সোনাগাজীর চর কৃষ্ণজয় প্রাথমিক বিদ্যালয়
কক্ষ সংকটের অভাবে মেঝেতে পরীক্ষা
ফেনীর সোনাগাজীতে চর কৃষ্ণজয় আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তারপরও কক্ষ সংকটের কারণে ভবনের মেঝেতে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। ২০১৩ সালে জাতীয় করন করার পর প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে গিয়ে ভবনের আশ্বাস দিলেও অধ্যবদি নতুন ভবন নির্মাণের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে স্থানীয় কয়েকজন লোক ৩৩ শতক জমি দান করে টিন আর বেড়া দিয়ে একটি ঘর নির্মাণ করে বিদ্যালয়টি চালু করা হয়। ছয়-সাত বছর পর টিনের ঘরটি জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। তখন শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা। পরে স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় ২০০২ সালে স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি বিল্ডিং ঘর নির্মিত হয়।
সম্পর্কিত খবর
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গত সোমবার সোনাগাজী উপজেলার ১০৮টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একযোগে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। কিন্তু চরকৃষ্ণজয় আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভবনের মেঝেতে বসে বাংলা বিষয়ের পরীক্ষা দিচ্ছে। শুধু তাই নয় বিদ্যালয়টির এমন অবস্থা যে শিক্ষকদের বসার জন্য কোন অফিস কক্ষ নেই। ভবনের সিড়ি রুমে বসে অফিসের কাজ করছেন। তিন কক্ষ বিশিষ্ট ভবনটি সমুদ্র উপকুলে হওয়ায় লোনার প্রভাবে ভবনের চাদের পলেস্তরা খচে পড়ছে। কক্ষগুলোর সামনে দেয়াল পেটে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে ভবনের দরজা-জানালা। মেঝেতে লম্বা ফাটল সৃষ্টি হওয়ায় শিক্ষকরা মাটি দিয়ে তা ভরাট করে শ্রেণি কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণি ছাত্র রাকিবুল ইসলাম তাদের বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন করে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করে।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রোমানা আক্তার জানায়, বৃষ্টি হলে ছাদ থেকে পানি পড়ে তাদের বই-খাতা নষ্ট হয়ে যায়। ভবন না থাকায় তারা ঠিক ভাবে লেখা-পড়া করতে পারছেনা।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক মো. শেখ ফরিদ কে জানান, বিদ্যালয়ের ভবনটি দিনদিন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে পড়া লেখা করছে। হত দরিদ্র এলাকা হওয়ায় এখানে কোন বড় লোকের ছেলে মেয়ে লেখাপড়া করে না। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ২শ’ ৫৫জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। যাদের বাবারা দিনমুজুরী করে সংসার চালান। গত বছর বিদ্যালয়টি থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থী সমাপনী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে শতভাগ পাশ করেছে। চলতি বছরও সমাপনী পরীক্ষায় ৪৫জন শিক্ষার্থী অংশ নিবে। কক্ষ সংকটের কারনে এক সাথে সব শ্রেণির ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া যায় না। তাই তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা মেঝেতে বসে পরীক্ষা দিয়েছে। তিনি বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন দিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও আমিরাবাদ ইউপি সদস্য গোলাম কিবরিয়া কে জানান, বিদ্যালয়ের ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় পাটল দেখা দিয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা পাটল দেখলে ভয় পেয়ে স্কুলে আসবে না। তাই ফাটলগুলো কাগজ ও মাটি দিয়ে ডেকে দিয়েছেন। তিনিও দ্রুত শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া মানোন্নয়নে এবং এলাকায় শিক্ষার হার বৃদ্ধি করার জন্য বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন নির্মান করে দেওয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানান।
সোনাগাজী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আনজুমান আরা জানান, সম্প্রতি তিনি বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে কক্ষ সংকট ও ভবনের দুরবস্থা দেখে নতুন একটি ভবন বরাদ্দের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ভাবে আবেদন দিয়েছেন।
ওএফ