• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

মা দিবসের মূল উদ্দেশ্য জন্মদাত্রী মা’কে যথাযথ সম্মান দেওয়া

প্রকাশ:  ১৩ মে ২০১৮, ০০:০১
একে আজাদ
প্রতীকী ছবি

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হবে যথাযোগ্য মর্যাদায়।মায়ের প্রতি ভালবাসা, সামান্য উপহার, কেক কাটা বা মায়ের পছন্দের খাবার খাইয়ে মাকে খুশি করার মধ্য দিয়েই হয়তো আমরা পালান করবো দিনটি।

এ উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো আলোচনা অনুষ্ঠান, শোভাযাত্রাসহ মা’কে সম্মান জানানোর জন্য বিভিন্ন ধরণের কর্মসূচি পালন করবেন। মা দিবসের মূল উদ্দেশ্য জন্মদাত্রী মা’কে যথাযথ সম্মান দেওয়া। যে মা জন্ম দিয়েছেন, লালন-পালন করেছেন, তাকে শ্রদ্ধা দেখানোর জন্যই মূলত দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে ইতিমধ্যে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান ও নাটক সম্প্রচারিত হচ্ছে।

সম্পর্কিত খবর

    মা দিবসের ইতিকথা

    ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ডের পাদ্রিরা এ বিষয়ে একটি ফতোয়া দেন। তারা মাদার চার্চের সীমানা বাড়িয়ে ‘রিয়েল মাদার’ বা সত্যিকারের মা-দেরকেও এর মধ্যে আনার কথা বলেন। এবং উৎসবের দিনটির নতুন নাম দেন ‘মাদারিং ডে’ হিসেবে। পরে ‘মাদারিং ডে’কে গৃহপরিচারক থেকে শুরু করে সব শ্রমজীবী মানুষদের জন্য একটা বিশেষ সহানুভূতিশীল দিন হিসেবে মান্য করা শুরু হয়।

    মায়ের প্রতি সম্মান জানিয়ে বর্তমানে সারা বিশ্বে ঘটা করে পালন করা হয় ‘মাদার্স ডে’ বা ‘মা দিবস’। অনেক আগে এটি একটি নিছক ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছিল। আধুনিক কালে আমেরিকায় প্রথম ধর্মনিরপেক্ষভাবে দিনটি পালন শুরু হয়। আমেরিকার ছোট এক শহরে এর সূত্রপাত হলেও সেখান থেকে ধারণাটি জনপ্রিয় হয়ে সারা আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে। এর পর ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। আধুনিক কালে আমেরিকা থেকে আইডিয়াটা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লেও এর উৎস প্রাচীন মিসর। সেখানে এর চল শুরু হয়েছিল ধর্মীয় আচারের অংশ হিসেবে। যদিও এ বিষয়ে মতান্তর রয়েছে।

    প্রাচীনকালে মিসরের দেবী আইসিসকে মিসরের রাজা ফারাও বা ফেরাউনদের মা হিসেবে গণ্য করা হতো। তাঁর প্রতি সম্মান জানিয়ে বছরের একটি বিশেষ দিনে উৎসব পালন করা হতো। এ সম্পর্কিত মিথটি হলো, আইসিসের ছিল দুই ভাই। একজন হোসাইরিস ও অন্যজন সেথ। আইসিসকে বিয়ে করার ইচ্ছা ছিল সেথের। কিন্তু আইসিস তার বদলে হোসাইরিসকে বেশি পছন্দ করে; তাকেই বিয়ে করে। এতে ক্ষেপে গিয়ে সেথ হোসাইরিসকে কেটে ১৩ টুকরো করে। আইসিস তখন সেই তেরোটি টুকরোই তার শরীরের মধ্যে নিয়ে নেয়। সেখান থেকে এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়, নাম রাখা হয় হোরাস। সেথের কোপানল থেকে বাঁচাতে আইসিস হোরাসকে সব সময় লুকিয়ে রাখত। এক সময় সেথ মারা যায়। আর হোরাস বড় হয়ে সংযুক্ত মিসরের রাজা বা ফারাও হয়। সেই থেকে আইসিস মিসরের ফারাওদের মা হিসেবে পরিগণিত। পরে দেবী আইসিসকে রোমানরাও দেবী হিসেবে গ্রহণ করে।

    আবার অনেকের মতে, মাদার্স ডে-এর প্রচলন প্রথম শুরু করে গ্রিকরা। প্রাচীন গ্রিসে বসন্তকালে গ্রিকদের দেবী-মাতা রিয়ার প্রতি সম্মান জানিয়ে উৎসব হতো। এটা যখন রোম ও এশিয়া মাইনরে ছড়িয়ে পড়ে, তখন গ্রিক দেবী রিয়ার বদলে রোমানদের দেবী হিসেবে জায়গা করে নেন মহা-মাতা দেবী ‘সিবিল’। রোম ও এশিয়া মাইনরে সিবিলের পূজা পদ্ধতি ছিল গ্রিকদের দেবী-মাতা রিয়ার পূজার অনুরূপ। এই উৎসব সাধারণত ১৫-২৫ মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতো। সময়ের সঙ্গে এই উৎসবে পরিবর্তন আসে। প্রথম দিকে লোকে উৎসবটা খুব উচ্ছৃঙ্খলভাবে পালন করত বলে, পরে তা নিষিদ্ধ হয়। পরবর্তীতে শুধু মধু দিয়ে রুটি খাওয়া ও পরস্পরকে ফুল বিতরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে উৎসবটি অনাড়ম্বর রূপ পরিগ্রহ করে। তবে পূজার প্রচলন ছিল সেই সময়ও। পূজা শেষে দেবীমূর্তি কাঁধে নিয়ে সবাই শোভাযাত্রা করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ত। ‘হিলারিয়া’ নামের এই উৎসব উপলক্ষে নানা ধরনের শিল্পকলা প্রদর্শনীরও ব্যবস্থা থাকত।

    এশিয়া মাইনর ও রোমের এই উৎসব ক্রমশ সারা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিস্তৃতির সঙ্গে অবধারিতভাবে আসে কিছু পরিবর্তনও। ইউরোপের সমাজব্যবস্থায় ‘মাদারহুড’ বা মাতৃত্বের সম্মান দেখানোর পৃথক রীতি-নীতির কারণেই এই পরিবর্তন আসে। ইউরোপে এসে মাতৃত্বের এই উৎসব খ্রিষ্টান ধর্মের সঙ্গে মিলেমিশে যায়। সাধারণত ইস্টার সানডের আগের ৪০ দিন উপবাস করে ধর্মপ্রাণ খ্রিষ্টানরা। এই সময়টিকে লেন্ট বলা হয়। এই লেন্টের চতুর্থ রোববারে মায়ের প্রতি সম্মান জানানোর দিনটি ধার্য করা হয়। প্রথম দিকে খ্রিষ্টানরা যেখানে ব্যাপ্টাইজ্ড হয়েছে, সেই গির্জাকে তারা ‘মাদার চার্চ’ বা ‘মা গির্জা’ বলত। ইউরোপের খ্রিষ্টানরা উৎসবের স্থান হিসেবে বেছে নেয় এই ‘মা গির্জা’কেই। এ উপলক্ষে মাদার চার্চকে নানা অলংকার ও ফুল দিয়ে সাজানো হতো।

    কিন্তু ক্রমে মায়ের প্রতি সম্মান জানানোর এই রীতি আধ্যাত্ম পেরিয়ে জাগতিক জীবনে প্রবেশ করে। ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ডের পাদ্রিরা এ বিষয়ে একটি ফতোয়া দেন। তারা মাদার চার্চের সীমানা বাড়িয়ে ‘রিয়েল মাদার’ বা সত্যিকারের মা-দেরকেও এর মধ্যে আনার কথা বলেন। এবং উৎসবের দিনটির নতুন নাম দেন ‘মাদারিং ডে’ হিসেবে। পরে ‘মাদারিং ডে’কে গৃহপরিচারক থেকে শুরু করে সব শ্রমজীবী মানুষদের জন্য একটা বিশেষ সহানুভূতিশীল দিন হিসেবে মান্য করা শুরু হয়। ওই বিশেষ দিনটিতে ছুটি পেত তারা, নিজ পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য। পরে ধর্মযাজকেরা ঠিক করলেন, বিশেষ এই দিবসে ‘লেন্ট’ বা উপবাস থেকে সবাইকে অব্যাহতি দেওয়া দরকার, যাতে শ্রমজীবীরা নিজ পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হয়ে আনন্দভোজন করতে পারে, যেখানে প্রধান অতিথিই থাকবেন মা।

    লেখকঃ সাংবাদিক

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close