পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যান সংকট
গ্রাহকদের কাঙ্খিত সেবা দিতে পারছেনা
লাইনম্যান সংকটের কারণে কাঙ্খিত গ্রাহক সেবা দিতে পারছেনা ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। সমিতির জেলা জুড়ে ৬টি জোনাল অফিস ও ২টি সাব জোনাল অফিসে ২১০ জন লাইনম্যানের স্থলে কর্মরত আছেন মাত্র ১৬০ জন। বিদ্যমান শূণ্যপদে ৫০ জন লাইনম্যান নিয়োগের জন্য বার বার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানানোর পরও কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। এমতাবস্থায় দিন দিন সেবা বঞ্চিত হওয়া গ্রাহকদের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। এমন সুযোগে দালাল চক্র দ্রুত বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের কথা বলে গ্রাহকদের থেকে নগদ টাকা আদায় করে বলেও অভিযোগও করছে গ্রাহকরা।
ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ অফিস জানায়, সমিতির জেলাজুড়ে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৮৮ জন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সুবিধা দিয়ে আসছে ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। ৬টি জোনাল অফিস, ২টি সাব জোনাল অফিস ও ১৬টি অভিযোগ কেন্দ্রের মাধ্যমে এসব গ্রাহকদেরকে দ্রুত ও কাংখিত সেবা দিতে তৎপর রয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। কিন্তু এক দিকে দিন দিন পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক বাড়ছে অন্যদিকে বিগত ২ বছর নিয়োগ বন্ধ থাকায় লাইনম্যান সমস্যাটি তীব্র আকার ধারণ করছে। এতে করে লাইনম্যানের রুটিনওয়ার্ক কোন রকম চালিয়ে নেয়া সম্ভব হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় গ্রাহক বিড়ম্বনার শেষ থাকে না।
ঝড়ো-হাওয়া ও বৈশাখী তান্ডবের পরবর্তী রাস্তাঘাটে বিদ্যুতের খাম্বা ও তার পড়ে ৫/৭ দিন পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন থাকতে হয় গ্রাহকদের। গত মৌসূমে সোনাগাজী উপজেলায় ঝড়-তুফানের পরবর্তী নানা সমস্যায় অন্তত ১৫ দিন যাবত অনেক এলাকা বিদ্যুৎহীন ছিলো। এ সুযোগে এক শ্রেনীর অসাধু দালাল চক্র গ্রাহকদেরকে দ্রুত বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান করে দেয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেয় নগদ অর্থ। প্রতারিত হয় গ্রাহকরা।
ফেনী সদর উপজেলার সুন্দরপুর এসআর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমির হোসেন জানান, কয়েকদিন আগে তার স্কুলে বিদ্যুৎ সংযোগে সমস্যার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি তিনি পল্লী বিদ্যুতের অভিযোগ কেন্দ্রে মোবাইল করে জানালে তারা ওই এলাকার জনৈক ব্যক্তির সাথে কথা বলতে অনুরোধ করেন। যিনি পল্লী বিদ্যুতের কোন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী নয়।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নিয়ম মোতাবেক জেলা জুড়ে ১৬টি অভিযোগ কেন্দ্রে ৪ জন করে ৬৪ জন, ৬টি জোনাল অফিসে ১২ জন করে ৭২ জন, ২টি সাব জোনাল অফিসে ৯ জন করে ১৮ জন ও ১০টি উপকেন্দ্রে ৪ জন করে ৪০ জন লাইনম্যান থাকার কথা। এছাড়াও কয়েকটি এলাকায় গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অতিরিক্ত লাইনম্যান নিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। নিয়ম মোতাবেক তারা অফিসিয়াল কাজের পাশাপাশি গ্রাহকদেরকে সেবা দিয়ে থাকবেন। সব মিলিয়ে বর্তমানে ফেনী জেলায় ২১০ জন লাইনম্যানের স্থলে ১৬০ জন কর্মরত আছেন।
জানা যায়, ছাগলনাইয়া জোনাল অফিসের আওতায় ৫৫ হাজার ১০৩ জন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এখানে ৩৪ জন লাইন ম্যানের স্থলে কর্মরত আছেন ২৬ জন। ছাগলনাইয়ার রেজুমিয়া এবং করৈয়ায় দুটি সাব-ষ্টেশনে নিয়ম মোতাবেক ৮ জন লাইনম্যান নিয়োগ দেয়ার কথা। কিন্তু সেখানে কোন জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। এমতাবস্থায় জোনাল অফিসের ৬ জন লাইনম্যান দিয়ে সাবস্টেশনের কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি সড়ক দূর্ঘটনায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধিন রয়েছেন ছাগলনাইয়া জোনাল অফিসের ৩ জন লাইনম্যান, ছুটিতে আছেন আরও দু’জন। হিসেব মতে ১৫ জন লাইনম্যান ৫৬ হাজার গ্রাহককে জোড়াতালি দিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। নিয়ম মোতাবেক কোন অভিযোগ কেন্দ্রের আওতায় ৮ হাজারের অধিক গ্রাহক থাকলে এরিয়া অফিস ঘোষনার কথা। কিন্তুু দক্ষিণ সতর অভিযোগ কেন্দ্রের আওতাধীন ৯ হাজার ৬২৪ জন গ্রাহক থাকলেও এটিকে এরিয়া অফিস ঘোষণা করা হচ্ছেনা। এরিয়া অফিস স্থাপন হলে একজন জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ারসহ ৭ জন লাইনম্যান নিয়োগ দেয়ার বিধান রয়েছে। শুধু ছাগলনাইয়া জোনাল অফিস নয়; জেলার প্রায় সবকটি জোনাল অফিসেরই একই চিত্র চলছে।
দাগনভূঞা জোনাল অফিসের আওতায় ৫১ হাজার গ্রাহককে ৪১ জন লাইনম্যানের জায়গায় সেবা দিচ্ছেন ২৮ জন। ১৩ জন লাইনম্যানের পদ শূণ্য রয়েছে। এ উপজেলায় ২টি সাবস্টেশন থাকলেও কোন জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি।
সোনাগাজীতে ৩২ হাজার ৪৫৫ জন গ্রাহককে ৪৩ জনের পরিবর্তে সেবা দিচ্ছেন ২৭ জন লাইনম্যান। এখানেও শূণ্য রয়েছে ১৬ জনের পদ। ফেনী সদর উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার গ্রাহককে ৪১ জন লাইনম্যানের স্থলে সেবা দিচ্ছেন ৩৩ জন। এছাড়াও ফুলগাজীতে ১ জন, পরশুরামে ২ জন, রাজুপুর সাব জোনাল অফিসে ২ জনের পদ শূণ্য রয়েছে।
এ বিষয়ে ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম (প্রশাসন) মো. হান্নান মিয়া জানান, ফেনীর বিভিন্ন এলাকায় লাইনম্যান সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে। স্বাভাবিক সময়ে কোন রকুম কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হলেও প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময়ে হিমসিম খেতে হয়। লাইনম্যান সংকটের বিষয়টি উপস্থাপন করে দ্রুত নিয়োগের জন্য তারা কয়েকবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন বলে তিনি জানান।
ওএফ