• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে প্রমোদ ভ্রমন ইউএনও’র

প্রকাশ:  ১৮ মার্চ ২০১৮, ২১:১১
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮ তম জন্ম দিবস ও জাতীয় শিশু দিবসের শনিবারের সরকারি কর্মসূচি ফেলে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী সংগঠনের আমন্ত্রণে প্রমোদ বিহারে সপরিবারে কক্সবাজারে গিয়েছেন টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। তিনিসহ গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা ও জন-প্রতিনিধির অনুপস্থিতি আর অব্যবস্থাপনায় দিবসের কর্মসূচিতে ছিল হ-য-ব-র-ল অবস্থা।

রোববার উপজেলার অফিস পাড়ায় ছিল ছুটির আমেজ। অনেকে সেবা নিতে এসে ঘুরে গেছেন। এ ঘটনায় অভিযোগ করে ক্ষোভ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

সম্পর্কিত খবর

    এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এর অনুপস্থিতিতে রোববার অফিসপাড়ায় ছিল ছুটির আমেজ। সংবাদকর্মীরা সরেজমিনে গিয়ে এর সত্যতা পেয়েছেন। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ৭টি দপ্তরের প্রধান কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। ঢিলেঢালাভাবে অফিস করেছেন কয়েক কর্মকর্তা।

    সকাল ১০ টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার দাস, সমাজ সেবা কর্মকর্তা সানজিতা নাসরীন, কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এম. এ রশিদ, পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম, খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাইদুর রহমান, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা রথীন্দ্র নাথ চক্রবর্তী অফিসে ছিলেন না।

    তাদের অনেকের অফিসে ঝুলেছে তালা। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আমিনা আক্তার অফিসে এসেছেন দুপুরের খাবারের পর। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসের দুইজন পিয়নও ছিলেন অনুপস্থিত।

    সোহেল নামের এক পিয়ন অফিসে এসেছেন ১২ টা ২৫ মিনিটে। উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার দাসের দেখা মিলে নি বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। তার অফিস সহায়ক রফিকুল ইসলাম আড়াইটার সময় জানালেন, স্যার আজ আসেন কিনা।

    এদিকে, গত ১৭ মার্চের রাষ্ট্রীয় দিবস পালনের প্রস্তুতি সভায় স্থান নির্ধারিত হয়েছিল জেলা পরিষদের মধুপুর অডিটরিয়ামে। পৌর এলাকার অন্তত ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আনন্দ র‌্যালি শেষে গতবারের মতো অডিটরিয়ামে আলোচনায় যোগ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু র‌্যালি শেষে আলোচনা সভার স্থান নিয়ে বিপাকে পড়ে ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষার্থীগণ।

    পরে তারা খোঁজ খবর নিয়ে জানেন অনুষ্ঠানটি মধুপুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে পুন:নির্ধারিত হয়েছে। জেনে অনেকে র‌্যালি শেষ করে ফিরে যান।

    শহীদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মধুপুর কলেজের অল্প কিছু শিক্ষার্থী হল রুমে বসার সুযোগ পান। সাউন্ড সিস্টেম প্রস্তুত না থাকায় বিপত্তি ঘটে অনুষ্ঠান শুরু নিয়ে। আধ ঘন্টা পরে শুরু হলেও সেখানে অনুপস্থিত মধুপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। তবে অনুষ্ঠানে ছিলেন মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার শফি উদ্দিন মনি, সহ সভাপতি বাপ্পু সিদ্দিকী, সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভাইস চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা বেগম।

    খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি মধুপুর ট্রাক মালিক সমিতির আহবানে সপরিবারে তাদের কক্সবাজারে প্রমোদ বিহারে সঙ্গী হয়েছেন। ঢাকা থেকে বিমানে গন্তব্যে পৌছে রাত যাপন করেন সেখানকার এক ডাক বাংলোতে। আনন্দ যাত্রায় অংশগ্রহণকারী একজন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ আনন্দ যাত্রায় আছেন মধুপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ মধুপুরের অধিকাংশ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। গণমাধ্যমকর্মিদের ফোন রিসিভ না করায় ইউএনও’র বক্তব্য জানা যায়নি।

    এ ব্যাপারে সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. মাহবুবুল হক গণমাধ্যম কর্মিদের মোবাইলে জানান, ইউএনও স্যার ছুটিতে আছেন। আজ রোববার যে ৭ জন কর্মকর্তা অনুপস্থিত ছিলেন, তার তা জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলেও জানান তিনি।

    মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বাপ্পু সিদ্দিকী বলেন, তিনি যদি সত্যিই কক্সবাজার গিয়ে থাকেন। তাহলে অত্যন্ত লজ্জাজনক ব্যাপার এটি। তিনিতো ট্রাক মালিক নন। রাষ্ট্রিয় অনুষ্ঠান রেখে তার কক্সবাজারে প্রমোদ বিহারে স্ব-পরিবারে যাওয়াটা কোন ভাবেই কাম্য নয়। বিষয়টি আমরা জানতাম না। দলীয় নেতৃবৃন্দ বিষয়টি দেখবেন।

    তিনি আরো বলেন, আমি অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখি সভাপতিত্ব করছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি)। সেখানে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন। তার পরিবর্তে ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। তখন ইউএনও না থাকার বিষয়টি জানতে চাইলে এসিল্যান্ড জানান তিনি অসুস্থ। উপজেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চব্যক্তি হয়ে সত্যিই যদি তিনি এ ধরনের কাজ করে থাকেন তা কোন ভাবেই মেনে নেওয়ার মত নয়।

    উপজেলা নির্বাহী অফিসার রন্দ্রে নাথ বিশ্বাস কক্সবাজারে থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি রাষ্ট্রিয় অনুষ্ঠানটি শুরু করে দিয়ে এসেছি। আসলে আমার ছেলে অসুস্থ থাকায় তাকে ঢাকায় নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু এসময় কক্সবাজার আসার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় পরিবার নিয়ে এসেছি।

    এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক খান মোঃ নূরুল আমিন এর বক্তব্য নেওয়ার জন্য বার বার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি প্রথমে ফোন রিসিভ করে বিষয়টি জানতে পেরে কিছুক্ষণ পরে বক্তব্য দেওয়ার কথা জানিয়ে ফোন কেটে দেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আর ফোন রিসিভ করেন নি।

    ওএফ

    সারাদেশ

    অনুসন্ধান করুন
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close