• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

টিকিট কালোবাজারিকে শাস্তি দেয়ায় এডিসিকে বদলি

মাঠ প্রশাসনে হতাশা ও ক্ষোভ

প্রকাশ:  ২৫ জুন ২০১৮, ১২:০৭
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

টিকিট কালোবাজারির অভিযোগ শুনে দিনাজপুর রেলস্টেশনে ক্রেতা সেজে টিকিট কিনতে যান ওই জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) মো. নুরুজ্জামান।

দিনাজপুর থেকে ঢাকার রেলের টিকিটের মূল্য ৮৯২ টাকা হলেও তার কাছ থেকে ১১শ' টাকা নেন রেলস্টেশনে মুঠোফোন রবির অনলাইন টিকিট এজেন্ট সালাম সরকার।

পূর্বপশ্চিম বিশ্বকাপ কুইজে অংশ নিতে ক্লিক করুন।

তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সালাম সরকারকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং নগদ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফতাবুজ্জামান আল ইমরান। এ সময় উপস্থিত সালাম সরকারের লোকেরা এডিসিকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছিল।

এ ঘটনা ঘটে এ বছরের ২০ মে। এর মাত্র ১৩ দিন পর গত ৩ জুন এডিসি নুরুজ্জামানকে প্রত্যাহার করে অন্যত্র বদলি করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. আবু নঈম মুহাম্মদ আবদুছ ছবুর। এরপর গত ৭ জুন এডিসি নুরুজ্জামানকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের সচিব পদে বদলি করা হয়। এ ঘটনায় মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

এর আগে বরিশালের আগৈলঝাড়ার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী তারিক সালমানের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হয়েছিল স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতির সুযোগ না দেয়ার কারণে। তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছিল। জেল খাটতে হয়েছিল। ওই সময় তারিক সালমানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট দুই জেলার ডিসি।

দিনাজপুরের এডিসি নুরুজ্জামানকে প্রত্যাহার করে অন্যত্র বদলি করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লেখা চিঠিতে ডিসি বলেন, ‘গত ২০ মে দিনাজপুর রেলস্টেশনে টিকিট কালোবাজারির বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নুরুজ্জামান। তিনি একজন টিকিট কালোবাজারিকে হাতেনাতে ধরেন। তার সঙ্গে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় দিনাজপুরে আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যার উদ্ভব হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ম হতে পারে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এডিসি নুরুজ্জামানকে জেলা প্রশাসন থেকে প্রত্যাহারপূর্বক অন্যত্র পদায়ন করা প্রয়োজন মর্মে প্রতীয়মান হয়।’

এর পরই গত ৭ জুন এডিসি নুরুজ্জামানকে বদলির প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে দিনাজপুরের ডিসি ড. আবু নঈম মুহাম্মদ আবদুছ ছবুর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। গত মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘যা বলার তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠির মাধ্যমেই জানিয়েছি। সব কথা বলা যায় না।’

এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমরা তো আর স্থানীয় লোকদের বদলি করতে পারব না। পরবর্তীতে আবার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার জন্যও মঙ্গল হয়।’

এ সময় তিনি আগৈলঝাড়ার সাবেক ইউএনও গাজী তারিক সালমানের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘সে এখন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। এটা তার জন্য প্রাইজ পোস্টিং।’ এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি এডিসি নুরুজ্জামান। তবে ওই দিন ঘটনাস্থলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘বহু দিন থেকে দিনাজপুর স্টেশনে কর্মরত রেলের কিছু অসাধু ব্যক্তি এবং মোবাইল ফোন রবির অনলাইন টিকিট বিক্রেতা পাঁচ ব্যক্তির বিরুদ্ধে টিকিট কালোবাজারির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল।

অভিযোগের সূত্র ধরে রেলস্টেশনের মনির স্টোরে গিয়ে সালামের কাছে নিজেই ক্রেতা সেজে ঢাকার একটি টিকিট কিনি। টিকিটের দাম ২০০ টাকা বেশি নেয়। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রবির অনলাইনে টিকিট কিনলে ফি বাবদ অতিরিক্ত ২০ টাকা নেয়ার কথা।’ এ বদলির আদেশে ক্ষুব্ধ মাঠপ্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশ না করে তারা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন।

যখনই স্থানীয় প্রভাবশালীদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় তখনই মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা নেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময়ই দণ্ডিত ব্যক্তির লোকেরা এডিসি নুরুজ্জামানকে দিনাজপুর থেকে বিদায় করার হুমকি দিয়েছিল। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা অপরাধীদের হুমকি বাস্তবায়নে সহায়তা করেছেন। সূত্র: যুগান্তর

/এসএম

কালোবাজারি,এডিসি,বদলি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close