• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

টাকা ধার চেয়ে না পেয়েই শিশু রিফাতকে হত্যা

প্রকাশ:  ২৩ জুলাই ২০১৮, ১৮:৩৯ | আপডেট : ২৩ জুলাই ২০১৮, ১৮:৪৯
বগুড়া প্রতিনিধি

বগুড়ার শাজাহানপুরের চাঞ্চল্যকর রোমহর্ষক শিশু রিফাত (৮) অপহরণ ও খুন রহস্যের উদ্ঘাটনসহ আসামিদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত এক সপ্তাহ যাবত অভিযান চালিয়ে শাজাহানপুর থানা পুলিশ জেলার সিনিয়র অফিসারদের সহায়তায় এ মামলার রহস্য উন্মোচন করেছে। রিফাতের বাবা’র কাছে বার বার টাকা ধার চেয়ে না পেয়ে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, গত ১৫ জুলাই সন্ধ্যা থেকে গোহাইল ইউনিয়নের খাদাস বাজারের ব্যবসায়ী এনামুল হকের ৮ বছরের শিশুপুত্র রিফাত হারিয়ে যায়। তাকে পরিবারের সদস্য এবং গ্রামবাসী রাতভর খুঁজে না পেয়ে পরদিন ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে পরামর্শ করে তারা থানায় সাধারণ ডায়েরি করে। শাজাহানপুর থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে।

১৬ তারিখ সকাল নয়টার দিকে রিফাতের বাবা এনামুলের মোবাইল নম্বরে ফোন করে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করে বলা হয় টাকা নিয়ে জামাদার পুকুর বাসস্ট্যান্ডে আসতে এবং অবশ্যই পুলিশকে না জানাতে। পুলিশ বিষয়টা জানতে পেরে কৌশলী ভূমিকা গ্রহণ করে, কিন্তু কেউই টাকা নিতে আসেনি। ফোনটা কল করার পর থেকে বন্ধ ছিল। ১৮ তারিখ সকালে শিশু রিফাতের অর্ধগলিত মৃতদেহ পোয়ালগাছা ভদ্রাবতী নদীর সিংহবাড়ি ব্রিজের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়।

রিফাতের বাবা এনামুল বাদি হয়ে কয়েক জনের নাম দিয়ে মামলা করেন। এজাহারে তিনি জানান, তার গ্রামের কালাম তার কাছ থেকে অনেকদিন যাবত টাকা ধার চায়। টাকা না দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে সে এ কাজ করতে পারে। কালাম আগে থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক ছিল। পুলিশের অভিযানে আটক হলো সজীব (১৯) নামক এক অটোরিক্সাচালক। তাকে আটক করার পরই রহস্যের জট খুলতে শুরু করে। রিফাতের বাবা’র কাছে বার বার টাকা ধার চেয়ে না পেয়ে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে কালাম সহ তার সহযোগিরা।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রিক্সাচালক সজিব জানায়, ১৫ তারিখ সন্ধ্যায় কালাম এবং তার এক নিকটাত্মীয় সজীবের অটোরিক্সায় জমাদারপুকুর থেকে উঠে আরেকটু এগিয়ে আসার পর পাঁচ ফুল, মেহেদী এবং বায়েজিদ নামে তিনজন শিশু রিফাতকে নিয়ে উঠে। তারা শিশুটিকে পাখি দেখানোর কথা বলে বাজার থেকে কৌশলে বের করে নিয়ে আসে। আর একটু এগিয়ে মফিজুল নামে আরেকজন উঠে।

পিছন পিছন আরেকটি ব্যাটারি চালিত ভ্যানে ছিল জাহিদ, বোরহান, মাসুদ, সেলিম। তারা সবাই গিয়ে যে সিংহবাড়ি ব্রিজের নিচে লাশ পাওয়া যায় সেখানে গিয়ে নামে। তাদের নামিয়ে দিয়ে সজীব গাড়ি নিয়ে শেরপুরের গাড়িদহ চলে যায়। এর পর কালাম, তার সেই নিকটাত্মীয় এবং মফিজুল বাচ্চাটিকে নিয়ে নদীর ভিতর নামে। মফিজুল বাচ্চাটির পা ধরে কালাম হাত ধরে এবং আরেক জন ছেলেটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর ভদ্রবতী নদীর কচুরিপানার ভিতর লাশ ফেলে দিয়ে উপরে চলে আসে। সজীব গাড়িদহ থেকে ফিরে আসার সময় তাদের নিয়ে আবার খাদাস চলে আসে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী আরো জানান, এ ঘটনায় মোট ১১ জন জড়িত ছিল এর মধ্যে আটক হয়েছে ১০ জন। এ বিষয়ে আদালতে ৭ জন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে।

তদন্তকার্যে সার্বিক সহযোগিতা করেছে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের গোয়েন্দা শাখা, গোহাইল ইউপি চেয়ারম্যান আলী আতোয়ার ফজু এবং স্থানীয় জনগণ। এ মামলায় দ্রুততম সময়ে অভিযোগপত্র প্রদান করা হবে বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান। শাজাহানপুর থানার অফিসার ইনচার্জ জিয়া লতিফুল ইসলাম ও পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ সহ পুলিশ সদস্যরা অভিযানে অংশগ্রহণ করে।

ওএফ

রিফাত,হত্যা

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close