• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

সিলেট সিটির রাজনীতি: বিএনপি

নায়ক এখন আরিফুল

প্রকাশ:  ১৪ আগস্ট ২০১৮, ০৯:৫৭
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

দায়িত্বশীল পদে থাকা নেতা দলের নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া, তাঁকে নিয়ে নানা ঘটনা, নেতাকর্মীদের ওপর মামলা—সব মিলিয়ে ভোটের মাঠের সমীকরণ মোটেও সহজ ছিল না। তবু ভোটের আগে সিলেট বিএনপির নেতারা বলেছিলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে তাঁরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। এখান থেকেই বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে চায়। নানা নাটকীয়তার সে নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরীর হাতেই ওঠে ‘মেয়রের চাবি’। এই জয়কে দলটি সেই চ্যালেঞ্জ উতরে যাওয়া বলেই মনে করছে। স্থানীয় নেতাদের দাবি, এ জয় ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। নেতাকর্মীদের দারুণ চাঙ্গা করেছে, যা আগামী দিনগুলোতে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলায় উজ্জীবিত করবে। তবে দলীয় মেয়র প্রার্থী আরিফুল হকের বিজয়ের দিনে তাঁর বাসভবনের কাছাকাছি দলের প্রতিপক্ষ গ্রুপের হামলায় ছাত্রদল নেতা খুন হওয়ার ঘটনা সেই বিজয়কে ম্লান করে দিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। যে বিজয় দলের জন্য নিয়ামক হতে পারত, এ ঘটনায় তা বুমেরাং হচ্ছে কি না তাও দেখার বিষয়।

বিএনপির স্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। তাদের মতে, সিটি নির্বাচনে জয়ের পর রাতে দলের ছাত্রসংগঠনের নেতা খুনের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে দলে। তবে আরেক অংশ এ ঘটনার জন্য একটি ‘কুচক্রী’ মহলকে দায়ী করছে। তাদের কেউ কেউ বলছেন, বিজয়ের সৌন্দর্যকে নষ্ট করতে সরকার দলের ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে। যারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে তারা কোনোভাবেই দলের শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারে না। এ ঘটনা দলের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেলবে না বলেই মনে করেন তাঁরা।

সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের মৃত্যু এবং কেন্দ্রীয় নেতা এম ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর সিলেটের রাজনীতিতে বড় মাপের কোনো নেতার আবির্ভাব হয়নি। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক আমলা সমশের মবিন চেষ্টা করেও এখানে সুবিধা করতে পারেননি। এর পর থেকেই সিলেট বিএনপির রাজনীতি অনেকটা কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি দায়সারা পালন এবং দিবসকেন্দ্রিক হয়ে যায়। তবে গত বছর ঘটা করে সদস্য সংগ্রহের বছরব্যাপী কর্মসূচি আলাদা নজর কাড়ে। এর বাইরে অনেকটাই নিষ্প্রভ ছিল সিলেটে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর কার্যক্রম। তবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে দলের স্থানীয় শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে তোড়জোড় শুরু হয়। দলের কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরীর পাশাপাশি মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদীসহ হাফ ডজন নেতা মেয়র পদে দলের মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। তবে কেন্দ্রের নির্দেশ পাওয়ার পর নিজেদের গুটিয়ে নেন বদরুজ্জামান সেলিম ছাড়া অন্যরা। দলের নির্দেশ অমান্য করে সেলিম নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। তখন সেলিমকে ঘিরে জল কম ঘোলা হয়নি। আরিফুল হকের ঘনিষ্ঠজনদের অভিযোগ, সেলিমকে মাঠে রাখতে পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী খন্দকার মুক্তাদির আহমদ। তিনি আরিফকে বেকায়দায় ফেলতে এ কাজ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি চাইলেও নানা কারণে সেলিম তাঁর কথা শোনেননি। এতে উল্টো সেলিমের সঙ্গে মুক্তাদিরের দূরত্ব তৈরি হয়। যদিও কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে সেলিমও একেবারে শেষ মুহূর্তে নাটকীয়ভাবে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। এর পর থেকে বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবেই নিজেদের প্রার্থীর বিজয়ের মিশনে নামে। এ সময় দলের মহানগর সভাপতি নাসিম হোসাইন, জেলা সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শাহরিয়ার আহমদ চৌধুরীসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা যায়। মুক্তাদিরকেও তখন আরিফুল হকের পক্ষে মাঠে দেখা যায়। তবে মূল সংগঠন এক হয়ে কাজ করলেও দলটির অঙ্গসংগঠনগুলোকে ততটা সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। যদিও তখন থেকেই বিএনপির স্থানীয় নেতারা দাবি করছেন, ‘দল ঐক্যবদ্ধ। দলে অভ্যন্তরীণ কোনো বিরোধ নেই।’

গত ৩০ জুলাই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিনও বিএনপির স্থানীয় নেতাদের আরিফুল হকের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করতে দেখা গেছে। দুটি কেন্দ্রের ফল স্থগিত হয়ে যাওয়ায় আরিফুলকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়র হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়নি। কিন্তু জয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় তাঁকে নিয়ে দলের উচ্ছ্বাসও দেখা যায়। পরে গত ১১ আগস্ট স্থগিত কেন্দ্রের ভোটগ্রহণের দিনও একই চিত্র ছিল। মেয়র হিসেবে আরিফুল হককে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণার পর এদিন রাতেই তাঁর বাসার কাছাকাছি নিজ দলের প্রতিপক্ষ গ্রুপের হাতে খুন হন মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহপ্রচার সম্পাদক ফয়জুল হক রাজু। এ ঘটনা যেন বিএনপির বিজয় উৎসবে কালি ঢেলে দেয়। অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে দলটি। বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, নির্বাচনকালে বাহ্যিকভাবে দলকে ঐক্যবদ্ধ দেখালেও বাস্তবে কোন অবস্থায় আছে তা নিশ্চিত হতে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে মেয়র হিসেবে আরিফুলের বিজয়ের দিনে দলের ছাত্রসংগঠনের নেতা খুনের ঘটনা পুরো বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। এই ঘটনার রেশ কোন দিকে গড়ায় তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। এমনকি স্থানীয় নির্বাচনে এই বিজয় দলগতভাবে বিএনপিকে কতটা লাভবান করবে তা অনেকটাই নির্ভর করছে এর ওপর।

এ ব্যাপারে কথা বলতে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি। জেলার সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ এবং মহানগর সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম দেশের বাইরে থাকায় তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে কথা হয় সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে আরিফুল হকের জয় দলের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত ও আত্মবিশ্বাসী করেছে। আগামীতে এটি কর্মীদের অনুপ্রাণিত করবে।’ তিনি বলেন, ‘দলের মধ্যে কোনো অনৈক্য নেই। বিশেষ করে নির্বাচনী লড়াই এবং বিজয় দলকে আগের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ করেছে।’ বিজয়ের দিন দলের প্রতিপক্ষ গ্রুপের হাতে ছাত্রদল নেতা খুনের ঘটনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘মেয়রের বিজয়কে নষ্ট করতে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। বিজয়ের সৌন্দর্য নষ্ট করতে এবং দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে পরিকল্পিতভাবে এটি করা হয়েছে।’ প্রথমে একটি ‘কুচক্রী’ মহলের ইন্ধনে এটি সংঘটিত হয়েছে দাবি করলেও পরে সরাসরি আওয়ামী লীগের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘সরকার দলের ইন্ধনে এটি হয়েছে। যারা দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয় এমন কাজ করে তারা কোনোভাবেই দলের শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারে না।’ বিএনপি ঐক্যবদ্ধ আছে এবং থাকবে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা দুঃখজনক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে এর প্রভাব দলের ঐক্যে পড়বে না বলেই আমি মনে করি।’ সূত্র: কালের কণ্ঠ

/এসএম

সিলেট,আরিফুল হক চৌধুরী
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close