• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডারের রহস্য উদঘাটন

প্রকাশ:  ২৪ জুন ২০১৮, ২১:২৬
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আটদিনের ব্যবধানে উদ্ধারকৃত তিনটি লাশের হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।

এই তিনজনের একজন মা ও তার দুই শিশু কন্যা। একই দিনে তাদের তিনজনকে হত্যার পর লাশ গুম করা হয়েছিল। কিলিং মিশনে ছিল স্বামী মাসুদ দেওয়ান, তার দ্বিতীয় স্ত্রী শোভা আক্তার ও চাচাতো শ্যালক সবুজ ওরফে সোহেল। কিলিং মিশনে থাকা গ্রেফতারকৃত সবুজ ওরফে সোহেল রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আশেক ইমামের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।

এছাড়া অপর ঘাতক, স্বামী মাসুদ দেওয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হলে আদালত রিমান্ড শুনানীর জন্য সোমবার তারিখ নির্ধারণ করেছেন।

রোববার বিকেল সাড়ে ৫টায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক বিবরণ জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক অ ল) মোঃ শরফুদ্দিন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুস সাত্তার, পরিদর্শক (তদন্ত) নজরুল ইসলাম, পরিদর্শক (অপরারেশন) আজিজুল হক।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার দক্ষিণ শাশাআলী এলাকার খলিলুর রহমানের পুত্র মাসুদ দেওয়ান, তার দ্বিতীয় স্ত্রী শোভা আক্তার ও চাচাতো শ্যালক নেত্রকোনার খালিয়াজুরী থানার ফতুয়া এলাকার স্বপন মিয়ার পুত্র সবুজ ওরফে সোহেল। নিহতরা হলো, মাসুদের স্ত্রী নোয়াখালীর সেনবাগের পদুয়া এলাকার আঞ্জুবী আক্তার (২৮) ও তার দুই মেয়ে ৭ বছর বয়সী মাঈদা আক্তার ও দেড় বছর বয়সী মাহি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সিদ্ধিরগঞ্জের আটি হাউসিং মসজিদ গলির কবির মিয়ার বাড়ির ৬ তলার দক্ষিণ ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয় মাসুদ দেওয়ান। সে তার প্রথম স্ত্রী আঞ্জুবী আক্তারের অমতে তারই বান্ধবী শোভা আক্তারকে বিয়ে করে।

বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগেই ছিল। ওই ঝগড়ার জের ধরে সে তার দ্বিতীয় স্ত্রী শোভা আক্তার ও চাচাতো শ্যালক সবুজ ওরফে সোহেলকে সঙ্গে নিয়ে প্রথম স্ত্রী আঞ্জুবী আক্তারকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনা মোতাবেক গত ৯ জুন তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও চাচাতো শ্যালক মিলে প্রথমে আঞ্জুবী আক্তারকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে বড় মেয়ে মাঈদা ও ছোট মেয়ে মাহিকেও শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর তাদের লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে বস্তায় ফেলে সিদ্ধিরগঞ্জের একটি নির্জন স্থানে ও একটি পুকুরে ফেলে দেয়া হয়।

প্রসঙ্গত,গত ১১ জুন বিকাল ৫টায় সিদ্ধিরগঞ্জের ভাঙ্গারপুল এলাকার ডিএনডি ইরিগেশন খালের পাশ থেকে ড্রামের মধ্যে আঞ্জুবী আক্তারের (২৮) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর ১৬ জুন ঈদের দিন আটি হাউজিংয়ের আলী মোহাম্মদের মাছের খামারে ভাসতে থাকা বস্তাবন্দী অবস্থায় দেড় বছর বয়সী শিশু মাহির লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৮ জুন আটি এলাকার একই খামারে ভাসতে থাকা একটি ব্যাগ থেকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় শিশু মাহিদার (৭) লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশগুলো প্রথমে অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার করা হয়। পরে নিহত আঞ্জুবির ছোট বোন মারুফা আক্তার ফাতেমা দুই ভাগ্নির লাশ শনাক্ত করলে পুলিশ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে তৎপরতা শুরু করে। শনিবার রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকা থেকে আঞ্জুবির স্বামী মাসুদকে এবং নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরি থানার ফতুয়া গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় তার চাচাতো শ্যালক সোহেলকে। নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শরফুদ্দিন জানান, ঘাতক সোহেল এই হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। স্বামী মাসুদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। অপর ঘাতক দ্বিতীয় স্ত্রী শোভাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় পৃথক তিনটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ বাদি হয়ে এই মামলাগুলো দায়ের করেছে।

হত্যাকান্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী জানিয়েছেন নিহতদের পরিবারের স্বজনরা। নিহত আঞ্জুবির ছোট বোন মারুফা আক্তার ফাতেমা বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমি হত্যাকান্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

নারায়ণগঞ্জ,মার্ডার,ঘাতক
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close