• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

সংবাদ সম্মেলনে স্বজনরা

প্রশাসনের কাছে ছাত্রদল নেতা রনির সন্ধান দাবী স্বজনদের

প্রকাশ:  ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২০:২০
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি (৩০)কে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তাকে অপহরণের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছে পরিবারের স্বজনরা।

রবিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনে নিখোঁজ রনির অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চয়তা দিতে প্রশাসন ও সরকারে কাছে দাবী জানান তারা।

জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রনি সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার মাসদাইর পাকাপুল এলাকার সড়ক নির্মান ঠিকাদার মোস্তফা কামালের ছেলে। তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানাসহ জেলার বিভিন্ন থানায় গাড়ি ভাংচুর, বিস্ফোরক দ্রব্য ও পুলিশের কাজে বাধা প্রদানসহ নানা অভিযোগে ১৩টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে কিছু মামলায় সে জামিনপ্রাপ্ত হয়েছে রয়েছে এবং বাকী মামলাগুলোতে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী বলে তার আইনজীবি আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রনির ছোট ভাই মহিবুর রহমান রানা। আরো উপস্থিত ছিলেন রনির মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি এডভোকেট সাখাওয়াৎ হোসেন খান, নিখোঁজ রনির বড় ভাই আবু সাঈদ রুবেল, দুই খালা রাশিদা আক্তার ও জাহানারা বেগম, মামাতো ভাই জাহাঙ্গীর আলম প্রধানসহ অন্যান্য নিকট আত্মীয়রা উপস্থিত ছিলেন।

রনির ছোট ভাই লিখিত মহিবুর রহমান রানা তার বক্তব্যে জানান, গতকাল (১৫ সেপ্টেম্বর) শনিবার সকাল দশটায় বাসা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যায়। রাত সাড়ে দশটায় অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি মোবাইল ফোনে তার ভাইকে জানায়, ঢাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী কয়েকজন লোক রনিকে কালো রঙের একটি হাইয়েস গাড়িতে তুলে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে রনি নিখোঁজ রয়েছে। কিন্তু ওই সময় কয়েকদফা তারা পরিচায় জানার চেষ্টা করলে সে পরিচয় বলেনি। এরপর থেকে ওই মোবাইল নম্বরটি বন্ধ থাকে। তবে মানসিক অস্থিরতার কারনে ওই মোবাইল নম্বরটি আর সংরক্ষণ করে রাখা হয়নি। এছাড়া আমার ভাই জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনির ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। পরিবারের স্বজনরা নিকট আত্মীয়দের বাড়িতে এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ কার্য্যালয়ে গিয়ে খোঁজ করেও এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রনির কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে আজ রবিবার বিকেলে ফতুল্লা থানায় একটি জিডির আবেদন করা হয়েছে বলে স্বজনরা জানান। তাদের অভিযোগ, এ পর্যন্ত থানা পুলিশ এ ব্যাপারে তাদেরকে কোনভাবেই সহায়তা করছে না। রনিকে আইন শৃংখলা বাহিনীর কেউ যদি নিয়ে থাকে তাহলে সেটা নিশ্চিত করে জানানোর জন্য প্রশাসনের কাছে দাবী জানান স্বজনরা।

রনির মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবি আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস জানান, রনির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অভিযোগে মামলা রয়েছে, যেগুলোর বাদি পুলিশ। পূর্বে ১১টি মামলা ছিল। চলতি মাসে নতুন করে আরো দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি জানান, রনির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত প্রতিটি মামলা রাজনৈতিক মামলা। যার কোন ভিত্তি নেই।

তিনি বলেন, আইনের বিধানে রয়েছে কাউকে যদি আইনশৃংখলা বাহিনী গ্রেফতার বা আটক করে তবে তাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে। কিন্তু রনিকে গ্রেফতারের পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলে তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি। যার কারনে তার পরিবার এখন পর্যন্ত তার কোন সন্ধান পায়নি। যদি আইনশৃংখলা বাহিনী তাকে নিয়ে থাকে তবে তাকে যেন দ্রতি আইনের মাধ্যমে আলতে সোপর্দ করার দাবি জানান। তিনি বলেন, একজন নাগরিক হারিয়ে যাবে নিখোজঁ ব্যক্তিকে খুজে বের করার দায়িত্ব সরকারের আইনশৃংখলা বাহিনীর।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন খান বলেন, ১৮ ঘন্টা পার হলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসন রনির অবস্থান সম্পর্কে কোন নিশ্চয়তা বা হদিস দিতে পারেনি। যেহেতু রনি ছাত্রদলের নেতা,আমরা ধারণা করছি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাকে আইন শৃংখলা বাহিনী নিয়ে গেছে।

তবে কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে কোন অভিযোগ না দিয়ে তিনি দাবী করেন, রনিকে কোন মামলায় গ্রেফতার করা হয়ে থাকলে সেটা নিশ্চিত করে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। তা না হয়ে থাকলে যেন পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তিনি বলেন, আমাদের কারো বিরুদ্ধে এখন কোন অভিযোগ নেই। কারন অভিযোগ দিয়ে আমরা ঝামেলা বাড়াতে চাই না। রনিকে অক্ষত অবস্থায় ফিরে ফেলেই আমাদের স্বস্তি ফিরে আসবে।

সংবাদ সম্মেলনে রনির পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজনরা ছাড়াও ছাত্রদলের বেশ কিছু কর্মী উপস্থিত ছিলেন। রনির বাবা মোস্তফা কামাল, মা রেহানা ইয়াসমীন ও বড় বোন মাহমুদা আক্তার রোজিনা পবিত্র হজ্ব পালন করতে সৌদি আরব গিয়ে বর্তমানে সেখানে অবস্থান করছেন। রনিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার খবর শোনার পর থেকে তারা বাবা মা সহ পরিবারের সবাই উদ্বিগ্ন অবস্থায় আছেন। কিছুক্ষণ পর পর তারা বাড়িতে ফোন করে রনির কোন সন্ধান পাওয়া গেল কিনা তা জানতে চাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম মঞ্জুর কাদের জাানান, মশিউর রহমান রনি নামের কাউকে ফতুল্লা থানা পুলিশ আটক করেনি। তার নিখোঁজের বিষয়ে থানায় কেউ কোন অভিযোগও করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নারায়ণগঞ্জ,ছাত্রদল নেতা

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close