• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

রিক্সা ভাড়া আইন আছে ‍কিন্তু বাস্তবে প্রয়োগ নেই

প্রকাশ:  ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২০:১৫
ফেনী প্রতিনিধি

রিক্সা ভাড়া আদায় নিয়ে চালকদের সাথে গোলযোগ লেগেই রয়েছে। যাত্রীরা আপত্তি জানিয়েও সুবিধা করতে পারেন না। বাধ্য হয়ে তারা অতিরিক্ত ভাড়া পরিশোধ করেন। নিত্যদিনের এ চিত্র ফেনী পৌর এলাকায়। নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা চালকদের সাথে রাখা, রাতের বেলায় হারিকেন ও গায়ে নির্দিষ্ট পোষাক থাকার কথার কথা থাকলেও কোনটিই মানা হয় না।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ফেনী পৌরসভার তৎকালীন মেয়র নুরুল আবছার শহর এলাকার জন্য প্রথম রিক্সা ভাড়া নির্ধারণ করেন। পরবর্তীতে মেয়র নিজাম উদ্দিন হাজারী রিক্সা চালক-মালিকদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে ভাড়া পুন:নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়নের জন্য চালকদের সমাবেশ করেন। একই সমাবেশে তিনি চালকদের পোশাক প্রদান করেন।

তিনি নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত আদায় না করতে রিক্সা চালকদের কঠোর হুঁশিয়ারী করেন। এবং রিক্সা চালকদের প্রতিও কেউ অন্যায় করলে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। ওইসময় চালকদের জন্য নির্ধারিত পোষাকও বিতরণ করেন তিনি। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ভাড়ার তালিকা সম্বলিত বিল বোর্ড স্থাপন করা হয়। একইসাথে বিলি করা হয় ভাড়ার তালিকা সংবলিত হাজার হাজার লিফলেট। শুধু তাই নয় রিক্সা চালকদেরকে ভাড়ার তালিকা সঙ্গে রাখারও নির্দেশ দেয়া হয়। এতে শহরে রিক্সা চালক ও যাত্রীদের স্বস্থি ফিরে আসলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।

বর্তমান মেয়র হাজী আলাউদ্দিনের সময়ও বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আলোচনা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এনিয়ে প্রতিনিয়ত চালকদের সাথে যাত্রীদের বাকবিতন্ডা এমনকি হাতাহাতি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রাংক রোড থেকে মহিপাল ও পাশ্ববর্তী এলাকা ১২ টাকা, জেলা প্রশাসনের কার্যালয় ১০ টাকা, দাউদপুর ব্রীজ ১০ টাকা, জয়নাল হাজারী কলেজ ১৫ টাকা, বিজয়সিংহ দীঘি ২৫ টাকা, সদর হাসপাতাল ১৫ টাকা, পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট ২০ টাকা, পাঁচগাছিয়া বাজার ২০ টাকা, বিরিঞ্চি ও আশপাশের এলাকা ১৫ টাকা, সহদেবপুর-আলোকদিয়া ১৫ টাকা, পেট্টোবাংলা ও আশপাশের এলাকা ১২ টাকা, কালিপাল ও পাশ্ববর্তী এলাকা ১৫ টাকা, ফলেশ্বর ২০ টাকা সহ ট্রাংক রোড থেকে ৬৫ টি সহ শহরের ৮৩ স্থানের নাম উল্লেখ করে ভাড়ার তালিকা নির্ধারন করা হলেও সবকটি রুটেই দ্বিগুন কিংবা তার বেশি ভাড়া আদায় করা হয়। এছাড়া ঘন্টা প্রতি ৬০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ৫ টাকার নির্ধারিত ভাড়াও মানেনা কেউই। সর্বনিম্ন ১০টাকার ভাড়াও মানতে চাননা চালকরা। অনেক সময় তাদের দূর্ব্যবহারের শিকার হয়ে শিশু ও নারী যাত্রীরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। বিশেষ করে বেকায়দায় পড়েন স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা।

সাংস্কৃতিক সংগঠক জাহিদ হোসেন বাবলু বলেন, শহরে রিক্সা চালকরা একধরনের নৈরাজ্য চালাচ্ছে। যাত্রীরা বিভিন্ন সময়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কিংবা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন ফল হয়নি। বরং সম্মান রক্ষায় চালকদের অন্যায় আবদার মেনে নিতে বাধ্য হন বলে তিনি জানান।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানায়, জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি সহ জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভায় শহরে নির্ধারিত রিক্সা ভাড়া কার্যকরে বারবার সিদ্ধান্ত হলেও পৌরসভার উদাসীনতায় তা বাস্তবায়ন হয়নি। এসব সভায় সড়কের মাঝখানে রিক্সা চলাচল নিয়েও ব্যাপক আপত্তি উঠে।

ফেনী সদর উপজেলা ও পৌর রিক্সা মালিক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম জানান, পৌরসভার নির্ধারিত ভাড়া কার্যকরে চালকদের নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। রিক্সার নতুন লাইসেন্স পেতে পুরাতন লাইসেন্স জমা দেয়া হয়েছে। পৌরসভা সাথে নতুন লাইসেন্স পেলে নির্ধারিত ভাড়া কার্যকরে সুবিধা হবে বলে তার দাবী।

ফেনী পৌর রিক্সা মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হাশেম জানান, পৌরসভার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুনরায় তালিকা নির্ধারণ করা হবে। তবে কবে হবে এ ব্যাপারে তার জানা নেই।

পৌরসভার সড়ক বাতি পরিদর্শক আবদুল হালিম জানান, তারা নিজেরাও রিক্সা চালকদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন। আলাপ-আলোচনা ছাড়াই তারা বাড়তি ভাড়া আদায় করেন। মাঝে মধ্যে অভিযানও পরিচালনা করা হয়। এছাড়া রাতে হারিকেন ব্যবহারের নিয়মও তারা মানেন না।

জানতে চাইলে ফেনী পৌরসভার প্যানেল মেয়র আশ্রাফুল আলম গীটার জানান, লাইসেন্স, বাড়তি ভাড়া আদায়সহ আইন মানার জন্য বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে।

ওএফ

ভাড়া
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close