সুন্দরগঞ্জে নাব্যতা হারিয়ে তিস্তা এখন মরা খাল

গাইবান্ধাধার সুন্দরগঞ্জের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ভরা তিস্তা নদী খননের অভাবে সহনশীলতা হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। এক সময়ের খরস্রত তিস্তা নদী নাব্যতা হারিয়ে ক্রমান্বয়ে পানি শূণ্য হয়ে পড়ায় পায়ে হেটে মানুষ এ পাড় থেকে ওপাড়ে পারাপার হচ্ছেন। এতে তিস্তা নদীকে অবলম্বন করে যে সকল পরিবার, মাঝি-মাল্লা, জেলে, চাষী জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল তারা এখন কর্মহীন হয়ে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন। অনেকেই জীবন-জীবিকা নির্বাহের তাগিদে বাপ-দাদার আদি পেশা ছেড়ে দিয়ে ক্ষেত খামারে কাজ করা ছাড়াও রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন জেলায় রিক্সা ভ্যান চালানোসহ বিভিন্ন রকমের শ্রম বিক্রি করছেন।

এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এ এলাকা মরু অঞ্চলে পরিণত হবে বলে পানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তিস্তা নদী খননের অভাবে সহনশীলতা হারিয়ে ফেলেছে। ফলে বর্ষাকালে পানি সহসায় নিস্কাশনের অভাবে প্রবল বন্যায় মানুষের বাড়ি-ঘর ভাসিয়ে নিয়ে যায়। আর খরা মৌসুমে তা পরিণত হয় মরা খালে। এতে নদী নির্ভর পরিবার গুলো কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে। এছাড়া তিস্তা পাড়ে কৃষক পরিবার গুলো নদী থেকে সেচ যন্ত্র ব্যবহার করে পানি উত্তোলণ করতে না পারায় কৃষি কাজ দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং কৃষি জমিতে বিকল্প পদ্ধতিতে সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে গিয়ে তারা কৃষি খাতে লোকসানের মুখ দেখছেন।

এ নিয়ে জেলে ফুল বাবু জানান, তিস্তা নদীতে পানি না থাকায় হামার বড় কষ্ট, মাছ-টাছ আর ধরতে পারছি না। তাই পরিবার পরিজন নিয়ে অতিকষ্টে জীবন পারি দিচ্ছি। তিস্তা পাড়ের রুহুল আমিন জানান, আশির দশকের দিকে তিস্তা নদী দিয়ে কাউনিয়া, হারাগাছ, কামারজানি, সুন্দরগঞ্জ, চিলমারী, জামালপুর, ইসলামপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নৌ-যোগে ব্যবসা-বাণিজ্য জম-জমাট ভাবে চলত। কিন্তু তিস্তার নাব্যতা হারিয়ে যাওয়ায় এবং পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায় হাজার হাজার নৌ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে।

এদিকে নদী বাঁচাও-দেশ বাঁচাও আন্দোলনের সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আহবায়ক ছাদেদুল ইসলাম দুলাল জানান, পরিবেশ, জীবও বৈচিত্র্য রক্ষা করাসহ তিস্তা নদীতে পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করণ ও ভারতের গজল ডোবা থেকে প্রস্তাবিত হরিপুর তিস্তা সেতু পর্যন্ত ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে জলাধার তৈরি হলে তিস্তা নদী তার পূর্বের জীবন ফিরে পাবে এবং এ অঞ্চলের মানুষ এর সুফল ভোগ করতে পারবে।

ওএফ