বেড়ানো: ছুঁয়ে দেখি পুরান ঢাকার ঐতিহ্য
নগরজীবনে ব্যস্ততা থাকবেই, কেবল কাজে ডুবে থাকলে জীবন হয়ে ওঠবে একঘেঘে, মন হারাবে গতি। চিত্তে বৈচিত্র্যের রসদ যোগাতে বেড়ানোর বিকল্প আর কিছু নেই। হাতে সময় কম, কোথায় যাবেন ভাবছেন? হাতিরঝিল, সংসদ ভবন, রমনা পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন কিংবা তিনশ' ফুট সব জায়গাতেই চক্কর দেওয়া শেষ- যাওয়ার জায়গা কই? অবশ্যই আছে। চারশ' বছর পুরনো ঢাকা শহরে যুগে যুগে জমেছে শতসহস্র ঐহিত্যের ভাজ, আমাদের অনেকেই আজও সেগুলো ছুঁয়ে দেখিনি। কেবল পুরান ঢাকাতেই যেসব স্থাপনা আর দর্শনীয় জায়গা ছড়িয়ে আছে, কারও পক্ষে একদিনে দেখে ফেলা সম্ভব মনে হয় না।
পূর্বকথা
সম্পর্কিত খবর
ওই সব দশনীয় জায়গাগুলো চোখ রাখার আগে রিক্সার রাজধানী আর মসজিদের এই নগরীর গোড়ার কথা একটু জেনে নেয়া যাক। ইতিহাস বলে ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে মোগল স¤্রাটের প্রতিনিধি সুবেদার ইসলাম খাঁ চিশতি বাংলার রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন। দিল্লী মসনদে ওই সময় আসীন ছিলেন স¤্রাট জাহাঙ্গীর। স¤্রাটের নামানুসারে এর নামকরণ করেন জাহাঙ্গীরনগর। প্রশাসনিকভাবে জাহাঙ্গীরনগর নামকরণ হলেও সাধারণ মানুষের মুখে ঢাকা নামটিই থেকে যায়। এরপর বহু উত্থানপতন ঘটেছে এই নগরীর। মোগল শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতা পেলেও ব্রিটিশ আমলে অবিভক্ত বাংলার রাজধানী কলকাতায় স্থানান্তর করা হলে ঢাকার অগ্রগতি থমকে যায়। শাসক গোষ্ঠীর উপেক্ষায় একটি পরিকল্পিত মহানগর হিসেবে বিকশিত হতে পারেনি। পাকিস্তান আমলে ফের প্রাদেশিক রাজধানীর মর্যাদা পেলেও লোলুপ শাসকেরা ছিল ঢাকার উন্নয়নে উদাসিন। তবে এ শহরকে ঘিরে বাঙালির মানসিক চেতনার উন্মেষকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি ভিনদেশী শাসকেরা। দেশের মানুষের আত্মচেতনা ও স্বাধীকারের সূতিকাগার হলো এ শহর।ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২সালের ভাষা আন্দলন দিয়ে শুরু হয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের ফসল হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানীর হিসেবে ঢাকা মহানগরের নবযাত্রা সূচিত হয়।
মোগল আমলে বাংলার রাজধানী হওয়ায় ওই সময় গড়ে ওঠে অসংখ্য স্থাপনা। কালের ধুলো জমে সেগুলো মলিন হলেও স্বাধীনতার পর এসব ঐতিহাসিক স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থানগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় সরকার। পুরান ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে থাকো এবস ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান আজ পরিনত হয়েছে জাতীয় ঐতিহ্যে।
বাহাদুর শাহ পার্ক
পুরানো ঢাকার সদরঘাটের সন্নিকটে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক। এর পশ্চিমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং উত্তর পশ্চিমে জেলা আদালত অবস্থিত। পূর্বে এর নাম ছিল ভিক্টোরিয়া পার্ক। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবে শহীদ বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে বাহাদুর শাহ্ জাফরের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় বাহাদুর শাহ পার্ক।
বলধা গার্ডেন
পুরান ঢাকার ওয়ারীতে অবস্থিত এটি একটি উদ্ভিদ উদ্যান। বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ৩.৩৮ একর জমির ওপর ১৯০৯ সালে উদ্যানটি নির্মাণের কাজ আরম্ভ করেন। যা শেষ হতে সময় লেগেছিল প্রায় ৮ বছর। বিরল প্রজাতির ৮০০ গাছসহ বাগানটিতে প্রায় ১৮ হাজার গাছ রয়েছে। বর্তমানে এখানে ৬৭২ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। বাগানটিতে এমনও অনেক প্রজাতির গাছ রয়েছে, যা বাংলাদেশের অন্য কোথাও নেই। জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ওয়ারী, টিকাটুলী ও নারিন্দার ঠিক মাঝখানে দুটি ভাগে বলধা গার্ডেন তৈরি করেছেন। বলধা গার্ডেনের এক পাশের নাম সাইকি এবং অপর পাশের নাম সিবিলি। বলধা গার্ডেনের সাইকি অংশটিতে সবার যাওয়ার অনুমতি নেই। এটা বন্ধ করে রাখা হয়। কারণ এমন কিছু দুর্লভ প্রজাতির গাছ রয়েছে যা মানুষের আনাগোনায় নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।সাইকিতে রয়েছে নীল, লাল ও সাদা শাপলাসহ রঙ্গিন পদ্মা, তলা জবা, অপরাজিতা, ক্যাকটাস, পামগাছ, জবা, প্রভৃতি ফুলের গাছ। সপ্তাহের প্রতিদিনই এটি সকাল ৮টা থেকে ১১টা এবং ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
লালবাগ কেল্লা
মোগল আমলের স্থাপত্যকীর্তির অন্যতম হচ্ছে লালবাগের কেল্লা। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষার্ধে মোগল স¤্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র মোহাম্মদ আজমের সময়ে নির্মিত এ কেল্লায় রয়েছে পরীবিবির সমাধি, দরবার গৃহ, হাম্মামখানা, মসজিদ, দুর্গ ইত্যাদি। বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে লালবাগ মহল্লায় এর অবস্থান। স¤্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র আজম ১৬৭৮ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। নবাব শায়েস্তা খানের আমলে এর নির্মাণ কাজ অব্যাহত থাকে।
আহসান মঞ্জিল
বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় ঘেঁষে কুমারটুলি এলাকায় এই আহসান মঞ্জিলের অবস্থান। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে শেখ ইনায়েত উল্লাহ আহসান মঞ্জিলের বর্তমান স্থানে রংমহল নামের একটি প্রমোদ ভবন নির্মাণ করেন। পরে বিভিন্ন হাতঘুরে তা নবাব আব্দুল গনির হাতে আসে। নবাব আব্দুল গনি ভবনটিকে পূণনির্মাণ করেন, ১৮৫৯ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ১৮৭২ সালে শেষ হয়। নিজের ছেলে খাজা আহসান উল্লাহর নামে ‘আহসান মঞ্জিল’নামটি রাখেন তিনি। পরে এ বাড়িতে নবাব আহসান উল্লাহ বাস করতেন। মঞ্জিলটি দুটি অংশে বিভক্ত ‘রংমহল’এবং ‘অন্দরমহল’। প্রাসাদটির ওপরে কয়েকটি সুদৃশ্য গম্বুজ রয়েছে। বর্তমানে এটি একটি জাদুঘর; প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী এ জাদুঘর দেখতে এসে থাকেন। শনি থেকে বুধ, প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সর্ব সাধারণের জন্য এটি খোলা থাকে। বৃহস্পতিবার ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনে আহসান মঞ্জিল বন্ধ থাকে।
বড়কাটরা
চকবাজারের দক্ষিণে বুড়িগঙ্গার দিকে মুখ করে নির্মিত এই ইমারত। ১৬৪৪ সালে দেওয়ান আবুল কাশেম কাটরাটি শাহ সুজার বাসস্থান হিসেবে নির্মাণ করেন। তবে শাহ সুজা কখনোই এই কাটরাটিতে বাস করেননি। মুসাফির, পথিক ও আশ্রয়হীনদের সরাইখানা বা লঙ্গরখানা হিসেবে ব্যবহার হয়েছে বড়কাটরা বর্তমানে কাটরাটির একটি অংশ দখল করে রেখেছে একটি মাদ্রাসা আর অন্য আরেকটি অংশ দখল নিয়েছে বিভিন্ন স্তরের কিছু মানুষ।
ছোটকাটরা
বড়কাটরা থেকে ১৮২.২৭মিটার পুবে এই ছোটকাটরার অবস্থান। ধারনা করা হয় ১৬৬২ অথবা ১৬৭১ সালে শায়েস্তা খাঁ এটি নির্মাণ করেন। বর্তমানে এটি বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেছে ।
রোজ গার্ডেন
রোজ গার্ডেন আজও দাঁঢ়িয়ে আছে পুরনো ঢাকার গোপীবাগ এলাকায়। তৎকালীন নব্য জমিদার ঋষিকেশ দাস বিশ শতকের তৃতীয় দশকে (সম্ভবত ১৯৩০ সালে) গড়ে তোলেন এ গার্ডেন। বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীর বাগান-বাড়ির আদলে নির্মিত হয়েছিল রোজ গার্ডেন। তৎকালীন উচ্চবিত্ত হিন্দু সমাজের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল বলধা জমিদারের বাড়ি। একদিন বিনা আমন্ত্রণে ঋষিকেশ গিয়েছিলেন বলধার এক জলসায়। কিন্তু ঋষিকেশ দাস সনাতনী ধর্মে নিম্নবর্ণ হওয়ায় তাকে সেখানে অপমাণিত হতে হয়। তারপরই নির্মাণ করেন রোজ গার্ডেন। রোজ গার্ডেনটি ছিল ২২ বিঘা জমির ওপর। তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের দুলর্ভ সব গোলাপ গাছে সুশোভিত করেছিলেন এ উদ্যানটি। বাগানের প্রধান গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পরে একটি শান বাঁধানো পুকুর। গেট, পুকুর ও বাগানে ইউরোপীয় স্থাপত্য শৈলিতে নির্মিত অনেকগুলো ভাস্কর্য ছিল। বাগানের পুরো সীমানাজুড়ে ছিল আম গাছের সারি ও মাঝখানে অবস্থিত কারুকার্য ম-িত দ্বি-তল এ ভবনটি।
রূপলাল হাউজ
রূপলাল হাউজ উনবিংশ শতকে নির্মিত একটি ভবন। এটি পুরানো ঢাকা এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর পারে ফরাসগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত। ভবনটি নির্মাণ করেন হিন্দু ব্যবসায়ী ভ্রাতৃদ্বয় রুপলাল দাস ও রঘুনাথ দাস। দ্বিতল এই ভবনের স্থাপত্য শৈলী অভিনব। ভবনটিতে ৫০টির অধিক কক্ষ রয়েছে, এবং কয়েকটি প্রশস্ত দরবার কক্ষ রয়েছে। এক সময় রূপলাল হাউজ মসলা ও সবজি ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যায়। তবে, বর্তমানে এটিকে অবৈধ দখলমুক্ত করে বাংলাদেশ সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে রাখা রয়েছে নামে মাত্র।
লালকুঠি
এটি নর্থব্রুক হল নামেও পরিচিত। বুড়িগঙ্গার পাড় ঘেঁষে ফরাশগঞ্জ মহল্লায় অবস্থিত। গোটা ইমারতটি লাল রঙে রঙিন বলে এর নাম হয়েছে লালকুঠি ১৯০৪ খ্রীস্টাব্দে ১৬ অক্টোবর ঢাকার নতুন রাজস্ব ও ডাক অফিস খোলার জন্য ওই দিনেই ঢাকার নবাব পরিবারের সদস্য খাজা মোহাম্মদ ইউসুফের উদ্যোগে নর্থব্রুক হলে একটি বড় সভা করা হয়। শহরের গণ্যমান্য মুসলমান ও ইউরোপিয়দের এতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সভায় ব্রিটিশ সরকারকে নতুন প্রদেশ গঠন ও ঢাকায় রাজধানী করার জন্য ধন্যবাদ ও সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। এ ধরনের নানা ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে এই নর্থব্রুক হল।
জিনজিরা প্রাসাদ
পুরান ঢাকার বড় কাটরার দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর অপর তীরে জিনজিরা প্রাসাদ অবস্থিত। মুঘল সুবাদার দ্বিতীয় ইব্রাহিম খান তাঁর প্রমোদ কেন্দ্র হিসেবে জিনজিরা প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর ঘসেটি বেগম, আমেনা বেগম, সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রী লুৎফুন্নেছা বেগম এবং তাঁর কন্যাকে জিনজিরা প্রাসাদে এনে বন্দী রাখা হয়। আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে শহর থেকে জিনজিরার মধ্যে চলাচলের জন্য একটি কাঠের পুল ছিল। প্রাসাদটির পূর্বাংশ তিনতলা সমান, মাঝ বরাবর প্রকা- প্রাসাদ তোরণ। তোরণ প্রাসাদকে দুই ভাগ করে অপর প্রান্তে খোলা চত্বরে মিশেছে। প্রাসাদ তোরণের পূর্বাংশেই ছিল সুড়ঙ্গপথ।
তারা মসজিদ
বিখ্যাত এই তারা মসজিদটি পুরান ঢাকার আর্মানিটোলায় অবস্থিত। মসজিটির সারা গায়ে রয়েছে শত শত ছোট বড় তারার কারুকাজ। সাদা সিমেন্টের ওপর চিনামাটির তারকাকৃতি টুকরো বসিয়ে করা হয়েছে এই তারকাসজ্জা। আঠারশ শতকে ঢাকার জমিদার মির্জা গোলাম মসজিদটি নির্মাণ করেন।
ঢাকেশ্বরী মন্দির
লালবাগ কেল্লা থেকে ৩০০ মিটার উত্তরপুবে এই সুন্দর মন্দিরের অবস্থান। ঢাকার সবচেয়ে প্রচীন মন্দির ঢাকেশ্বরী। এর নির্মাণকাল ও নামকরণ নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট বিতর্ক। কিংবদন্তি অনুসারে একবার রাজা বিজয় সেনের রানি লাঙ্গলবন্দে স্নানে গিয়েছিলেন। স্নান শেষে ফেরার পথে তার একটি পুত্রসন্তান জন্মে ছিল, ইতিহাসে যিনি বল্লাল সেন নামে পরিচিত। বল্লাল সেন সিংহাসনে আরোহণের পর নিজের জন্মস্থানকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য নির্মাণ করেছিলেন এই মন্দির।
আর্মেনীয় গির্জা
পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় এক সময় বিপুলসংখ্যক আর্মেনীয় নাগরিকের বসবাস ছিল। আর্মেনীয়দের বসবাসের কারণেই ওই এলাকার নামকরণ হয় আরমানিটোলা বা আর্মেনিয়ান স্ট্রিট। মূলত স¤্রাট আকবরের অনুমতি সাপেক্ষে আর্মেনীয়রা ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, বসতি স্থাপন ও গির্জা নির্মাণ করে। ব্যবসার কারণে এক সময় ঢাকায় আর্মেনীয়দের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তারা আরমানিটোলায় বসতি স্থাপন ও একটি ক্ষুদ্র গির্জা স্থপন করে প্রার্থনা করত এবং তাদের কারও মৃত্যু হলে তেজগাঁও রোমান ক্যাথলিক গির্জার পাশে মরদেহ সমাহিত করত। ১৭৮১ সালে একজন বিত্তবান আর্মেনীয় নিকোলাস পোগজ বেশ কয়েক বিঘা জমিতে ওই ক্ষুদ্র গির্জার স্থলে একটি বিশাল গির্জা নির্মাণ করেন। তিনি গির্জাটির নামকরণ করেন চার্চ অব দ্য রিজারেকশন।
বিউটি বোর্ডিং
ঐতিহাসিক এই নিদর্শনগুলোর তুলনায় পুরান ঢাকার বিউটি বোর্ডিংকে এখন হয়তো কিছুটা ফিকেই মনে হতে পারে। তবুও এই বোর্ডিংটির ইতিহাসের সাথে মিশে আছে আলাদা একটি আবেদন, আজ নাহয় ঘুরে আসা যাক বিউটি বোর্ডিং থেকে। কবি-সাহিত্যিকদের কাছে পুরনো ঢাকার বিউটি বোর্ডিং এক আড্ডার কেন্দ্রস্থল। বাংলাবাজারে বইয়ের মার্কেট পেরিয়ে শ্রীশচন্দ্র দাস লেনে ঢুকতেই চোখে পড়ে একটি জমিদার বাড়ি। এটির কোল ঘেঁষেই দোতলা একটি বাড়ি। ছোট লোহার গেট পেরোলেই ফুলের বাগান। বাগানের মাঝখানে দুর্বা ঘাসে মোড়ানো ফাঁকা জায়গা- আড্ডাস্থল। পাশেই অতিথিদের খাবারের ব্যবস্থা। হলদে-কালচে রঙের বাড়িটির এক কোনায় লেখা রয়েছে “বিউটি বোর্ডিং”। ১৯৪৯ সালের শেষের দিকে প্রহ্লাদ সাহা ও তার ভাই নলিনী মোহন সাহা তৎকালীন জমিদার সুধীর চন্দ্র দাসের কাছ থেকে ১১ কাঠা জমি নিয়ে তাতে গড়ে তোলেন এই বিউটি বোর্ডিং। নলিনী মোহনের বড় মেয়ে বিউটির নামেই এর নামকরণ করা হয়েছে। তখনকার সাহিত্য আড্ডার জন্য মুসলিম সুহৃদ সম্মিলনী, নবাববাড়ি, ঢাকা প্রকাশের কার্যালয়সহ অনেক জায়গা থাকলেও সবার পছন্দের জায়গা ছিল এই বিউটি বোর্ডিং। বাংলা সাহিত্যের অনেক দিকপালের পদচারণে এই বোর্ডিং ধন্য হয়েছে। সেসব ব্যক্তিত্ব নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিখ্যাত হয়েছেন।
এ ছাড়াও পুরান ঢাকায় খ্রিস্টান কবর স্থান,গৌড় মন্দির, স্বামীবাগ মন্দির,,বিনত বিবির মসজিদসহ আরো অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে যা পরিচর্যায় অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে এবং অনেক স্থাপনা দখল করে আছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হোটেল ও খাবার
৪০০ বছরের অধিক সময় ধরে ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকা মানেই সেরা আর বিখ্যাত খাবারের সমারোহ। সেই সব বিখ্যাত আর মুখরোচক খাবারের হোটেলগুলোর ঠিকানা পাঠকদের জন্য
নিরব হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট
১১৩/২ নাজিমুদ্দিন রোড, ঢাকা।
বিশেষ খাবার : মগজ ভাজা ও বিভিন্ন ধরনের ভর্তা-ভাজি।
হোটেল আল-রাজ্জাক
২৯/১ নর্থসাউথ রোড (বংশাল). ঢাকা।
বিশেষ খাবার: কাচ্চি, মোরগ পোলাও, কাবাব, গ্লাসি।
হাজীর বিরিয়ানি
৭০ কাজি আলাউদ্দিন রোড, নাজিরা বাজার, ঢাকা ১০০০।
বিশেষ খাবার : বিরিয়ানি বক্স ১৫০ টাকা।
ক্যান্ডেল লাইট রেস্টুরেন্ট
৮৩ নাজিমুদ্দিন রোড, ঢাকা।
বিশেষ খাবার : মাছ ৩৬০ টাকা। মিক্সড ভেজিটেবল ২৮০ টাকা। ফ্রাইড রাইস ২৪০ টাকা।
রয়্যাল হোটেল কাচ্চি
লালবাগ চৌরাস্তার মোড়।
বিশেষ খাবার : জাফ্রান বাদামের শরবত, চিকেন টিক্কা, লাবাঙ।
আফতাব হোটেল
৮৩ নাজিমুদ্দিন রোড, ঢাকা।
বিশেষ খাবার : বাসমতি চালের ভুনা খিচুড়ি, দাম ১শ’ টাকা। ইলিশ খিচুড়ি ১৫০ টাকা। রুই খিচুড়ি ১৫০।
শমসের আলীর ভুনা খিচুড়ি
বংশাল চৌরাস্তা মোড়।
বিশেষ খাবার : ভুনা খিচুড়ি।
মিয়াজি বিরিয়ানি
৩০/এ কাজী আলাউদ্দিন রোড, নাজিরা বাজার ঢাকা ১০০০।
বিশেষ খাবার: কাচ্চি বিরয়িানি, মোরগ পোলাও
বিসমিল্লাহ বটি কাবাব ঘর
৭/বি কাজী আলাউদ্দিন রোড ঢাকা ১০০০।
বিশেষ খাবার: খাসির কাবাব
মামুন বিরিয়ানি হাউস
৮৩ নাজিমুদ্দিন রোড, ঢাকা।
বিশেষ খাবার : তেহারি। আস্ত মোরগ দিয়ে বল (প্রতি মাসের ৪ তারিখ)। বিরিয়ানি দাম ৩শ’ টাকা।
লালবাগ ভাটের মসজিদের কাবাব বন
৩৪/এ লালবাগ রোড, ঢাকা।
বিশেষ খাবার : কাবাব বন।
কালাম’স কিচেন
৩৪/এ জনসন রোড, ঢাকা।
বিশেষ খাবার : ফ্রাইড রাইস, দাম ২২০ টাকা।
কাশ্মির কাচ্চি
৩৪/এ পাটুয়াটুলী, ঢাকা।
বিশেষ খাবার : কাচ্চি দাম ১২০ টাকা।
বুদ্ধুর পুরি
ডালপট্টি মোড় সুত্রাপুর, ঢাকা।
বিশেষ খাবার : পুরি দাম ২ ও ৪ টাকা।
বিউটির লাচ্ছি
৩০/এ জনসন রোড, ঢাকা।
বিশেষ খাবার : লাচ্ছি ও লেবুর শরবত।
কলকাতা কাচ্চি ঘর
১৪ আবুল হাসনাত রোড, সাতরওজা ঢাকা।
বিশেষ খাবার : বাসমতি চালের কাচ্চি, দাম ১২০ টাকা।
মাখন বিরিয়ানি
রায় সাহেব বাজার মোড়।
বিশেষ খাবার : বিরিয়ানি, দাম ১২০ টাকা।
আল্লার দান বিরিয়ানি
২২ ডিস্টিলারি রোড গেন্ডারিয়া, ঢাকা ১২০৪।
বিশেষ খাবার : বিরিয়ানি।
রহমানের কাবাব
২৮ ডিস্টিলারি রোড, গেন্ডারিয়া, ঢাকা।
বিশেষ খাবার : কাবাব।
কাশ্মির কাচ্চি
৩৪/এ পাটুয়াটুলি, ঢাকা।
বিশেষ খাবার : কাচ্চি, দাম ১২০ টাকা।
ঝুনুর পোলাও
১১ নারিন্দা রোড ঢাকা।
বিশেষ খাবার : পোলাও
সুলতানের চা
ভিক্টোরিয়া পার্ক, সদরঘাট, ঢাকা।
নুরানি শরবত
চকবাজার জামে মসজিদের নিচে
সোনা মিয়ার দই
৩৩/এ রজনি চৌধুরী রোড, গেন্ডারিয়া, ঢাকা।
বিশেষ খাবার : টক ও মিষ্টি দই।
বিউটি বোর্ডিং
১ শ্রীশ দাস লেন, বাংলাবাজার ঢাকা।
বিশেষ খাবার : সরষে ইলিশ, বিভিন্ন ধরনের সবজি ও মাছ।
/ এনই