জাহাজখানা স্বরূপকাঠির এক ব্যবসায়ী রাজা মিয়ার সাথে যৌথ মালিকানায় প্রস্তুত করেছি। এখন এমপি সাহেব এই জাহাজটি আত্মসাৎ করতে চাচ্ছেন। এমপি হওয়ার পর তিনি আরো চারটি জাহাজ করেছেন। তখন আমি তাঁকে সহযোগিতা করেছি। এখন দেখছি উনি (এমপি) আমাকে মেরেই ফেলতে চাচ্ছেন।’
এ ব্যাপারে পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাকিম হাওলাদার বলেন, ‘একজন এমপির মুখে এমন ভাষা মানায় না। নান্নার উচিত অচিরেই থানায় সাধারণ ডায়েরি করা।’
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘বারবার হজ করা একজন এমপির কাছে এমন অশ্লীল বাক্য প্রয়োগ পিরোজপুরের জনগণকে হতাশ করেছে। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় এমপি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত নয়, দলেও এর প্রভাব পড়ে।’