শামীমের রিকশাওয়ালা থেকে অভিনেতা হওয়ার গল্প
রিকশাওয়ালা ছেলেটা রিকশা ছেড়ে চলে এলো নাটকের শুটিংয়ের সেটে। না, কোন পাসিং ক্যারেক্টারে অভিনয় করতে নয়। এলো প্রোডাকশন ম্যানেজার হয়ে। শুটিংয়ের কাজটা সে খুব উপভোগ করতে শুরু করলো। নিজের দায়িত্বের পাশাপাশি সেটের প্রত্যেকটা মানুষের প্রতি তার আলাদা যত্ন-আত্তি চোখে পড়ে তার। কোন আর্টিস্ট কখন ডায়াবেটিসের ইনসুলিন নেবেন, কতক্ষণ পর খাবার খাবেন সব দিকেই তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। প্রোডাকশন ম্যানেজার ছেলেটা যেন সকলেরই অভিভাবক। তার এই ভালোবাসা, কর্তব্যপরায়ণতার প্রতিদানও সে পেলো। অল্প দিনেই সকলের পছন্দের, ভালোবাসার মানুষে পরিণত হল সে।
রিকশাওয়ালা থেকে নাটকের প্রোডাকশন ম্যানেজার ছেলেটা হয়ে উঠলো সেটে বিপদের কাণ্ডারি। প্রপস ম্যানেজ হয় নাই, নো টেনশন। জেনারেটরের তেল ফুরিয়ে গেছে, নো প্রবলেম। গাড়ির চাকা ফেসে গেছে, আরে চিন্তা কী? শামীম আছে না?
সম্পর্কিত খবর
হ্যা, বলছিলাম অভিনেতা শামীম আহমেদের কথাই। তো, শুটিংয়ে সমস্যা যা-ই হোক, সমাধানের জন্য প্রোডাকশন ম্যানেজার শামীম হয়ে উঠলেন এক আস্থার নাম। সমস্যার তো অন্ত নেই শুটিংয়ে। একদিন জনপ্রিয় অভিনেত্রী, নাট্য নির্মাতা আফসানা মিমির নাটকের সেটে এমনই এক সমস্যা সমাধানে ডাক পড়লো শামীমের। নাটকের ‘লোকমান’ নামের চরিত্রে যার অভিনয়ের কথা দু’দিন শুটিং করার পরে সে লাপাত্তা। পরিচালকের যখন মাথায় হাত তখনই মনে এলো শামীমের নাম। আফসানা মিমি সঙ্গে সঙ্গে শামীমকে ডেকে বললেন, শামীম তুই লোকমান ক্যারেক্টারটা পড়েছিস?
শামীম বললেন, হ্যা, পড়ছি।
আফসানার মুখে নির্ভারতার হাসি ছড়িয়ে পড়লো। বললেন, তুই এই দুইটা সিন পড়ে রাখ, এই দুইটা তুই করবি।
প্রোডাকশন ম্যানেজের শামীমের বুক শুকিয়ে গেল। বুকের ভেতর থেকে ধ্বক ধ্বক শব্দ ভেসে এলো। অনেক বড় বড় অভিনেতাকে তিনি চোখের সামনে দেখেছেন। দেখে বুঝেছেন অভিনয় সহজ ব্যাপার নয়। কনফিডেন্সের ঘাটতি থাকলে দায়িত্ব নেয়া ঠিক নয়, শামীম তা জেনেন। তাই না করে দিলেন। কিন্তু পরিচালক ছাড়লেন না। সাহস দিলেন, অভয় দিলেন। অগত্যা ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন শামীম। তিনি জানেন, নিজেকে উজার করে না দিলে সাফল্য আসে না কিছুতেই। তাই যখন দাঁড়ালেন তখন মন-প্রাণ সপেই দাঁড়ালেন। প্রথম সংলাপ তিনি উচ্চারণ করলেন। ওকে, কাট। হাততালি আর হাততালি। তারপর সবটুকু ইতিহাস।
তখনই ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গিয়েছিল তিনি অভিনয়ই করবেন বাকি জীবন। জীবনের অভিজ্ঞতার কমতি নেই তাঁর। অভাব দেখেছেন, পকেটমার হয়েছেন, রিকশা চালিয়েছেন।জীবনের সেই সব অভিজ্ঞতা তিনি কাজে লাগাতে শুরু করলেন অভিনয়ে। অভিনয়ে সপে দিলেন মন। সততার সাথে, নিষ্ঠার সাথে। আর দর্শকের মন জয় করে পেতে শুরু করলেন ভালোবাসা।
শামীম মনে করেন, করুণাময় সৃস্টিকর্তা তাকে সুন্দর এই পথে নিয়ে এসেছে। তিনি পরিশ্রম করে খেতে পারছেন।সম্মানের সাথে বাঁচতে পারছেন এর চেয়ে আনন্দের কী আছে?
অতীতের কথা বলতে কোনো লজ্জা নেই বলে তিনি মনে করেন। কারণ এটা সত্য। সত্য লুকানো যায় না। বরং সত্য শুনে মানুষ অবাক হলেও সম্মান করে।
এক হাজারেরও বেশি নাটকে কাজ করেছেন শামীম আহমেদ। প্রায় ২৬টা চলচ্চিত্রেও তিনি অভিনয় করেছেন। আর যতদিন বাঁচবেন ততোদিন অভিনয়ের মাধ্যমে সবার ভালোবাসায় স্নাত হয়েই বাঁচতে চান শামীম আহমেদ।
/হাসনাত