ভূমি অধিগ্রহণ
জমি না থাকলেও ক্ষতিপূরণের চেক পেয়েছেন চারজন
রেল লাইনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদানের বিষয়ে আপত্তি নিষ্পত্তির বৈঠক চলাকালে অতিগোপনে চার ব্যক্তির নামে চেক দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার মাসুদ রানা ও অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. মুমিনুল হকের যোগসাজসে জমি না থাকা সত্তেও চার ব্যক্তি ইতিমধ্যেই ক্ষতিপূরণের টাকা তুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন এক ভূক্তভোগী। এমনকি ওই দুই কর্মকর্তার গোপন এসব তৎপরতার বিষয় জানতে পেরে ভূক্তভোগি লিখিত অভিযোগ নিয়ে দফায় দফায় যোগাযোগ করেছেন অতিরিক্তি জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) সাথে। উক্ত জমি নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন এবং অধিগ্রহনের টাকা গ্রহন ও প্রদানে আদালতের স্থিতাবস্থার আদেশের কথাও লিখিত আকারে জানানো হয় এডিসিকে।
সম্পর্কিত খবর
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দু’দফা সার্ভেয়ার মাসুদ রানা ও ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তাকে ভূক্তভোগির অভিযোগের বিষয়ে উভয় পক্ষের সাথে আলোচনা, সরেজমিন তদন্ত করে যাচাই-বাছাই এবং আদালতের মামলার বিষয় পর্যালোচনা করে আপত্তি নিষ্পত্তির নির্দেশ দিলেও তা আমলে নেননি ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা ও সার্ভেয়ার মাসুদ রানা। উল্টো ভূক্তভোগিকে বৈঠকের কথা বলে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে তথাকথিত বৈঠকের আয়োজন করেন সার্ভেয়ার। আর ওই বৈঠক চলাকালীন সময়েই আপত্তি নিষ্পত্তি না করে অতিগোপনে প্রতিপক্ষের চার ব্যক্তির নামে ক্ষতিপূরণের চেক ইস্যু করা হয়। আর এ ঘটনায় তোলপাড় চলছে ভূমি অধিগ্রহণ শাখায়। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজি মো. আবদুর রহমান বলেন, ‘আপত্তি নিষ্পত্তি না করেই চেক দেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। আর চেক দেয়া হলেও টাকা না তুলে থাকলে তা আটকে দেয়া হবে। এছাড়া বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ভূক্তভোগী কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়ার বাসিন্দা মো. রাশেদুল করিম জানান, কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের জানারঘোনা, হাজিপাড়া, চান্দেরপাড়াসহ কয়েকটি এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহন কার্যালয়ের সার্ভেয়ার মাসুদ রানা ও অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা মো. মুমিনুল হকের যোগসাজসে তাঁর স্বজনদের জমি আমান উল্লাহসহ চার ব্যক্তি নিজেদের জমি দেখিয়ে অধিগ্রহনের ক্ষতিপূরণের টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন।
ঘটনাটি জানতে পেরে তিনি গত ১৫ জানুয়ারি ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। উল্লেখিত জমি নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন আছে মর্মে অবহিত করে ৪ এপ্রিল জানানো হয় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককেও (রাজস্ব)। এরপরও ভূক্তভোগীর আপত্তি আমলে না নিয়ে এল.এ ০৪/১৬-১৭ নং মামলার ২৬০ ও ২৬১নং রোয়েদাদ এর চেক সম্পাদনের কাজ চলছে এমন খবরে গত ২৪ মে বিষয়টি লিখিত আকারে আবারও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে অবহিত করেন তিনি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিষয়টি সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নিয়ে আলোচনাপূর্বক সার্ভেয়ার মাসুদ রানাকে এবং বিষয়টি সরেজমিন যাচাইপূর্বক ব্যবস্থা নিতে ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। ২৭ মে সার্ভেয়ার মাসুদ রানা ভূক্তভোগিকে ফোন করে বৈঠক করার জন্য ডেকে নেন এবং সেখানে প্রতিপক্ষ কে ২ দিনের সময় নিয়ে ২৯ মে বৈঠক করার কথা বলেন।
যথারীতি ২৯ মে বিকাল ৪টায় অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা মো. মুমিনুল হকের উপস্থিতিতে উভয়পক্ষ আইনজীবীর মাধ্যমে বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবং লিখিতভাবে জবানবন্দি প্রদান করেন। এর পর এ বিষয়ে আরও একটি দিন ধার্য্য হবে বলে উল্লেখ করা হয়। ৩ জুন আদালতের সর্বশেষ আদেশসহ আবারও যোগাযোগ করা হয় সার্ভেয়ার মাসুদ রানার সাথে। তখন মাসুদ রানা আদালতের আদেশ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোন পক্ষকে চেক দেয়া হবে না বলে মৌখিকভাবে জানান।
কিন্তু এর দু’দিন পর ভূক্তভোগি জানতে পারেন তাকে না জানিয়েই অতিগোপনে ছৈয়দুল হক, আমান উল্লাহ, নজরুল হক ও ছেনুয়ারার নামে চেক ইস্যু করা হয়েছে। ভূক্তভোগি রাশেদুল করিমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নুর আহমদ বলেন, ‘আপত্তি’র শুনানী চলমান অবস্থায় গোপনে জমি না থাকা সত্তেও চারজনকে চেক দেয়া হয়েছে। অথচ শুনানীর জন্য আরও একটি দিন ধার্য্য করার কথা ছিল। এটি একটি প্রতারণা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কয়েকজন আইনজীবী ওই বিষয়টি নিয়ে শুনানী করেছি। আদালতের মামলার কাগজপত্র দিয়েছি। শুনানীর জন্য আগামী ধার্য্য দিনে আরও কাগজপত্র দেয়ার কথা। আর ওই অবস্থায় ‘ব্যাকডেইডে’ প্রতিপক্ষকে ক্ষতিপূরণের চেক দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় এখন আদালতই একমাত্র ভরসা।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সার্ভেয়ার মাসুদ রানা বলেন, ‘বৈঠক হয়েছিল। কিন্তু এর অনেক আগেই চারজনের নামে ক্ষতিপূরণের চেক ইস্যু হয়ে গেছে। এছাড়া অপরপক্ষের সেখানে জমির দাগ ছিল না।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা মো. মুমিনুল হক বলেন, ‘শুনানীর বিষয়টি সঠিক নয়। এ সংক্রান্ত কোন নোটিশ জারি করা হয়নি। এছাড়া তার দখল এবং মামলায় দাগও ছিল না। তাই আমরা অপরপক্ষকে চেক দিয়ে দিয়েছি।’