• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

মৌলভীবাজার-২

ভোটের মাঠে মুখোমুখি দল বদলানো সুলতান-শাহীন

প্রকাশ:  ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৯:১৮
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
ফাইল ছবি

কুলাউড়ার আপামর জনতার যথেষ্ট আস্থা ও নির্ভরশীলতার দুই নাম ‘সুলতান-শাহীন’। সাধারণ মানুষ তাদেরই বারবার নির্বাচিত করে প্রতিনিধি বানিয়েছেন মহান সংসদে। এ দুই সাবেক সাংসদকে ঘিরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সৃষ্টি হয়েছে বেশ আলোচনা-সমালোচনা।

মৌলভীবাজারের আপামর জনতার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এ দুই প্রার্থীর দিকে। আ’লীগ কিংবা বিএনপি, তৃণমূল থেকে কেন্দ্র অবধি প্রতিনিয়ত মৌলভীবাজার-২ আসনের খবরাখবর রাখছেন নেতা-কর্মীরা। গত ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে শুরু হয়েছে সুলতান-শাহীনের ভোটের মাঠের লড়াই।

সম্পর্কিত খবর

    প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আ’লীগ ও বিএনপির দলীয় প্রতীকে নির্বাচনী মাঠে আছেন এ হেভিওয়েট দুই নেতা। আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনী ফলাফল নিজের আয়ত্ত্বে নিতে বিরামহীন ভাবে চালাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। সকাল থেকে গভীর রাত অবধি সুলতান-শাহীনের চলছে প্রার্থীদের সাথে কুশল বিনিময়। ঝরাচ্ছেন প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি। প্রচার-প্রচারণার নানা ছবিতে কর্মী-সমর্থকদের ফেসবুক জুড়েও আছেন সুলতান-শাহীন।

    আলোচিত আসন মৌলভীবাজার-২ সংসদীয় এলাকায় বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নিজস্ব কোন প্রার্থী না থাকলেও কৌশলগত দিক দিয়ে ভোটের মাঠে আছেন হেভিওয়েট দুই নেতা। প্রথমধাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে সুলতান মনসুর নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে পাল্টে যায় এ আসনে সকল হিসেব নিকেশ। সুলতানের প্রতীক ধানের শীষ ঘোষণা হওয়াতে আরও বদলে যায় রাজনৈতিক অবস্থান। টনক নড়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। এ আসন থেকে ১১জন আ’লীগ নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও তাদের কাউকেই দেওয়া হয়নি। অনেক যাচাই-বাছাই শেষে সুলতানের সাথে ভোটের মাঠে টক্কর দিতে দ্বিতীয়ধাপে নৌকার কান্ডারি হিসেবে মহাজোটের মনোনীত প্রার্থী ঘোষণা করা হয় সাবেক এমপি এম এম শাহীনকে।

    একাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি এখানে না থাকলেও মূল লড়াই হবে সুলতানের ধানের শীষ এবং শাহীনের নৌকায়। ফলে বড় দুই দল না থাকলেও ২২ বছর পর তাদের কোনো একটি প্রতীকেরই জয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

    সুলতান মোহাম্মদ মনসুর নির্ভীক মুজিব সৈনিক, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। তার দেশপ্রেম, সাংগঠনিক দক্ষতা, বাগ্মিতা, শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ ও বিনয়াচরণে তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে তরতর করে এগিয়ে গেছেন। হয়েছেন ছাত্র রাজনীতির কুঁড়েঘর ডাকসুর ভিপি। ছাত্রলীগ থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নিজ নির্বাচনী এলাকা মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) থেকে সংসদ সদস্যও হয়েছেন। শুধুমাত্র সিলেট নয় সারাদেশে যিনি মুজিব আদর্শের সৈনিক হিসেবে পরিচিত। সেই সুলতান মনসুর রাজনীতির পালাবদলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে বলিষ্ঠ ভূমিকা ও অবদান রাখেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি লড়ছেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে। মাত্র এক দশকের ব্যবধানে নিজের দীর্ঘদিনের আদর্শকে পেছনে ফেলে দূরের প্রতীককে আপন করে নিয়েছেন। ধানের শীষের সুলতান মনসুর সিলেটবাসীর জন্য এক বিশাল চমকের নাম।

    একাদশ জাতীয় সংসদে মৌলভীবাজারসহ সিলেটবাসীর কাছে আরেক চমকের নাম এম এম শাহীন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে মহাজোটের মনোনীত প্রার্থী তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ছিলেন বিএনপি নেতা। এম এম শাহীন ১৯৯৬ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিকল্পধারায় যোগ দিয়ে প্রেসিডিয়াম সদস্য মনোনীত হন সাবেক সাংসদ শাহীন। পরে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে বাগিয়ে নিয়েছেন মৌলভীবাজার-২ আসন। মৌলভীবাজারসহ সিলেট জুড়েই বিএনপির রাজনীতি অঙ্গনের পরিচিত নাম এম এম শাহীন। যিনি কয়েকবার নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছেন। সেই শাহীন এবারই প্রথম নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে আলোচনায় উঠে এসেছেন। প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই চলছে ব্যাপক নৌকার প্রচারনা। শেখ হাসিনার উন্নয়ন ধরে রাখতে ভোটারদের কাছে নৌকায় ভোট চাচ্ছেন সাবেক এ সাংসদ।

    কুলাউড়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত মৌলভীবাজার-২ আসনের রয়েছেন ২ লাখ ৪১ হাজার ১০৮জন ভোটার। এর মধ্যে ৫০ হাজারেরও বেশি আছেন চা শ্রমিক। নির্বাচনে তাদের ভোটই মূল ফ্যাক্টর।

    বিগত ৩০ বছরের হিসাব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এই আসনে অনেক হেভিওয়েট প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এসেও জামানত হারিয়েছেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি যখন সরকার গঠন করে তখন প্রায় সারা দেশেই এগিয়ে ছিলেন ধানের শীষের প্রার্থীরা। কিন্তু এই আসনে প্রায় ৫ হাজার ভোট কম পেয়ে জামানত হারান ধানের শীষের প্রার্থী। আবার ২০০৮ সালে সারাদেশে জয় পেলেও মৌলভীবাজার-২ আসনে নৌকার প্রার্থী মাত্র ২ হাজার ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছিল।

    সর্বশেষ বড় দলের মধ্যে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সুলতান মনসুর নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেন। ১৯৯৬ থেকে ২০১৮ কেটে গেছে দীর্ঘ সময়। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও মৌলভীবাজার-২ আসনে নৌকা বা ধানের শীষের জয়ের দেখা মেলেনি।

    ২০০১ সালে এই আসনে বিএনপি থেকে ধানের শীষ না পেয়ে দলের বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করেন এম এম শাহীন। ১৯৯১ সালে যে বিএনপি জামানত হারায় ২০০১ এর নির্বাচনে তিনিই বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী সুলতান মনসুরকে হারিয়ে ফুটবল প্রতীক নিয়ে জয়ী হন। সে নির্বাচনেও জামানাত হারায় ধানের শীষ।

    আবার ২০০৮ এর নির্বাচনে মনোয়ন বঞ্চিত হন সুলতান মনসুর, সে নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হন জাতীয় পার্টির নবাব আলী আব্বাস। ওই নির্বাচনে জয় পায় জাতীয় পার্টি, আর নৌকা পায় মাত্র ২ হাজার ভোট। অবশ্য সেবার তৃণমূলের জনপ্রিয় প্রার্থী সুলতান মনসুর জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নামেন।

    পরে ২০১৪ সালে বিএনপি জোট নির্বাচন বর্জন করায় এই আসনে মহাজোট থেকে মনোনয়ন পায় জাতীয় পার্টি কিন্তু মহাজোটের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আওয়ামী লীগের আব্দুল মতিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন। ২০০৮ সালে ১ লাখ ৩৫ হাজার ভোট পেয়ে যে লাঙ্গল জয়লাভ করে আর নৌকা পায় ২ হাজার ভোট, সে লাঙ্গল ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হারে!

    শুধু তাই নয় এই আসনে ১৯৮৬ সালে মুসলিম লীগের ইউসুফ জিতেছিলেন বিপুল ভোটে কিন্তু এর পরের নির্বাচনে সেই একই প্রার্থী পান ১ হাজারের কম ভোট। ১৯৯১ সালে যে বিএনপি ৫ হাজারের কম ভোট পেয়ে জামানত হারায় ২০০১ সালে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও স্বতন্ত্র নির্বাচন করে জয়ী হন এম এম শাহীন।

    এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঘটেছে আরও নাটকীয় ঘটনা। সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মনসুর ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছেন। অন্যদিকে বিএনপির শাহিন বিকল্পধারায় যোগ দিয়ে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা নিয়ে মৌলভীবাজার-২ আসনে সরব। ফলে এ বছর আওয়ামী লীগ-বিএনপির জোটের প্রার্থী থাকলেও নেই দলীয় প্রার্থী।

    /পিবিডি/আরাফাত

    সুলতান মোহাম্মদ মনসুর,এম এম শাহীন
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close