• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

এই পত্রিকা লইয়া আমরা কি করিবো?

প্রকাশ:  ১৯ মে ২০১৮, ০৯:৩৩
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

গত কয় বছর, ভালো করছে আমাদের ছবি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ফেস্টিভালে নির্বাচিত হচ্ছে, প্রজেক্ট মার্কেটগুলোতে নির্বাচিত হচ্ছে। ধীরে আগাচ্ছি আমরা। কিন্তু নিশ্চিতভাবেই আগাচ্ছি। রুবাইয়াত, সাইমন, জিকো, ইমন, সাদ, মাহদী, বিজন, আরিফ, সুমিত, মৌ, অমিতাভ, হুমায়রা- বেশ একটা স্রোত আসছে। আরো তরুনতররা আসছে চ্যানেল আইয়ের অমনিবাস প্রজেক্ট নিয়ে। এর বাইরে শত শত তরুন তার মতো চেষ্টা করছে ছবি বানানোর। তার মানে আমরা বলবার মতো কাজ করতে পারছি বা চেষ্টা চলছে। তাহলে আমাদের কেনো দরকার পড়ছে বিভ্রান্তি ছড়ানোর বা শর্টকার্টে মোক্ষলাভের চেষ্টার?

দুর্বলের দরকার ভাওতার। সবলের কেনো সেটা দরকার হবে?

সম্পর্কিত খবর

    প্রত্যেকবার কান ফেস্টিভাল আসলেই আমরা যা করতে থাকি সেটা হাস্যকর। গত কয়দিনে বেশ কিছু চিঠি পেয়েছি। সেগুলা পড়ে বুঝলাম, পত্রিকাগুলা সফলভাবেই কাউকে কাউকে বিভ্রান্ত করতে পেরেছে। বলা হচ্ছে, কানে নির্বাচিত বাংলাদেশী ছবি প্রসঙ্গে।

    এখানে পরিষ্কার বলে নেয়া দরকার, বাংলাদেশে কান গ্লোরির এখন পর্যন্ত একমাত্র দাবীদার জনাব তারেক মাসুদ। মাটির ময়না নিয়ে উনি ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটে নির্বাচিত হয়েছেন। কান বলতে আপনি বুঝবেন কানের অফিসিয়াল সেকশন আর দুইটা ইন্ডিপেন্ডেন্ট সেকশন - ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট আর ক্রিটিকস উইক। তো এখন পর্যন্ত মাটির ময়না এই তিন স্তম্ভের যে কোনো একটিতে নির্বাচিত একমাত্র বাংলাদেশী ছবি। এর বাইরে বাংলাদেশের কোনো ছবি কান গ্লোরি দাবি করতে পারে না।

    যেভাবে প্রতিদিন সংবাদপত্রগুলো বাংলাদেশের ছবিকে কানে পাঠাইয়া দিচ্ছে তাতে সত্যি সত্যি কানে ছবি গেলে, তখন কি লিখবে সেটাই ভাবছি। বা দেখা যাবে, ঐটা আর তখন পাত্তাই পাচ্ছে না। লোকে বলবে, এ আর নতুন কি?

    এবার আসেন ভাবি, কেনো কান বা ভেনিস বা বার্লিন বা লোকার্নোতে বা যে কোনো বড় ফেস্টিভালে ছবি নির্বাচিত হলে সেটা একটা খবর হয়? ফেস্টিভালগুলোতে প্রোগ্রামার বলে একটা শ্রেনী আছে যারা সারা দুনিয়ার হাজার হাজার ছবির মধ্য থেকে সামান্য কিছু ছবি নির্বাচন করে অফিসিয়াল সিলেকশনের তকমা দেন। এবং এই নির্বাচনের মাধ্যমে ঐ ফেস্টিভাল সার্টিফাই করে ছবিটার মাহাত্ম। ঐ বিশেষ মাহাত্মের জন্যেই সেটা খবর হয়ে ওঠে।

    কিন্তু এখন দেখছি পত্রিকাগুলা তাদের পাতা মোটামুটি ব্যাপক সহজলভ্য করে তুলেছে। যে কোনো কিছুই এখন খবর।

    মার্কেট স্ক্রিনিং বা শর্ট ফিল্ম কর্নারে ছবি রাখা কোনোভাবেই কোনরকম ফেস্টিভাল সিলেকশন না। ফলে এটাকে “কানে যাচ্ছে বাংলাদেশের অমুক ছবি” বলাটা এক ধরনের আত্ম প্রতারনা। কারন আপনি এই নিউজের মাধ্যমে সাধারন মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। এমন একটা ভাইব দিচ্ছেন যেনো কানে ঐ ছবি নির্বাচিত হয়েছে।

    মার্কেট স্ক্রিনিং নির্দিষ্ট ফি এর বিনিময়ে যে কেউ করতে পারে। আর “শর্ট ফিল্ম কর্নার” এক ধরনের অনলাইন লাইব্রেরি। যেখানে নির্দিষ্ট ফি’র বিনিময়ে যে কেউ তার ছবি রাখতে পারে। যতক্ষন পর্যন্ত না তাদের জায়গা পুর্ন হয়ে যাচ্ছে, বা ছবিটা খুব আবোল তাবোল কিছু না হলে সেখানে রাখতে দিবে। কিন্তু সেটা কোনো ভাবেই কানের নির্বাচিত ছবি না। এটা মূলত তরুন ফিল্মমেকারদের কানে ছবি দেখা, নেটওয়ার্কিং করা, নিজেদের শর্ট ফিল্ম অন্যদের দেখানোর জন্য সুযোগ করে দেয়ার জন্য করা হয়েছে।

    আশা করি আমাদের চলচ্চিত্র ব্যবসায়ী এবং তরুন ফিল্মমেকাররা এই সুযোগ সদ্ব্যবহার করবে, অসদ্ব্যবহার না।

    কিন্তু শর্ট ফিল্ম কর্নারে ছবি রেখেই যেভাবে এটাকে কানে যাচ্ছে বলে নিউজ করানো হচ্ছে তাতে ঐ তরুন ফিল্মমেকার ভাইদের জন্য আমার মায়া হচ্ছে। ধরা যাক, আগামী বছর সত্যি সত্যি ঐ তরুনের ছবি কানে নির্বাচিত হলো, তখন কি নিউজ করাবে? কানে দ্বিতীয়বার অমুকের ছবি? কিন্তু কানের অফিসিয়াল সাইট বা টপ ম্যাগাজিনগুলাতো বলবে “প্রথম ছবি হিসাবে নির্বাচিত”!

    যেখানে “লাইভ ফ্রম ঢাকা” সিঙ্গাপুর ফিল্ম ফেস্টিভালের মতো কঠিন সিলেকশনের খবর আপনি দেন আপনার পাতার একদম নীচের দিকে, যেখানে আন্ডার কন্স্ট্রাকশন ভেসুলে অ্যাওয়ার্ড জেতার খবর আপনি “পাত্রী চাই” এর বিজ্ঞাপনের মতো ষাট শব্দে সারেন, সেখানে শর্ট ফিল্ম কর্নারের খবর দিয়ে আপনি লিড নিউজ করেন যেটা কোনো ফেস্টিভাল সিলেকশনই না। এটা রীতিমতো তামাশা। এটা এখনই বন্ধ হওয়া উচিত। আপনার সমর্থন এবং স্পেস ঐ তরুনদের জন্য বরাদ্দ রাখুন যারা পৃথিবীর নানা প্রান্তের হাজার হাজার ছবির সঙ্গে লড়াই করে ফেস্টিভাল সিলেকশন পায়। কান-ভেনিস-বার্লিনে পৌঁছাবার লড়াইটা এভাবেই করছে আমাদের তরুনেরা। সেগুলাকে গুরুত্ব দেন।

    নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী'র ফেসবুক ওয়য়াল থেকে নেয়া।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close