• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

ভিখারিদের সঙ্গেও প্রতারণা, লোপাট ভিক্ষার টাকা!

প্রকাশ:  ০৯ নভেম্বর ২০১৮, ০৪:০১
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

সহায় সম্বলহীন মানুষ ওরা। সব হারিয়ে নগরীর নিউ ঝাউতলা, নালাপাড়া, সেগুনবাগান, আমবাগান, টাইগারপাস, ওয়্যারলেস, ডিজেল কলোনি, বিহারি কলোনির বস্তিতে অনাহারে অর্ধাহারে পরিবার নিয়ে টিকে আছে। এইসব বস্তিবাসীর আযের প্রধান উৎস হলো। ভিখারিদের এই ভিক্ষার টাকা লুটে নিয়েছে চট্টগ্রামের অর্গানাইজেশন অব সোস্যাল সার্ভিস অ্যান্ড এলিমিনেশন অব পভার্টি (ওসেপ) নামে ক্ষুদ্র ঋণদান ও আমানত সংগ্রহকারী নামের একটি প্রতিষ্ঠানট।

ভুক্তভোগীরা জানান, দ্বিগুণ অর্থ ফেরত দেয়ার কথা বলে বছর পাঁচেক আগে আমানতের অর্থ সংগ্রহ শুরু করে ওসেপ। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় একাধিক অফিস থাকলেও ওসেপ আমানত সংগ্রহ করত মূলত খুলশী এলাকার ভিক্ষুক, বস্তিবাসী ও টোকাইদের কাছ থেকে। শুধু খুলশী এলাকার বিভিন্ন বস্তিতেই প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক সংখ্যা ২৫ হাজারের মতো।

সম্পর্কিত খবর

    ওসেপ গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করত তিনভাবে— দৈনিক সর্বনিম্ন ১০ টাকা, সাপ্তাহিক সর্বনিম্ন ২০০ টাকা ও মাসিক সর্বনিম্ন ৬০০ টাকা হারে। দৈনিকভিত্তিতে যারা টাকা জমা রাখতেন, তাদের অধিকাংশই টোকাই, ভিক্ষুক ও বস্তিবাসী। সাপ্তাহিকভিত্তিতে টাকা জমা রাখতেন মূলত পোশাক শ্রমিকরা। ক্ষুদ্র দোকানি ও রাজমিস্ত্রির মতো পেশার লোকজন অর্থ রাখতেন মাসিকভিত্তিতে। দৈনিক ১০ টাকা হিসাবে ১৮ হাজার গ্রাহকের পাঁচ বছরে জমানো টাকার পরিমাণ ৩ কোটি ২৯ লাখ। সাপ্তাহিক ২০০ টাকা হিসাবে পাঁচ হাজার গ্রাহকের ওসেপের কাছে জমা হয় ২৪ কোটি টাকা, আর মাসিক ৬০০ টাকা হিসাবে দুই হাজার গ্রাহকের জমানো টাকা ৭ কোটি ২০ লাখ। ২৫ হাজার গ্রাহক সংখ্যা হিসাবে ওসেপ গ্রাহক থেকে ২০১৩-১৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

    ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, ওসেপ খুলশী এলাকার নিউ ঝাউতলা, নালাপাড়া, সেগুনবাগান, আমবাগান, টাইগারপাস, ওয়্যারলেস, ডিজেল কলোনি, বিহারি কলোনি, ছিন্নমূল কলোনির হাজার হাজার গ্রাহকের আমানত সংগ্রহ করছে ২০১৩ সাল থেকে। যদিও ২০১১ থেকে এনজিওটি ছিন্নমূল মানুষকে স্বাবলম্বী করে তুলতে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করে। ওসেপের গ্রাহক বইয়ে লেখা ‘ওসেপের গ্রাহক হব, নিজের জীবন নিজেই গড়বো’। গ্রাহক পাস বইয়ে লেখা আছে ‘স্বেচ্ছা জামানত প্রকল্প’ হিসেবে। যোগাযোগ করার জন্য দেয়া আছে দুটি টিঅ্যান্ডটি নম্বর। ওই নম্বরে ফোন করে কাউকে পাওয়া যায়নি। কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি অফিসে গিয়েও।

    এ অবস্থায় এক সপ্তাহ ধরে ওসেপের গ্রাহকরা আত্মসাত্কৃত টাকা উদ্ধারে পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে অভিযোগ জানিয়ে আসছে। রমেশ চন্দ্র দাশ নামে এক গ্রাহক প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন।

    এর সত্যতা নিশ্চিত করে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. নাসিরউদ্দিন বলেন, ওসেপ নামে একটি মাল্টিপারপাস প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করে গা-ঢাকা দিয়েছে। এ বিষয়ে রমেশ চন্দ্র দাশ নামে একজন গ্রাহক একটি মামলা করেছেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। মামলার সব আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

    লোপাট ভিক্ষার টাকা!
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close