• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

‘সত্য বলতে গিয়ে তিনি হয়ে গেলেন জামাত!’

প্রকাশ:  ২১ জুলাই ২০১৮, ১৪:৫৪
মাহমুদ কামাল
আলী আর রাজী

টিউশনি শেষ করে ২০০৪ সালে নভেম্বর মাসের কোন এক রাতে ষোল শহর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ৮.৩০ মিনিটে ট্রেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্দেশ্য ছেড়ে যাবে।

কিছু দূরে আমার প্রিয় শিক্ষক জনাব আলী আর রাজী স্যারের মত কাকে যেন দেখা যাচ্ছে। আমি এগিয়ে গেলাম। সামনে যাওয়ার পর তিনি আমাকে বললেন কামাল আপনি কোথায় থেকে এলেন?

সম্পর্কিত খবর

    বললাম স্যার, অলক স্যারের বাসায় টিউশনি শেষ করে ক্যাম্পাসে ফিরছি। কামাল আমিও আপনার সঙ্গে ট্রেনে করে ক্যাম্পাসে যাব। যদিও ট্রেন একেবারে ছাত্র ছাত্রীদের জন্য নির্ধারিত।

    আমি স্যারের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ট্রেন আসার আগ পর্যন্ত স্যারের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি। কিন্তু স্যারের মধ্যে কেমন যেন একটু অস্থির অস্থির ভাব।

    ক্যাম্পাস তখন পুরোপুরি শিবিরের রাজত্ব। আমি আর স্যার ট্রেনে উঠে পাশা-পাশি বসলাম। স্যার বললেন, কামাল আমাকে এখন স্যার বলে সম্বোধন করবেন না।

    এমন ভাবে বসেন, যাতে আমাকে দেখা না যায়। কিছু একটা ঘটার সম্ভাবনা আছে কামাল। আমি অবাক হলাম স্যারের কথা শুনে। আবার ভয়ও পেতে শুরু করলাম।

    স্যার মাথায় একটি ক্যাপ পড়ে নিলেন। স্যারের সঙ্গে কথা শেষ হতে না হতেই চবি শিবিরের কিছু ক্যাডার অস্ত্র নিয়ে আমাদের বগিতে উঠে যায়।

    তারা প্রতিটি সিটে রাজী স্যারকে খুঁজতে শুরু করে। আমি স্যারের সঙ্গে মিশে হাত ধরে বসে থাকি, যাতে স্যারকে চিন্তে না পারে।

    তারা এখানে না পেয়ে অন্য বগিতে খুঁজতে যায়। স্যারকে বললাম- স্যার, যে কোন ভাবেই হোক ট্রেন ছাড়ার আগেই নেমে যেতে হবে। নইলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। স্যারকে লোকচক্ষুর অগোচরে ট্রেন থেকে নামিয়ে আনতে সক্ষম হই এবং দুজনই সে দিন জামাত শিবিরের হাত থেকে রক্ষা পাই।

    স্যার সারা জীবন স্বাধীনতার পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে কলমযুদ্ধ চালিয়েছেন। জামাত শিবিরের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার ও আপোষহীন এক বীর সৈনিক।

    যিনি ছাত্রলীগের কোনো ছেলে আঘাত পেলে রাতের পর রাত জেগে থেকে লেখনীযুদ্ধ চালিয়ে যেতেন।

    যিনি সর্বদায় অন্যায় আর অত্যাচারের বিরুদ্ধ কথনে কথনে মুখরিত করতেন পুরো ক্যাম্পাস। সত্য বলতে গিয়ে তিনি হয়ে গেলেন জামাত!

    দুর্দিনে যিনি ক্যাম্পাসে হাল ধরেছিলেন স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হয়ে, সুদিনে তাকে অপদস্থ হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়তে হলো। সাবাস বাংলাদেশ!

    (সহকারী শিক্ষক মাহমুদ কামালের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে)

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close