চাঞ্চল্যকর হেরোইন মামলার প্রধান আসামিকে অব্যাহতি
প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের সাড়ে ৫ কেজি হেরোইন আটকের একটি চাঞ্চল্যকর মামলা নিয়ে রাজশাহীর আদালত অঙ্গনে তোলপাড় চলছে। এ মামলার প্রধান আসামি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শীর্ষ মাদক সম্রাট সাজেমান আলীকে অব্যাহতি দিয়ে গোদাগাড়ী থানা পুলিশ সম্প্রতি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে তা গ্রহণে আপত্তি জানান সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক। ১০ মে শুনানি শেষে আদালত মামলাটি পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে মাদক মামলার প্রধান আসামিকে অব্যাহতির বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠায় রাজশাহীর পুলিশ সুপার চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন।
জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ দফতরের পরীক্ষাগার থেকে পরস্পরবিরোধী দুটি প্রতিবেদন আসায় আদালতের সন্দেহ হয়েছে যে, মাদক পরীক্ষাগার ও পুলিশের সংশ্লিষ্টরা মিলে প্রধান আসামিকে অব্যাহতির ব্যবস্থা করতে পারে। এ কারণে মামলা পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তিনি বলেন, ‘র্যাব, মাদক নিয়ন্ত্রণ দফতর ও সিআইডি মিলে মোট তিনটি পরীক্ষাগারে মাদক পরীক্ষার নির্দেশনা থাকলেও পুলিশ দুটিতে নমুনা পাঠিয়ে প্রতিবেদন নিয়েছে। মূলত, এখানেই গলদ রয়েছে।
সম্পর্কিত খবর
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৮ অক্টোবর র্যাব-৫ এর অধীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের একটি দল রাজশাহী জেলার সীমান্তবর্তী গোদাগাড়ী থানার সারাংপুর নতুনপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৫ কেজি হেরোইনসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের হাকিমপুর টোকপাড়া গ্রামের আলাউদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে মাদক সম্রাট সাজেমান আলীকে গ্রেফতার করে। কিন্তু পালিয়ে যায় তার সহযোগী আলম নামে আরেক মাদক সম্রাট।
ওই দিন রাতেই উদ্ধারকৃত হেরোইন ও সাজেমান আলীকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানায় সোপর্দ করা হয়। এ ঘটনায় র্যাবের অভিযানিক দলের প্রধান ও উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) মোফাজ্জল হোসেন মৃধা বাদী হয়ে সাজেমান আলী ও আলমকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আলতাফ হোসেন। এরপর জব্দকৃত হেরোইন বা মাদকের রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের আওতাধীন পরীক্ষাগার গেন্ডারিয়া ও ঢাকার মহাখালীর সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে নমুনা পাঠানো হয়।
মামলাটির নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মাদক নিয়ন্ত্রণ দফতরের পরীক্ষাগার গেন্ডারিয়া থেকে গত বছরের ২৮ নভেম্বর গোদাগাড়ী থানার ওসি বরাবর পরীক্ষার প্রতিবেদন পাঠানো হয়। প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক দুলাল কৃঞ্চ সাহাসহ চার সদস্যের পরীক্ষক বোর্ডের স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ৬৩ দশমিক ৮৫ গ্রাম ওজনের হেরোইনের নমুনা পরীক্ষা করে ‘হেরোইন’ বা অন্য কোনো মাদকের উপাদানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এদিকে একই মাদকের পরীক্ষার জন্য একই সময়ে পৃথকভাবে সমপরিমাণ নমুনা পাঠানো হয় মহাখালীর সিআইডি পুলিশের ফরেনসিক পরীক্ষাগারে।
গত বছরের ১১ ডিসেম্বর রাজশাহীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর প্রেরিত হেরোইনের রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয় ‘কাগজের প্যাকেটে রক্ষিত বাদামি বর্ণের গুঁড়া পদার্থে হেরোইন পাওয়া যায়নি’। এরপরই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আলতাফ হোসেন ২৩ জানুয়ারি মামলার প্রধান আসামি সাজেমান আলী ও পলাতক আসামি আলমকে অব্যাহতির সুপারিশ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তবে আদালত তদন্ত কর্মকর্তার দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ না করে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রাজশাহীর পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন।
অন্যদিকে ১০ মে রাজশাহীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক শরিফুল ইসলাম মামলাটি পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। জানতে চাইলে রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল্লাহ বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ দফতরের পরীক্ষাগারের পরীক্ষকদের স্বাক্ষর করা দুটি প্রতিবেদন এক হলেও ফলাফল পরস্পরবিরোধী। আমাদের মনে হয়েছে দুটি প্রতিবেদনই এক জায়গা থেকে দেয়া হয়েছে। আর বিষয়টি নিয়ে আদালত সংশয় প্রকাশ করার পর তারা হেরোইন পাওয়া গেছে বলে আরেকটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। এখন পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে সম্পূরক চার্জশিট দেবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাদক নিয়ন্ত্রণ দফতরের প্রধান পরীক্ষক দুলাল কৃঞ্চ সাহা বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।