মুস্তাফিজ বলছিল, ভাই আর পারব না
মুস্তাফিজুর রহমানের তখন শেষ হয়েছে মাত্র ৫ ওভার। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে কাহিল অবস্থা। ডিহাইড্রেশনে ক্র্যাম্প করতে শুরু করেছে পায়ের পেশি। ওভার শেষে এই বাঁহাতি পেসার গিয়ে অধিনায়ককে বললেন, ‘ভাই আর পারব না’। মাশরাফি বিন মুর্তজার মাথায় হাত। মুস্তাফিজকে ঘিরেই তো সাজিয়ে রেখেছেন স্লগ ওভারের পরিকল্পনা। ম্যাচ জিততেই হবে। অধিনায়ক হাল ছাড়লেন না।সাথে লেগে থেকে মুস্তাফিজকে নানাভাবে উজ্জীবিত করে আদায় করে নিলেন ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স।
নাটকীয়ভাবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। শেষ ওভারে বলতে গেলে যাদু দেখিয়েছেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। ৬ বলে দরকার ছিল ৮ রান। উইকেটে ছিলেন সেট ব্যাটসম্যান সামিউল্লাহ শেনওয়ারি ও রশিদ খান। দুর্দান্ত শেষ ওভারে মোস্তাফিজ দিলেন ২ রান, লেগ বাই থেকে আসে আরও ২ রান। ৩ রানে জিতে এশিয়া কাপে টিকে রইল বাংলাদেশ।
সম্পর্কিত খবর
তবে একটা পর্যায়ে শেষ ওভার পর্যন্ত যাওয়ার অবস্থায় ছিলেন না মুস্তাফিজ। শরীর টানছিল না, মন মানছিল না। ৫ ওভারের পর থেকেই পায়ে করছিল ক্র্যাম্প। মাশরাফি তবু তার কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছেন আরও ৪ ওভার। এ দিন বল হাতে নিয়ে প্রথম বলেই মুস্তাফিজ নেন প্রথম উইকেট। প্রথম স্পেলের ৩ ওভার করার পর পরের দিকের জন্য তরতাজা রাখতে তাকে বিশ্রামে রাখেন অধিনায়ক। আবার বোলিংয়ে আনেন ৩৩ ওভারের পর। সেই স্পেলেই ২ ওভারের পর থেকে ক্র্যাম্প করতে থাকে পায়ে।
সেই প্রসঙ্গ টেনে মাশরাফি বলেন, ও ৫ ওভারের পর থেকেই বলছিল, ‘ভাই, আমি আর পারব না’। আমার তো মাথায় হাত! আজকে রুবেলও নেই। ম্যাচ তো জিততেই হবে, ওকে আমার লাগবেই। ওর ১০ ওভার তো হিসাব করা আমার। আমি বারবার ওকে বলেছি, পারতেই হবে। বলেছি নিজেকে পুশ করতে। চেষ্টা করেছি ছোট স্পেলে ওকে বোলিং করাতে।’
মাশরাফি আরো যোগ করেন,‘ ওর কাফ মাসলে টান লাগছিল। এফোর্ট দিতে পারছিল না, ইয়র্কার পারছিলই না শেষ দিকে। আমি বললাম যে, অন্তত রান আপে আস্তে আস্তে দৌড়ে গিয়ে হলেও কাটার দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে। চেষ্টা করেছি সাহস দিতে। তবে আমার কাজ তো ছিল স্রেফ বলা, আসল কাজ সে করেছে। এই অবস্থার মধ্যেও যেভাবে বোলিং করেছে, ওকে কৃতিত্ব দিতেই হবে।’ এর মাঝেই দেখা গেছে পায়ের স্ট্রেচিং করছেন মাঠে, সময় নিচ্ছেন, লড়ছেন নিজের সঙ্গে।
৪২ ওভার যখন শেষ হলো, মুস্তাফিজ ও সাকিব আল হাসানের তখন ৪টি করে ওভার বাকি। মাশরাফির পরিকল্পনা ছিল এমনটিই। কিন্তু মুস্তাফিজের পায়ে ক্র্যাম্প তো ছিলই, শিশির ও ঘাম মিলিয়ে বেকায়দায় ছিলেন সাকিবও। বল ঠিকভাবে গ্রিপই করতে পারছিলেন না। অভিষিক্ত নাজমুল ইসলাম অপুকে কঠিন চ্যালেঞ্জে ঠেলে দিতে চাননি। বাধ্য হয়ে অধিনায়ক নিজেও স্লগ ওভারের দায়িত্ব কিছুটা নেন। সাকিব ও মুস্তাফিজকে একটি করে ওভার থেকে মুক্তি দিয়ে ওই দুই ওভার করেন নিজে। স্লগ ওভারে বোলিং তার খুব শক্তির জায়গা নয়। একটি ছক্কা হজম করলেও ওই দুই ওভারে কেবল ১৩ রান দিয়ে শেষটা ভালোভাবেই করেছেন।
মাশরাফিও মাঠে যথেষ্ট ভুগেছেন। ডিহাইড্রেশন হয়েছিল। ক্র্যাম্পও হচ্ছিল। কিন্তু অসম্ভব মনের জোরে সে সবকে পাত্তাই দেননি মাশরাফি,‘ আমারও কষ্ট হচ্ছিল প্রচণ্ড। শরীর সাপোর্ট দিচ্ছিল না। কিন্তু আমি যদি নিজের এসব কথা বলি, অন্যরা আরও দমে যাবে। এজন্যই চেষ্টা করেছি ওদেরকে যত সাপোর্ট দেওয়া যায়। মাঠে শিশির ছিল, ঘাম তো দরদর করে ঝরছিল। হাতে বল গ্রিপ করাই অসম্ভব হয়ে পড়ছিল।
অনেকবার আমরা মাটিতে হাত ঘষেছি। লাভ বেশি হয়নি। সাকিবের কাজটা কঠিন হয়ে পড়ছিল। শিশির আর ঘামে ভিজে বল ব্যাটে যাচ্ছিল ভালোভাবে। আমার, মোস্তাফিজের অনেকগুলো কাটার গ্রিপ করেনি। অন্তত ৬টি কাটার গ্রিপ করেনি। শেষ দিকের ছক্কাটি খেলাম বল গ্রিপ করেনি বলেই। এরপরও শেষ পর্যন্ত ভালোয় শেষ করতে পেরেছি, এটাই আসল কথা।’
/এস কে