• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

যে কারণে ধরাশায়ী বুলবুল

প্রকাশ:  ০১ আগস্ট ২০১৮, ২০:৩১
রাজশাহী প্রতিনিধি
ফাইল ছবি

বিএনপি-জামায়াতের অন্যতম ঘাঁটি রাজশাহীতে ধানের শীষ প্রতীক পেয়েও বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছেন বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তার পরাজয়ের পেছনে তিনটি কারণকে দায়ী করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। সেগুলো হলো- ব্যাপক দলীয় কোন্দল, ব্যক্তি ইমেজের মারাত্মক ঘাটতি ও জামায়াতের নিষ্ক্রিয়তা

তবে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সিটি নির্বাচনে দলীয় মেয়রপ্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল তার পরাজয়ের জন্য শুধু পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের বৈরী তৎপরতা ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতমূলক পদক্ষেপকেই বড় কারণ মনে করছেন। যে কারণ দেখিয়ে তিনি নিজের ভোটটিও দেননি।

সম্পর্কিত খবর

    অন্যদিকে, উজ্জ্বল ব্যক্তি ইমেজ, বহুমাত্রিক নিরবচ্ছিন্ন গণসংযোগ ও নিবিড় প্রচার চালিয়ে ভোটারদের মন জয় করা ছাড়াও রাজশাহীর উন্নয়ন ইস্যুকে ভর করে আশাতীত জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি ১ লাখ ৬৫ হাজার ৯৬ ভোট পেয়েছেন, যা তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির বুলবুলের চেয়ে ৮৭ হাজার ৩৯৬ ভোট। বুলবুল ভোট পেয়েছেন ৭৭ হাজার ৭০০।

    বিএনপির নেতাকর্মীরা বলেন, বুলবুলের এই বড় পরাজয়ের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণটি হল- রাজশাহীতে দলের তীব্র আন্তঃকোন্দল। রাজশাহীতে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা রাসিকের সাবেক মেয়র ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু সমর্থকদের পুরোপুরি মাইনাস করে গত জানুয়ারিতে কেন্দ্র থেকে গঠন করেন রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি।

    এ দুটি কমিটিতে একচেটিয়াভাবে স্থান পান বুলবুল সমর্থকরা। দুটি কমিটি নিয়ে মাসাধিককাল রাজশাহীতে ক্ষোভ-বিক্ষোভ করেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা অতিবিতর্কিত ও দল বিচ্ছিন্ন নেতাদের বাদ দেয়ার দাবি জানিয়ে মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে তালাও ঝুলিয়ে দেন। বিতর্কিতদের দিয়ে কমিটি করার জন্য রাজশাহী বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকেই দায়ী করে আসছেন।

    তবে দলীয় নেতাকর্মীদের এ অভিযোগকে অস্বীকার করে বুলবুলের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও জেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু বলেন, দলের নেতাকর্মীদের ঠিকমতো মাঠে নামতে দেয়নি পুলিশ। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

    মহানগর বিএনপির এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, গণবিচ্ছিন্ন নেতাদের দিয়ে বিএনপি দুটি কমিটি করে রাজশাহীতে বিএনপির কিংবদন্তি নেতা মিজানুর রহমান মিনুকে একহাত দেখাতে চেয়েছিলেন বুলবুল। এ কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীরা বুলবুলের ওপর ভীষণভাবে নাখোশ ছিলেন।

    এবারের সিটি নির্বাচনে মিনু শুরু থেকেই বুলবুলের পক্ষে মাঠে নামলেও মিনু সমর্থক অধিকাংশ নেতাকর্মী ছিলেন পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়। অনেকে রাগ-ক্ষোভে ভোটও দিতে যাননি কেন্দ্রে। বুলবুলের পরাজয়ের এটি বড় একটি কারণ বলে তারা মনে করেন।

    দ্বিতীয় কারণ হল- ২০১৩ সালের জুনে মেয়র হওয়ার পর বুলবুল নিজেকে দলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। দলের ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারদের সিটি ভবনে ঢুকতেও দিতেন না বুলবুল। অন্যদিকে বহু কাজ তিনি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঠিকাদারদের দিয়ে করিয়েছেন, যাতে নিজ দলের ঠিকাদাররা গত ৫ বছরই সিটি ভবনে অবাঞ্ছিত হয়ে থেকেছেন। পলে এবারের নির্বাচনে বিএনপির প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরাও লিটনের পক্ষে পরোক্ষভাবে কাজও করেছেন।

    অন্যদিকে তৃতীয় কারণটি হল- গত ৫ বছরে বুলবুল নগরীর কোনো উন্নয়নই করতে পারেননি। আত্মপক্ষ সমর্থন করে বুলবুলের ভাষ্য হল- ক্ষমতাসীন দল তাকে ঠিকমতো মেয়রের চেয়ারেই বসতে দেয়নি। কিন্তু তার এই অজুহাত মানতে পারেননি রাজশাহীর সাধারণ ভোটাররা।

    এদিকে, লিটন তথা আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের এই ভূমিধস জয় রাজশাহীতে নির্বাচনের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করলেও দলটির নেতাকর্মীরা এটিকে অপ্রত্যাশিত নয় বলে মনে করছেন।

    বেসরকারি ফল ঘোষণার পর সোমবার গভীর রাতে লিটন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, রাজশাহীতে নৌকার এই বিজয় ঐতিহাসিক ও বিভিন্ন কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

    তিনি আরও বলেন, রাজশাহীর উন্নয়নকেই এবার বেছে নিয়েছেন নগরীর মানুষ, যার অঙ্গীকার তিনি গণসংযোগ আর প্রচারের প্রতিটি পদক্ষেপেই তুলে ধরেছেন। ‘চলো আবার বদলে দেই রাজশাহী’- এ স্লোগান লুফে নিয়েছেন রাজশাহী সব শ্রেণির মানুষ।

    প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের আগস্টের নির্বাচনে লিটন ৯৮ হাজার ৩৬০ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে বুলবুল পেয়েছিলেন ৭৪ হাজার ৫৫০ ভোট। একইভাবে ২০১৩ সালের জুনের নির্বাচনে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ১ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে লিটন পেয়েছিলেন ৮৩ হাজার ৭২৬ ভোট।

    এবারের নির্বাচনে লিটন পেয়েছেন ১ লাখ ৬৫ হাজার ৯৬ ভোট এবং বুলবুলের ভোট কমে হয়েছে ৭৭ হাজার ৭০০টি। তিনবার এই দুই প্রার্থী মুখোমুখি হয়ে দুবার লিটন ও একবার মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল মেয়র নির্বাচিত হন।

    -একে

    মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল,রাজশাহী সিটি নির্বাচন
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close