সুন্দরগঞ্জে বেগুনি ধান নিয়ে চলছে গবেষণা
ধান ক্ষেত পাহাড়ায় গ্রাম পুলিশ
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় নতুন উদ্ভাবনী বেগুনি ধান নিয়ে চলছে পরীক্ষা, নিরিক্ষা, পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা। সম্পতি বিভিন্ন পত্রিকায় সুন্দরগঞ্জে বেগুনি ধানের চমক শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশের পর সারা দেশ ব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে কৃষি অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও গবেষক এবং দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে প্রতিদিন হাজারও নারী পুরুষ বেগুনি ধান দেখতে ভিড় করছেন।
দর্শকের ভিড় ঠেকাতে উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ হতে দুইজন উপ-সহকারি কৃষি অফিসার এবং দুইজন গ্রাম পুলিশকে ধানক্ষেত পাহাড়া দেওয়ার জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে। গত ১৫ এপ্রিল হতে ধানক্ষেত পাহাড়া দেয়া হচ্ছে।
সম্পর্কিত খবর
এছাড়া দর্শকরা যাতে ধানের পাতা, ডাল ও শিষ ছিঁড়ে নিয়ে যেতে না পারে সে জন্য ধান ক্ষেতের চারপাশে লাইলোনের জাল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, কৃষি অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কমপক্ষে ১০টি প্রতিনিধি দল এ পর্যন্ত বেগুনি ধানক্ষেত পরিদর্শন করেছেন। উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের সুবর্ণদহ গ্রামের কৃষাণী দুলালী বেওয়ার বহুল আলোচিত বেগুনি ধান ক্ষেত নিয়ে চলছে এখন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের কাজ।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাশেদুল ইসলাম জানান, ধান গাছের গড় উচ্চতা ৯০ সেন্টিমিটার। গোছা প্রতি ১৮ হতে ২৮টি শিষ রয়েছে। পাশাপাশি একটি শীষ ১৬০ হতে ৩১৩টি পর্যন্ত ধান পাওয়া গেছে।
রামজীবন ইউনিয়নের আইপিএম কৃষক ক্লাবের কৃষাণী দুলালী বেওয়া। তিনি ২০১৭ সালে গাজীপুর জেলার তার এক আত্নীয়র নিকট হতে নতুন উদ্ভাবনী ধারেন কথা শুনে সামন্য বীজ সংগ্রহ করে বোরো মৌসুমে মাত্র এক শতক জমিতে কৌতুহলবশত এই ধান চাষ করেন। চাষের পর ধানের রংয়ে ভিন্নতা দেখে তার কৌতুহল আরো বেড়ে যায় এবং উৎপাদিত ধান থেকে ২০১৮সালে বোরো মৌসুমে তিনি স্থানীয় উপসহকারি কৃষি অফিসারের পরামর্শে প্রতি গোছাতে একটি করে চারা দিয়ে প্রায় ২৫ শতক জমিতে ওই ধানের আবাদ করে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে ধান গাছটি দেখতে পুরোপুরিই বেগুনী। পেনিকেল বা শিষটি সাধারণ উফশী ধানের মতই। জীবনকাল অন্যান্য উফশী ধানের মতই ১৪০দিন হতে পারে। কৃষাণী দুলালী বেগম জানান, এই ধানের চারা রোপনের পর তিনি উপসহকারী কৃষি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করেন। কৃষি অফিসারগণ তাকে সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করেছে। পাশাপাশি সম্ভাব্য উৎপাদনকৃত সবটুকু ধান বীজ হিসেবে সংগ্রহে রাখার জন্য ইতোমধ্যেই বীজ সংরক্ষণের পাত্র প্রদান করেছে উপজেলা কৃষি অফিস।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাশেদুল ইসলাম আরও জানান, এই বেগুনী ধানকে চীনে নিষিদ্ধ ধান বলা হয়ে থাকে। প্রাচীন চীনের রাজ পরিবারের মধ্যেই কেবল এ ধানের ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল। এই ধানের ভাত খেলে দীর্ঘজীবী ও অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সুবিধা পাওয়া যায় বলে চীনারা বিশ্বাস করত। রাজ পরিবারের বাইরে এই ধানের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এ নিষেধাজ্ঞা অমান্যের সাজা ছিল মৃত্যুদন্ড। বিভিন্ন উৎসবে সম্রাট যোদ্ধাদের সম্মানে একত্রে এ ধানের ভাত খেয়ে থাকত।
আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে অতিরিক্ত মাত্রার এন্থোসায়ানিন ও এন্টিঅক্সিডেন্টের কারনে এ ধানের রং বেগুনী হয়। ব্লু-বেরির চেয়েও এই ধানে এন্টিঅক্সিডেন্টের পরিমান বেশি। এ ধান বার্ধক্য প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। এ ধানে প্রচুর ফাইবার ও ভিটামিন ই রয়েছে। নিয়মিত এ ধানের ভাত খেলে ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। তাছাড়া ডায়াবেটিস ও অ্যালজাইমার রোগের ঝুঁকি কমাতেও কার্যকর। এটি বাংলাদেশে চাষাবাদের তেমন নজির না থাকায় এ বিষয়ে গবেষণা আমাদের পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তায় গূরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে করেন কৃষি অফিসার।
ওএফ