• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

ড. কামালকে নিয়ে জটিলতায় যুক্তফ্রন্ট

প্রকাশ:  ২৬ মে ২০১৮, ১৭:৩৬
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে যুক্তফ্রন্টে। ফলে উদারপন্থী বলে পরিচিত চারটি দল নিয়ে গঠিত যুক্তফ্রন্টে শুরু হয়েছে টানাপড়েন। এ অবস্থায় শরিকদের আপত্তির কারণে আটকে গেছে ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের যৌথ ঘোষণা।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গত ১০ মে ওই ঘোষণা গণমাধ্যমে পাঠানোর কথা থাকলেও যুক্তফ্রন্টের শরিক জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য আপত্তি তোলে। কারণ, যৌথ ঘোষণার আগে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের নামের তালিকা থেকে আ স ম রব ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নাম কেটে দেন ড. কামাল হোসেন। এমন পরিস্থিতিতে অভিযোগ করা হয়, যুক্তফ্রন্টকে পাশ কাটিয়ে কেবল ব্যক্তি বি. চৌধুরীর সঙ্গে ঐক্য গড়তে চাইছেন ড. কামাল হোসেন। এর আগে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে জোট গঠনের জন্য লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হলে তাও মেনে নিতে পারেননি ড. কামাল।

সম্পর্কিত খবর

    বিকল্প ধারা, জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও নাগরিক ঐক্য এই চারটি দল নিয়ে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট। যার সভাপতি হলেন বিকল্প ধারার সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম যুক্তফ্রন্ট গঠনের আগের বৈঠকগুলোতে বেশ কয়েক দফা অংশ নিলেও শেষ পর্যন্ত যুক্তফ্রন্টে যোগ দেননি।

    কিন্তু অনেক চিন্তাভাবনার পর গত ৯ মে রাতে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাসায় গিয়ে যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে একযোগে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন ড. কামাল হোসেন। ওই দিন দুই নেতার মধ্যে প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক হয়। বৈঠকে যুক্তফ্রন্ট নেতা জেএসডি সভাপতি আ স ম রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। উদারপন্থী ওই দলগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রচেষ্টায় জাফরুল্লাহ চৌধুরী মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেন বলে জানা গেছে।

    সূত্র মতে, বৈঠকে দুই নেতার নামে যৌথ ঘোষণা বা বিবৃতির খসড়া নিয়ে আলোচনার পর তা স্বাক্ষরের জন্য পাঠানো হয় ড. কামাল হোসেনের কাছে। তিনি তাতে স্বাক্ষরও করেন। তবে বিবৃতির যেখানে ‘বৈঠকে আ স ম রব ও মাহমুদুর রহমান মান্না উপস্থিত ছিলেন’ এ কথা লেখা ছিল, ড. কামাল হোসেন ওই লাইনটি কেটে দেন।

    রব ও মান্না বিষয়টি জেনে পরের দিন বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে ফোন করে এ ব্যাপারে তাঁদের আপত্তি জানান। তাঁরা স্পষ্ট করে বলেন, ওই ঘোষণা তাঁরা মানবেন না। এর পর ওই ঘোষণা আর গণমাধ্যমে পাঠানো হয়নি। ১০ মে সকালেই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন ড. কামাল। যাওয়ার আগে গণমাধ্যমকে তিনি জানান, তিনি না থাকলেও বিবৃতি প্রকাশে সমস্যা হবে না।

    জানতে চাইলে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, যৌথ বিবৃতি ড. কামাল হোসেন ঈদের পরে দেশে ফিরলে হবে। এখনো কাজ চলছে। তিনি বলেন, কামাল হোসেন যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছেন।

    আর মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘যৌথ ঘোষণার বিষয়টি উভয় পক্ষের সম্মতিতে তৈরি হয়নি। এর বেশি জানা নেই।’

    অবশ্য গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মনে করেন, ড. কামাল হোসেনের আরেকটু উদার হওয়া উচিত ছিল। রব ও মান্নার নাম কেটে দেওয়াটা তাঁর ঠিক হয়নি। তবে এটাও ঠিক, ৯ মে বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল ড. কামাল ও বি চৌধুরীর মধ্যে। অন্য দুই নেতার সেখানে উপস্থিত থাকার কথা ছিল না।

    ‘ঐক্য প্রক্রিয়া’র ব্যানারে সুধীসমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জোট গঠনের চেষ্টা ড. কামাল হোসেন বহু বছর ধরে করে আসছেন। গত বছর চারটি দল যুক্তফ্রন্ট গঠন করার পরও কামাল হোসেন কয়েক মাস একাই ওই চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। কিন্তু এতে খুব বেশি সফলতা আসেনি। সাম্প্রতিককালে কামাল হোসেনের শুভাকাঙ্ক্ষী বলে পরিচিত, বিশেষ করে সুধীসমাজের কেউ কেউ পরামর্শ দেন যে, তাঁর একার পক্ষে কোনো উদ্যোগ সফল করা সম্ভব নয়। ফলে তাঁরা যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে ঐক্য করার পরামর্শ দেন। শেষ পর্যন্ত তিনি রাজি হলেও ফ্রন্টের অন্য দলগুলোকে আবার তিনি গুরুত্ব দিতে রাজি নন।

    সূত্র জানায়, এসব কারণেই শুধু বি চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করতে তাঁর বারিধারার বাসায় যান ড. কামাল। কিন্তু যুক্তফ্রন্টের সভাপতি হিসেবে বি চৌধুরী শরিক দল জেএসডি নেতা রব ও নাগরিক ঐক্যের মান্নাকে আগেই আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু ওই দুই নেতার উপস্থিত থাকার বিষয়টি ড. কামালের পছন্দ না হওয়ায় সেদিনের বৈঠকে ঐক্য নিয়ে একটি কথাও বলেননি তিনি। শুধু বি চৌধুরীর হাত ধরে বলেছেন, ‘আপনি যা করবেন আমি আছি তাতে।’

    জানতে চাইলে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘দুই নেতার নাম বাদ দিয়ে একটি যৌথ ঘোষণা বিকল্প ধারার অফিস থেকে গণমাধ্যমে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কেন যায়নি সেটি আমি বলতে পারব না।’

    সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close