বরগুনা খাদ্যগুদামে দুই কর্মকর্তার মারামারি, গুদাম সিলগালা
বদলির পর পাঁচ মাস পার হলেও বরগুনা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মোশারেফ হোসেন দায়িত্ব হস্তান্তর করেননি নতুন যোগদান করা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে বিপ্লবের কাছে। এ নিয়ে দুজনের দ্বন্দ্ব শেষ পর্যন্ত গড়িয়েছে হাতাহাতি আর ধস্তাধস্তিতে। গত শনিবার (২৬ মে) দুই কর্মকর্তার ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে একজন আরেকজনকে কামড়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ রোববার খাদ্যগুদামটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
কামড়ে আহত আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, শনিবার সকালে নির্দিষ্ট শ্রমিকদের বাদ দিয়ে বহিরাগত শ্রমিকদের দিয়ে গত তিন মাসের ভিজিডির চাল বস্তাজাত করার সময় মাপে কম দিচ্ছিলেন বদলি হওয়া মোশারেফ হোসেন। এ সময় বাঁধা দিলে মামুনের ওপর চড়াও হন মোশারেফ। গালাগাল করে খাদ্যগুদাম থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। দুজনের বাগিবতন্ডার একপর্যায়ে কিল, ঘুষি, লাথি ও কামড়ে দিয়ে মামুনকে আহত করেন মোশারেফ।
সম্পর্কিত খবর
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৮ জানুয়ারি বরগুনা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মোশারেফ হোসেনকে বাকেরগঞ্জের কলসকাঠি খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়। আর বরগুনা খাদ্যগুদামে বদলি করা হয় আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে বিপ্লবকে। বদলির নির্দেশ পেয়ে গত ২১ জানুয়ারি বরগুনা খাদ্যগুদামে যোগদান করেন তিনি। কিন্তু এরপর পাঁচ মাস পার হলেও এখনো তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি মোশারেফ হোসেন।
এ বিষয়ে মোশারেফ হোসেন বলেন, গত শনিবার সকালে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের কাছে ভিজিডির চাল বিতরণের প্রস্তুতিকালে আব্দুল্লাহ আল মামুন তাঁকে বাধা দেন। তা ছাড়া ২ ও ৪ নম্বর গুদামে তালা লাগিয়ে রাখেন তিনি। এসব বিষয় নিয়ে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে মামুন তার বা হাতের একটি আঙুলে কামড় দিয়ে রক্তাক্ত করেন।
বদলির পর পাঁচ মাস পার হলেও এখনো কেন দায়িত্ব হস্তান্তর করেননি এমন প্রশ্নের জবাবে মোশারেফ হোসেন বলে, খাদ্য বিভাগের নীতিমালা অনুযায়ী বিভাগীয় লঘু দন্ডপ্রাপ্ত কোনো খাদ্য কর্মকর্তাকে দন্ড প্রদানের তারিখ থেকে তিন বছরের মধ্যে খাদ্যগুদামে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা যাবে না। অথচ আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে বিপ্লবের ক্ষেত্রেও তা করা হয়েছে।
এ কারণে এই বদলি আদেশের যথার্থতা না থাকায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ মহাপরিচালক, পরিচালক প্রশাসন, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আরসি ফুড) ও তিনজন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে (ডিসি ফুড) বিবাদী করে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল বরিশালে একটি অভিযোগ (১৫/১৮) দায়ের করেছেন তিনি। বর্তমানে ওই মামলা চলমান রয়েছে। মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি দায়িত্বভার হস্তান্তর করবেন না বলে জানান।
বরগুনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শহিদুল ইসলাম জানান, দুই কর্মকর্তার বিবাদের বিষয়টি তিনি অবগত হয়েছেন। এই অপ্রীতিকর ঘটনার পর বরিশাল বিভাগীয় আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা (আরসি ফুড) বরগুনা খাদ্যগুদামটি সিলগালা করার নির্দেশ দিয়েছেন। শনিবার সরকারি ছুটি থাকায় রোববার খাদ্যগুদামটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা (আরসি ফুড) রেজা মো. মহসিন বলেন, ‘ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে খাদ্যগুদামটি সিলগালা করার নির্দেশ দিয়েছি। বদলির পাঁচ মাস পরও মোশারেফ হোসেন দায়িত্ব হস্তান্তর না করায় বহুবার তাকে বলা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছে।’
ওএফ