• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

বগুড়ায় ৩৮ হাজার টন আলু অবিক্রিত

প্রকাশ:  ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৯:১৫
বগুড়া প্রতিনিধি

বগুড়ায় হিমাগারের রক্ষিত পুরাতন আলু পাইকারি বাজারে ৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কমদামে বিক্রি হলেও পুরাতন আলুর ক্রেতা নেই। রেকর্ড ছাড়িয়ে আলু উৎপাদন হলেও আবার গত ১০ বছরের মধ্যে রেকর্ড ছাড়িয়ে সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে আলু।

উৎপাদনের পর কম দাম নিয়েও রেকর্ড গড়েছে আলু। পুরাতন আলু পাইকারি বাজারে ৭ টাকা কেজি আর খুচরা বাজারে ১০ টাকা কেজি। আবার নতুন আলু পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২২ টাকা আর খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ টাকা। পুরাতন আলুর দাম কমে যাওয়ার কারণে হিমাগার থেকে আলু উত্তোলন করছে না আলু চাষি ও ব্যবসায়িরা। আলুর দাম কমে যাওয়ায় হিমাগার থেকে আলু উত্তোলন না করায় এখনও বগুড়ার ৩১টি হিমাগারে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ বস্তা বা প্রায় ৩৮ হাজার টন আলু অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে।

সম্পর্কিত খবর

    বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, যেকোনো বছরের চেয়ে বগুড়ায় গত বছর আলু উৎপাদনের সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। এর সাথে দুই দফা বন্যায় ধানের ক্ষতি হওয়ায় কৃষকরা আগাম আলুসহ সবজি চাষ করে। আগাম জাতের আলুসহ সকল সবজি বাজারে আসার ফলে হিমাগারে রক্ষিত পুরাতন আলুর চাহিদা কমে যাওয়ার ফলে মূল্যে ধস নেমে যায়।

    বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রতুল চন্দ্র সরকার জানান, গত বছর জেলায় ৬৭ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে ১৩ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছিল। এর আগে ২০১৫ সালে আলু উৎপাদন হয়েছিল ১২ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন। জেলার ৩১টি হিমাগারে আলু সংরক্ষনের ধারণ ক্ষমতা প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন। আলু উৎপাদনে গত বছর বগুড়ায় রেকর্ড গড়ে।

    বগুড়া কোল্ডস্টোরেজ ওনার্স এসোসিয়েশনের ভাইস চেয়্রাম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, বগুড়ার হিমাগার গুলোতে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ বস্তা পুরাতন আলু এখনও মজুদ আছে। প্রতিবস্তা আলুর (কার্ডিনাল ও গুটি পাকরি) হিমাগার ভাড়া পরিশোধ করতে গেলে লোকশানের ভয়ে আলু ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু তুলছে না। ফলে অবিক্রিত অবস্থায় সেসব আলু পড়ে রয়েছে। অথচ ইতোমধ্যেই বাজারে নতুন আলু উঠতে শুরু করেছে। ফলে পুরাতন আলুগুলো আর বাজারে যাবে বলে মনে হচ্ছে না।

    বগুড়া ভান্ডার হিমাগারের সত্ত্বাধিকারি তোফাজ্জাল হোসেন জানান, আলু ব্যবসায়ীরা আলু ক্রয়ের জন্য হিমাগার মালিকদের নিকট থেকে ঋণ নিয়ে আলু সংরক্ষণ করে। ব্যবসায়ীরা আলু কেনার জন্য হিমাগার মালিকদের নিকট থেকে প্রতি বস্তা আলুর বিপরীতে ৬শ’ টাকা ঋণ নেয়। ব্যবসায়ীরা গত বছর হাট থেকে পাকরি জাতের গুটি আলু ১৩শ’ এবং কার্ডিনাল ৮শ’ টাকা বস্তা কেনে। এর সাথে হিমাগার ভাড়া ছিল ৩০০ টাকা। এতে প্রতি বস্তা কার্ডিনাল আলু ১১শ’ টাকা এবং গুটি আলুর বস্তা প্রতি খরচ পড়েছে ১৬০০ টাকা। কিন্তু হিমাগার থেকে আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা মণ দরে। এই অবস্থায় হিমাগার থেকে আলু উত্তোলন করলে ব্যাসায়ীদের বিশাল অংকের টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। সেই ভয়ে তারা হিমাগার থেকে আলু উত্তোলন করছেন না। হিমাগার থেকে আলু এনে পাইকারিবাজারে ৫৫০ টাকা বস্তা (৮৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাজারে নতুন আলু উঠেছে। নতুন রোমান জাতের গুটি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে। দাম কম হওয়া সত্বেও হিমাগারের আলুর স্বাদ পরিবর্তনের (খেতে মিষ্টি) কারণে ক্রেতারা কোল্ডষ্টোরের আলু কিনতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

    বগুড়ার পাইকারি রাজাবাজারের আলু বিক্রেতারা জানান, হিমাগারের আলু শুধু মাত্র হোটেল রেষ্টুরেন্টে ব্যবহার করা হচ্ছে।

    বগুড়ার মহাস্থান হাটের আলু ব্যাবসায়ী আজগর আলী জানান, হিমাগারে আলু এখনো পড়ে আছে। গত বছরের আলু হিমাগারে রাখতে আলু ক্রয় সহ খরচ হয়েছে ১১০০ টাকা। সেই আলু এখন বাজারে বিক্রি করতে গেলে দাম হাঁকছে ৫৫০ টাকা। বস্তা প্রতি ৫৫০ টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। বেশিরভাগ হিমাগারে এখনো পুরাতন আলু রয়েছে।

    বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারে আলু বিক্রেতা রেজাউল করিম জানান, নতুন আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি এবং পুরাতন আলু ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে তারপরও পুরাতন আলুর ক্রেতা নেই।

    সারাদেশ

    অনুসন্ধান করুন
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close