অন্তরার সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার গল্প
ঘটনার শুরুটা আগস্ট মাসের ১৭ তারিখে। রাজধানীর বনশ্রীর বাসা থেকে যাত্রাবাড়ীতে আত্মীয়ের বাসায় যাচ্ছিলেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী অন্তরা রহমান। যাত্রাবাড়ীতে রিক্সায় করে পার হচ্ছিলেন। এ সময় একজন ছিনতাইকারী তার হাতের ব্যাগটি নিয়ে দৌঁড় দেয়।
ঢাকার রাস্তায় ছিনতাই নতুন ঘটনা নয়। অনেকেই এসব ঘটনায় আর সামনে এগোতে চান না। কিন্তু ভয় না পেয়ে অন্তরা রহমানও সেই ছিনতাইকারীর পেছনে ধাওয়া করেন। কিছুদূর গিয়ে সেই ছিনতাইকারী একটি চলন্ত বাসে উঠে পড়লে অন্তরাও পেছন পেছন সেই বাসটিতে উঠে পড়েন।
সম্পর্কিত খবর
অন্তরা রহমান বলেন, যখন লোকটি আমার ব্যাগ আর মোবাইল নিয়ে দৌঁড় দেয় তখন আমি খেয়াল করেছি যে, সে কী রঙের কাপড় পড়েছে। হঠাৎ তাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছিলাম না, তখন আমি একটা বাসে উঠি, পুরো বাস ফাঁকা, পিছনে একটা লোক বসে আছে একই প্যান্ট, একই শার্ট পরা। আমি গিয়ে তার কলার ধরে উঠিয়ে দেখি সে আমার ব্যাগের উপর বসে আছে আর মোবাইলটা প্যান্টের ভেতরে লুকানো ছিল।
পরে আশেপাশের লোকজনের সহায়তায় ছিনতাইকারীকে পুলিশের হাতে তুলে দেন অন্তরা রহমান। তার এমন সাহসীকতার জন্য পুরস্কৃত করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
অন্তরা রহমানেরে এমন সাহসিকতার কারণে কর্মক্ষেত্রে, পরিবারে এবং সমাজে তার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গেছে। অন্তরা জানান, আমার বস আমাকে অনেক সম্মান করেছে, আমাকে গিফট করেছে তবে মা টেনশন করেছে আর ভাইয়া ভীষণ রাগ করেছে, কেন আমি ঝুঁকি নিয়ে এই কাজ করতে গেলাম।
এদিকে অপরিচিত লোকজনের কাছে সাহসী নারী হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছেন অন্তরা। একদিন অফিসে ঢোকার পথে দারোয়ান অন্তরাকে বলেন, তিনি অন্তরার ছবি ফেসবুকে দেখেছেন।
দারোয়ান বলেন, আপনি তো ছিনতাইকারী ধরেছেন, অনেক সাহসের কাজ করেছেন।
আরেকদিন এক অপরিচিত ব্যক্তি অনেক্ষণ ধরে অন্তরার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। পরে অন্তরা তাকে জিজ্ঞেস করলে ওই ব্যক্তি জানান যে, আপনাকে কোথায় যেন আমি দেখেছি।
‘কিছুক্ষণ পর বলে ওঠেন যে, ও আচ্ছা আমি তো আপনাকে একটা নিউজে দেখেছিলাম।’
অপরিচিত মানুষের কাছ থেকে এমন সাড়া পেয়ে অভিভূত অন্তরা রহমান। এমনকি বন্ধুরাও এখন কঠিন পরিস্থিতে পড়লে তার উপর নির্ভর করে।
আবার বন্ধুরা এই ঘটনা নিয়ে মজাও করতেও ছাড়েন না। বন্ধুরা বলেন, ওরে কিছু বলিস না, ছিনতকারী মারসে আর আমরা তো নস্যি। আবার কোন সমস্যা হলে বলে ওকে ডাক, অন্তরা একাই একশ।
অন্তরা রহমান মনে করেন, যেকোনো অন্যায়েরই প্রতিবাদ হওয়া উচিত। সামর্থ্য থাকলে প্রতিরোধ করা উচিত। তাই শুধু ছিনতাইকারী না, যারা রাস্তায় মেয়ে দেখলে উত্যক্ত করে তাদেরও বিরুদ্ধেও মেয়েদের সোচ্চার হওয়া দরকার। সূত্র: বিবিসি বাংলা।
/অ-ভি