• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

আইডিবির আঞ্চলিক অফিস হচ্ছে ঢাকায়

প্রকাশ:  ২৩ জুলাই ২০১৮, ১১:৪৯
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

ছয় বছর ধরে চলতে থাকা টানাপড়েনের পর অবশেষে ঢাকায় একটি আঞ্চলিক অফিস খোলার অনুমতি পেয়েছে জেদ্দাভিত্তিক সংস্থা ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি)। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইডিবি ভবনের ১০ তলায় হবে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটির আঞ্চলিক অফিস। বাংলাদেশের পাশাপাশি মালদ্বীপ, চীন ও ভারতে ঋণপ্রক্রিয়ার দেখভাল করা হবে ঢাকা অফিস থেকে। চীন ও ভারত আইডিবির সদস্যরাষ্ট্র না হলেও ওই দুই দেশে সংস্থাটির ঋণ কার্যক্রম চলমান আছে।

আগামী ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর র‌্যাডিসন হোটেল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইডিবির আঞ্চলিক অফিসের উদ্বোধন করবেন। সঙ্গে থাকবেন সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট বন্দার বিন মোহাম্মদ বিন হামজা আসাদ আল হাজ্জার। অফিসটি চালু হলে বাংলাদেশের সঙ্গে আইডিবির সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হবে বলে আশা করছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে ঋণ অনুমোদন থেকে শুরু করে অর্থ ছাড় পর্যন্ত এখন যে সময় অপচয় হয়, তা কমে আসবে বলেও আশাবাদী কর্মকর্তারা।

সম্পর্কিত খবর

    অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইডিবি ভবনে এখন ‘ফিল্ড অফিসের’ মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে আইডিবি। যেখানে একজন পরিচালক আর দুজন কর্মকর্তা কর্মরত আছেন। এই অফিসের ন্যূনতম কোনো ক্ষমতা নেই। সব সিদ্ধান্ত আসে আইডিবির সদর দপ্তর থেকে। ঢাকায় আইডিবির অফিস না থাকার কারণে বাংলাদেশ সরকার ও আইডিবির দুই পক্ষের প্রতিনিয়ত নানা সমস্যায় পড়তে হয়। ঋণ অনুমোদন, দরপত্র মূল্যায়ন ও অনুমোদন এবং অর্থ ছাড় সব কিছুই হয় জেদ্দা থেকে। ফলে নির্ধারিত সময়ে কোনো প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে না। অনেক সময় অপচয় হচ্ছে। এসব প্রক্রিয়া সহজ করতে বাংলাদেশে একটি অফিস খুলতে ২০১২ সালে সরকারের কাছে আবেদন করে আইডিবি।

    অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, আবেদনের সময় সরকারের কাছে বেশ কিছু সুবিধা চায় আইডিবি। প্রস্তাবে বলা হয়, অফিস চালুর আগে দায়মুক্তি সুবিধা দিতে হবে আইডিবিকে; যেটা দেওয়া হয়েছে বিশ্বব্যাংক ও এডিবিকে। অর্থাৎ বাংলাদেশের নিজস্ব আইনে সরকার বা কোনো ব্যক্তি আন্তর্জাতিক সংস্থটির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে না। সংস্থাটিতে দায়িত্ব পালনের সময় কারো বিরুদ্ধেও মামলা করা যাবে না। এ ছাড়া সংস্থাটির আঞ্চলিক প্রধানের জন্য আমদানি করা গাড়ি, অন্য কর্মকর্তাদের আয়কর মওকুফ, কম্পিউটার ও অন্যান্য উপকরণ আমদানিতে শুল্কমুক্তসহ আরো বেশ কয়েকটি সুবিধা চায় সংস্থাটি। এসব সুবিধা দেওয়া না দেওয়া নিয়ে ছয় বছর ধরে দুই পক্ষের মধ্যে চলছিল টানাপড়েন। শেষ পর্যন্ত এসব সুবিধা দেওয়া হচ্ছে আইডিবিকে।

    জানতে চাইলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আযম বলেন, ‘আইডিবি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে একটি আঞ্চলিক অফিস চালুর বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়ে আসছে। ৯ সেপ্টেম্বর সেটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। সংস্থাটি যেসব সুবিধা চেয়েছে সেগুলো নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আলোচনা হয়েছে। তাদের সেসব সুবিধা দেওয়া হবে।’

    ইআরডি সূত্র বলছে, আইডিবি এরই মধ্যে ঢাকা অফিসের জন্য আঞ্চলিক ম্যানেজার নিয়োগ দিয়েছে। মালয়েশিয়ার নাগরিক নাসিস সোলায়মান, যিনি এখন জেদ্দায় আইডিবির সদর দপ্তরে কর্মরত আছেন, তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে আঞ্চলিক ম্যানেজার হিসেবে। আগামী মাসেই তিনি অফিস শুরু করবেন। ইআরডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইডিবিতে যেসব নিয়োগ হবে ৮০ শতাংশের ওপরে নিয়োগ দেওয়া হবে বাংলাদেশি নাগরিকদের। বাকি নিয়োগ হবে বিদেশি নাগরিক। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আইডিবি প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ জানিয়েছেন, ৮০ শতাংশের ওপরে নিয়োগ যাতে বাংলাদেশি নাগরিকদের দেওয়া হয়। আইডিবি প্রেসিডেন্ট অর্থমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন বলে জানিয়েছেন ইআরডির কর্মকর্তারা।

    এদিকে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ভাড়ায় আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলেও আইডিবির নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য দুই একর জমি লিজ দিয়েছে সরকার। আগারগাঁওয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উল্টো দিকে এই ভবন নির্মাণের জায়গা বরাদ্দ রাখা আছে। ভবনটি হবে ২০ তলা। এখন চলছে ভবনের নকশা নির্মাণের কাজ।

    অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৮ সেপ্টেম্বর তিন দিনের ঢাকা সফরে আসবেন আইডিবি প্রেসিডেন্ট। সফরকালীন সময়ে মিয়ানমার থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দেখতে যাবেন আইডিবি প্রেসিডেন্ট। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের জন্য সহযোগিতার ঘোষণাও আসতে পারে—এমন আভাস মিলেছে ইআরডির কর্মকর্তাদের কাছ থেকে। আইডিবির অর্থায়নে পরিচালিত কয়েকটি প্রকল্প দেখতে যাবেন আসাদ আল হাজ্জার। উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থার জন্য এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংক চার হাজার কোটি টাকা এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

    ইআরডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইডিবির নিজস্ব কর্মকর্তারা আয়কর মুক্ত থাকবেন। তবে যারা প্রকল্পের মাধ্যমে ঢুকবে, তারা এই সুবিধা পাবে না। এ ছাড়া আইডিবির কর্মকর্তাদের গাড়ি আমদানি ও অন্যান্য উপকরণ আমদানির সময় শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তবে গত আগস্টে বাংলাদেশ আসা প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গার বিষয়ে আইডিবি কিংবা সৌদি আরব এখন পর্যন্ত কোনো সহযোগিতার ঘোষণা না দেওয়ায় বিস্মিত সরকারের একাধিক নীতি-নির্ধারক। অবশ্য এবার আইডিবির প্রেসিডেন্টের সফরে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতার ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। ইআরডি সূত্র বলছে, তেল আমদানিসহ বিদ্যুৎ ও সড়ক খাতে আইডিবির এখন প্রায় ২০টি প্রকল্প চলমান। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে আইডিবি প্রায় ১০০ কোটি ডলারের মতো ঋণ দিচ্ছে বাংলাদেশকে। সূত্র: কালের কণ্ঠ

    /এসএম

    আইডিবি
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close