• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

'হাসির রাজার' কাঁদিয়ে চলে যাবার দিন আজ'

প্রকাশ:  ১৩ জুলাই ২০১৮, ১৬:৪৪
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

‘হৃদয়’ আর ‘কাঁচ’ সমান ভঙ্গুর। মানুষকে কাঁদানো সহজ, কিন্তু হাসানো বড় কঠিন। জীবনের চলার পথে নিদারুন আঘাতে জর্জরিত হৃদয় হাসতে ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই যাপিত জীবনের দু:খভুলে কিছু মুখচ্ছবি দেখলে মুহূর্তেই হাসির ফুল ফোটে। নন্দিত কৌতুক অভিনেতা দিলদার তেমনি একজন হাসির জাদুকর।

তিনি ছিলেন সিনেমার দুঃখ ভুলানো মানুষ। কাহিনী দেখতে দেখতে কষ্ট-বেদনায় মন যখন আচ্ছন্ন হয়ে থাকতো তখনই তিনি হাজির হতেন হাসির সুবাস ছড়িয়ে।

সম্পর্কিত খবর

    বাস্তবতার দৈনন্দিন ঘানি টানা শেষে ক্লান্ত শরীরে সাধারণ দর্শক যখন তার অভিনয় দেখতেন, তখন তারা মুগ্ধ হতেন, প্রাণ খুলে হাসতেন, ভুলে যেতেন সারা দিনের সব কষ্ট। তার হাঁটা-চলা, বাচন ভঙ্গি, অভিনয়ের সাবলীলতার পরতে পরতে থাকতো আনন্দের ছড়াছড়ি।

    শুধু তাই নয়, তার অভিনীত চলচ্চিত্রের কাহিনীতে কিংবা নায়ক-নায়িকার অভিনয় দক্ষতায় ঘাটতি থাকলেও দর্শক সেটি দেখতে এতটুকু বিরক্ত হননি। এমনকি অনেক চলচ্চিত্রের শেষ দৃশ্যে তার সংলাপ দিয়েই কাহিনীর শেষ হওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছিল। আশি-নব্বই দশকের চলচ্চিত্রে তিনি আর কৌতুক হয়ে ওঠেছিলো সমার্থক।

    দিলদারের ছিল এক বর্ণাঢ্য অভিনয় জীবন।১৯৭২ সালে ‘কেন এমন হয়’ নামের চলচ্চিত্র দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু করেন দিলদার। আর পেছনে ফিরে তাকাননি তিনি। অভিনয় করেছেন: তুমি কি সেই (২০০৯),শান্ত কেন মাস্তান (১৯৯৮),আনন্দ অশ্রু (১৯৯৭),স্বপ্নের নায়ক (১৯৯৭),শুধু তুমি (১৯৯৭),বিচার হবে (১৯৯৬),প্রিয়জন (১৯৯৬),এই ঘর এই সংসার (১৯৯৬),স্বপ্নের পৃথিবী (১৯৯৬),দূর্জয় (১৯৯৬),অজান্তে (১৯৯৬),সুন্দর আলী জীবন সংসার (১৯৯৬),চাওয়া থেকে পাওয়া (১৯৯৬),কন্যাদান (১৯৯৫),অন্তরে অন্তরে (১৯৯৪),বিক্ষোভ (১৯৯৪),বেদের মেয়ে জোসনা (১৯৮৯),বীর পুরুষ (১৯৮৮),নাচনেওয়ালী,খাইরুন সুন্দরী,গুন্ডা নাম্বার ওয়ান (২০০০) সহ পাঁচ শতাধিক ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রে।

    দিলদারের জনপ্রিয়তা এতটাই তুঙ্গে ছিল যে, ১৯৯৮ সালে তাকে নায়ক করে নির্মাণ করা হয়েছিল ‘আব্দুল্লাহ’ নামে একটি চলচ্চিত্র। নূতনের বিপরীতে এই ছবিতে বাজিমাত করেছিলেন তিনি। দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো ছবিতে ঠাঁই পাওয়া গানগুলো।সেরা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে ২০০৩ সালে ‘তুমি শুধু আমার’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুবাদে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও লাভ করেন।

    অবশেষে ২০০৩ সালের ১৩ জুলাই ৫৮ বছর বয়সে তিনি জীবনের মায়া কাটিয়ে চিরদিনের মতো পৃথিবী ত্যাগ করেন। দেখতে দেখতে কেটে গেল ১৫টি বছর। মুছে গেছেন তিনি সবখান থেকে। নতুন প্রজন্মের দর্শকও তাকে চেনেন না খুব একটা। পারিববারিক গোরস্থানে রাজধানীর ডেমরার সানারপাড় শায়িত আছেন এই বরেণ্য অভিনেতার স্ত্রীর নাম রোকেয়া বেগম। রেখে গেছেন মাসুমা আক্তার ও জিনিয়া আফরোজ নামে দুই কন্যা।

    ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন বেশ বন্ধু বৎসল। অভিনেতা আনিছ, আমির, আফজাল শরীফ, অভিনেত্রী নাসরিন সহ একাধিক চলচ্চিত্র অভিনেতা তার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লোত হয়ে পড়েন।

    লেখক- গীতিকবি ও কন্ঠশিল্পি হাবীব মোস্তফা।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close