• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

'আগামী নির্বাচন নিয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে'

প্রকাশ:  ১১ জুন ২০১৮, ২১:৪১
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

ভারত সফরে করে আসা বিএনপির দুই নেতা বলেছেন, বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাদের ‘দৃষ্টিভঙ্গির’ পরিবর্তন দেখতে পেয়েছেন তারা।

ভারতের তিনটি প্রতিষ্ঠান আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু এক সপ্তাহের সফর শেষে শুক্রবারই ফিরেছেন।

সম্পর্কিত খবর

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে নিজেরা প্রশ্ন তোলার মধ্যেই এই সফরে গেলেন বিএনপির নেতারা; যারা দাবি করে আসছেন, ভারতের ‘আশীর্বাদে’ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে।

    সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু বলেন, ‘ভারতের বিভিন্ন থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠান, সিভিল সোসাইটি, সাংবাদিকদের সাথে আমাদের আলোচনা হয়েছে।’

    ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের যে সঙ্কট, তা তারা অনুধাবন করছে এবং এটা থেকে বেরিয়ে আসার প্রয়োজন আজ তারা মনে করছে। আমি মনে করি, এটা একটা ভালো দিক, ইতিবাচক পরিবর্তন।’

    তিনি বলেন, ‘ভারত চায়, আগামীতে বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচন। বাংলাদেশের মানুষের যদি মতামত ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে এবং সেখানে যদি ভারতের ভূমিকা দৃশ্যমান হয়, সেটা দুই দেশের সম্পর্কের জন্য ইতিবাচক বলে আমরা মনে করি।’

    এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘সেমিনারে আমাদের বক্তব্য তারা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। এটাকেই আমরা দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন বলতে চাই। আগে কিন্তু আমরা এত মনোযোগ পাইনি। এটা হল, প্রথম একটা পরিবর্তন। কথা-বার্তার মধ্য দিয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দেখতে পেয়েছি।’

    তিনি বলেন, ‘আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ বৃহৎ রাষ্ট্র চায় না যে এমন একটা পারসেপসন তৈরি হোক, উনাদের কোনো একটা পার্টিকুলার দলের প্রতি দরদ বেশি। উনারা চাচ্ছেন, এবারে বাংলাদেশে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচন হোক।’

    এই বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে, যাতে বিএনপির অংশগ্রহণ এখনও অনিশ্চিত।

    নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় দশম সংসদ নির্বাচনও বর্জন করেছিল বিএনপি। এখন নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের পাশাপাশি দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির শর্তও যোগ করেছে তারা।

    অন্যদিকে বিএনপির দাবিতে নত না হওয়ার অবস্থান জানিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপি না এলেও ভোট হবে।

    ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ের পর টানা দ্বিতীয় মেয়াদ পার করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ভারতে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর ক্ষমতাসীন বিজেপির আমলেও আন্তঃসম্পর্ক ‘সর্বোচ্চ মাত্রায়’ বলে দেই দেশের সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।

    ভারত সফরে বিএনপির প্রতিনিধি দলে আমীর খসরু ও আউয়াল মিন্টুর সঙ্গে দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবীরও ছিলেন।

    তারা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন, রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি ও আগামী নির্বাচন’ শীর্ষক তিনটি সেমিনারে অংশ নেন।

    এছাড়া ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি, বিরোধী দল কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গেও তারা কথাবার্তা বলেছেন বলে বিএনপি নেতারা জানান।

    আমীর খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক স্পেস নাই, নির্বাচনের কোনো স্পেস নাই, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তো দূরের কথা, এসব নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।’

    ‘বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে জোর করে ক্ষমতায় যাওয়ার ও থাকার যে প্রচেষ্টা, এসব বিষয় সেমিনারে আমরা আমাদের বক্তব্য রেখেছি। তারা শুনেছে, প্রশ্লোত্তরের মাধ্যমে আরও পরিষ্কার হয়েছে।’

    তিনি বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, জনগণের ভোটাধিকার চায়, আইনের শাসন চায়- জনগণের মনে যদি এই বিশ্বাসটা আসে, তাহলে তো দুই দেশের সম্পর্কটা অনেকটা এগিয়ে যাবে। জনগণের পারসেপশনটাও পরিবর্তন হবে।’

    আমীর খসরু বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায়, আইনের শাসন চায়, মানবাধিকার চায়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চায়।

    ‘এখানে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ভারতের সেই ভূমিকাটা অবতীর্ণ হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তাহলে বাংলাদেশের জনগণের বিশ্বাসের ঘাটতি অনেকটা কেটে যাবে,’ বলেন তিনি।

    বাংলাদেশ নিয়ে বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নে ভারতের নেতারা বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচনসহ অন্যান্য বিষয়ে কী হবে, সেই সিদ্ধান্ত একান্তই বাংলাদেশের জনগণের, এতে ভারতের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।

    আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘তাদের সাথে আলোচনা করে আমাদের মনে হয়েছে যে, ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি খুব পরিষ্কার। তারা চায় না, এবার কোনোভাবেই কেউ প্রশ্ন উঠাক যে ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছে।’

    ‘এই পার্টির প্রতি একটু বেশি দরদ, ওই পার্টির প্রতি দরদ নাই- এটাও তারা চাচ্ছে না। আমি মনে করি, এটা আমাদের জন্য উত্তম, ভারতের জন্যও ভালো।’

    বিএনপিকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা যা বলেন, তার জবাবও দিয়ে এসেছেন বলে আমীর খসরু জানান। ‘যেসব প্রোপাগান্ডা করা হচ্ছে, যে মিথ্যাচার করা হচ্ছে, তাও পরিষ্কার হয়ে গেছে।’

    দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘সাজানো মামলা’য় কারাবন্দি করার বিষয়টিও ভারতে বিভিন্ন আলোচনায় তুলেছেন বলে জানান তিনি। সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close