• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

৯ম শ্রেনীর ছাত্রকে পেটালেন প্রধান শিক্ষক

প্রকাশ:  ২০ মার্চ ২০১৮, ০০:৪৩ | আপডেট : ২০ মার্চ ২০১৮, ০৯:৩৩
রাজশাহী প্রতিনিধি

রাজশাহীর দুর্গাপুরের মাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনীর এক ছাত্রের উপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ওই ছাত্রকে দুর্গাপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোল্লা হাসান ইমাম ফারুক সুমন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও মাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও দুর্গাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

সম্পর্কিত খবর

    অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের সাজাহান আলীর পুত্র নাইম ইসলাম মাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনীর ছাত্র। গত ১৮ মার্চ তাকে বিদ্যালয় থেকে জোর পুর্বক ট্রান্সফার সার্টিফিকেট (টিসি) দেয়া হয়। কিন্তু নাইম ইসলাম টিসি নিতে অস্বীকার করে ওই বিদ্যালয়েই পড়তে চান। পরদিন সোমবার সকাল ৯টায় পুণরায় সে বিদ্যালয়ে গিয়ে নিজের শ্রেনী কক্ষে বসেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বাক্কার আলী হাজিরা খাতায় তার নাম উঠাননি। কেন তার নাম হাজিরা খাতায় উঠানো হয়নি জানতে চাইলে, সহকারী শিক্ষক বাক্কার আলী তাকে সহকারী প্রধান শিক্ষক ফাহিমা খাতুনের সাথে দেখা করতে বলেন।

    এসময় নাইম ইসলাম সহকারী প্রধান শিক্ষক ফাহিমা খাতুনের কাছে গেলে তাকে অফিস কক্ষে গিয়ে প্রধান শিক্ষক মোল্লা হাসান ফারুক ইমাম সুমনের সাথে দেখা করতে বলেন। অফিস কক্ষে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে দেখা করতেই সে কেন বিদ্যালয়ে এসেছে তার কারন জানতে চান প্রধান শিক্ষক সুমন। এক পর্যায়ে নাইম ইসলামের পিঠে ও বাম হাতে বেত্রাঘাত এবং বুকে কিল ঘুষি মারা শুরু করেন প্রধান শিক্ষক সুমন নিজেই।

    এসময় নাইম অফিস কক্ষের মেঝেতে পড়ে গেলে অফিস কক্ষের দরজা লাগিয়ে নাইমকে পা দিয়ে লাথি মারতে থাকেন প্রধান শিক্ষক সুমন। এক পর্যায়ে নাইম নিস্তেজ হয়ে পড়লে বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী ও পিয়ন মিলে নাইমকে পুণরায় দাঁড় করান। এরপর আবারো শুরু হয় হুমকী ধামকী ও নির্যাতন। নির্যাতনের এক পর্যায়ে তাদের হাত ফসকে পালিয়ে রক্ষা পায় নাইম। পরে তার পরিবারের লোকজন অন্য ছাত্রদের সহযোগীতায় নাইমকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করেন।

    নাইম ইসলামের সৎ মা রওশন আরা জানান, নাইমের মা মারা গেছে অনেক আগেই। কিন্তু নাইমকে তিনি নিজের ছেলের মতো করে মানুষ করছেন। সোমবার সকালে সে বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে গেলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুমন তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালান।

    বিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ক্যাবিনেটের প্রধান রিফাত হাসান জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুমন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও মাড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে অত্যন্ত দাপটের সাথে বিদ্যালয়ে তার সকল কাজকর্ম করে থাকেন। কারনে অকারনে বহু ছাত্রকে তিনি টিসি হাতে ধরিয়ে দিয়ে বিদ্যালয় থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। এর আগে দুই ছাত্রকে সে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছিল। একজন ছাত্রকে তিনি গত এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে দেননি। এ রকম অসংখ্য কার্যকলাপ করেছেন প্রধান শিক্ষক সুমন। তিনি নিজে একটি দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় অন্য দলের লোকজন কিংবা তাদের সন্তানদের প্রায় নির্যাতন করে থাকেন।

    রিফাত আরো জানান, বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে ওই শিক্ষকের ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছিলেন প্রধান শিক্ষক সুমন। পরে সেই টাকা নিজের পকেটেই পুরেন তিনি। এই খবরটি গোপন থাকলেও নাইম বিষয়টি প্রকাশ করে দিয়েছে এমন অভিযোগ তুলে ১৮ মার্চ তাকে জোরপূর্বক টিসি দেয়া হয়। কিন্তু টিসি নিয়ে বিদ্যালয় পরিত্যাগে অস্বীকৃতি জানালে সোমবার নাইমের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়।

    এদিকে, এ ঘটনায় আহত নাইম ইসলাম নিজেই বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, দুর্গাপুর থানার ওসি ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

    উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমীক সুপারভাইজার রাহেদুল ইসলাম অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ঢাকায় আছেন। তিনি অফিসে আসলেই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

    এ ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোল্লা হাসান ফারুক ইমাম সুমনের ব্যাক্তিগত মোবাইল ফোনের দুটি নম্বরে (০১৭১১৩৮৫০৭০/০১৯১৬৬৯০৬০৯) একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

    সারাদেশ

    অনুসন্ধান করুন
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close