• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ধানের শীষের প্রচারে তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী লিজা

প্রকাশ:  ১৯ জুলাই ২০১৮, ০২:৪১
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

ধানের শীষের পক্ষে ভোটের প্রচারে নেমেছেন তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী লায়লা সুলতানা লিজা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, দেশজুড়ে মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। অভিযান চলাকালেই রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের প্রচারে অবাধে অংশ নিচ্ছেন লিজা।

পুলিশের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকায় অতীতে তিনবার গ্রেফতার হয়েছেন লিজা। রাজশাহী মহানগরের বিভিন্ন থানায় সাতটি মামলার আসামি তিনি। ২০০৫ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়। মাদকের ছয় মামলার সবক'টি মামলায় লিজা এজাহারভুক্ত আসামি। এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিটও হয়েছে। ইয়াবার কারবারের অভিযোগে তিনটি, ফেনসিডিল ব্যবসার অভিযোগে দুটি এবং গাঁজা বিক্রির অভিযোগে রয়েছে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা। তিনি মহানগর ও জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। শুধু লিজা নন, তার স্বামী মতিউর রহমান, বোন জুথি ও শীলাসহ পুরো পরিবার মাদকের কারবারি। তাদের সবার নামেই রয়েছে একাধিক মামলা। তবে তার বোন জুথি ও শীলা পুলিশের আহ্বানে আত্মসমর্পণ করে মাদক ব্যবসা ছেড়ে এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। লিজা আত্মসমর্পণ করেননি।

বুধবার সকালে নগরীর দাশমাড়িয়ায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ভোটের প্রচারে অংশ নিতে দেখা যায় তাকে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, সাংগঠনিক সম্পাদক রহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সদস্য নাদিম মোস্তফা, নগর বিএনপির সভাপতি ও মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নেতৃত্বে ধানের শীষের পক্ষে ভোটের প্রচারণা চালানো হয়।

সরেজমিন দেখা যায়, এসব কেন্দ্রীয় নেতার পেছনের বুলবুলের পক্ষে ভোটের লিফলেট নিয়ে দাঁড়িয়ে প্রচারণা চালান লিজা। পরে নেতাদের পিছু পিছু লিফলেট বিতরণ করে ধানের শীষের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন তিনি।

নগর বিএনপির প্রচার সম্পাদক নাজমুল হক ডিকেন বলেন, 'লিজা একসময় রাজশাহী জেলা মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। তিনি বর্তমানে বিএনপির জেলা কমিটির সদস্য। মাদক ব্যবসায়ী হওয়ায় তাকে কেউ ভোটের প্রচারণায় ডাকেনি। তবুও প্রচারণা চালাতে যে যার মতো করেই আসছে। সামনে ভোট, তাই কাউকেই নিষেধ করা হচ্ছে না।'

লিজাকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, 'বারবার পুলিশ ধরলে আমি কী করব?।' তার দাবি, বিরোধী দলের রাজনীতি করার কারণেই তার বিরুদ্ধে মাদকের মামলা দিয়েছে পুলিশ। তিনি মাদক ব্যবসায়ী নন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তবে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে কোনো জবাব দেননি। ভোটের প্রচারে অংশ নেওয়ার বিষয়েও কথা বলতে রাজি হননি কোনো। রাজি হননি নিজের দলীয় পদ-পদবির পরিচয় বলতেও। উল্টো তার ফোন নম্বর কে দিয়েছে তার পরিচয় জানতে চান বারবার। একপর্যায়ে তিনি ফোনটি কেটে দিয়ে আর ধরেননি।

পুলিশের খাতায়, ৩৩ বছর বয়সী লায়লা সুলতানা লিজা তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। সর্বশেষ গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি তিনি গ্রেফতার হন। সেই সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে আহতও হন। সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন তিনি।

বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমান উল্লাহ বলেছেন, লিজার পুরো পরিবার মাদক ব্যবসায় যুক্ত। তার দুই বোনও একই কাজে যুক্ত ছিলেন। তারা মাদক ব্যবসা ছেড়েছেন। লিজা এখনও মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মাদকের ছয়টিসহ সাতটি মামলা রয়েছে। সব মামলাতেই তার বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়েছে।

রাজশাহী বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ভোটের প্রচারে রয়েছেন লিজা। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তার বিশেষ সখ্যও রয়েছে। তাদের সঙ্গে প্রচারে অংশ নিচ্ছেন প্রচারের আলোয় আসতে। বিতর্কিত নেতানেত্রীদের ভোটের প্রচার থেকে দূরে রাখার দলীয় সিদ্ধান্ত থাকলেও দলের একটি অংশের প্রশ্রয়ে তারা ভোটের প্রচারে নেমেছেন। এতে ভোট বৃদ্ধির চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতারা।

লিজার ভোটের প্রচারে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সভাপতি ও মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের প্রধান এজেন্ট তোফাজ্জল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে কিছু জানা নেই তার। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কিছু কিছু নেতা অভিযোগ করেন, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই দেখছি সন্ত্রাসী-মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি। লিজা মাদক থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত। সূত্রঃ সমকাল ।

ধানের শীষ,মাদক ব্যবসায়ী
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close