আদমজী ইপিজেডের পোশাক শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার আদমজী ইপিজেডে অবস্থিত সোয়াদ ফ্যাশন নামে রপ্তানিমুখী একটি পোশাক কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে ও বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবিতে সড়ক অবরোধসহ বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা।
শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে ইপিজেড এলাকার প্রধান গেইটের সামনে কয়েক হাজার শ্রমিক অবস্থান নিয়ে ঢাকা-আদমজী সড়ক পাঁচ ঘন্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
সম্পর্কিত খবর
কারখানাটির শ্রমিকরা জানায়, প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক এই কারখানায় কর্মরত আছে। তবে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের প্রায় দুই মাসের বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস, ছুটি ও ফান্ডের টাকা পরিশোধ না করেই শুক্রবার কারখানা বন্ধের নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়।
সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগদান করতে এসে কারখানা বন্ধ দেখতে পায়। পরে তারা ইপিজেড কর্তৃপক্ষ বেপজাকে জানালেও এ ব্যাপারে শ্রমিকদের পক্ষে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এতে শ্রমিকরা ক্ষুদ্ধ হয়ে ঢাকা-আদমজী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। সকাল সাড়ে নয়টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত টানা পাঁচ ঘন্টা অবরোধের কারণে সড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও চাকুরীজীবিসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ গিয়ে মালিকপক্ষের সাথে কথা বলে শ্রমিকদের আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নেয়।
শ্রমিকদের অভিযোগ, পাওনা বেতন ভাতা পরিশোধ না করায় বাসা ভাড়াসহ সংসার চালানো নিয়ে তাদেরকে অনেক কষ্টে জীবন কাটাতে হচ্ছে। এছাড়া কারখানা বন্ধ করে দিলে নতুন করে চাকুরি পাওয়াও অনিশ্চিয়তার ব্যাপার। শ্রমিকরা অবিলম্বে তাদের পাওনা পরিশোধসহ কারখানা খুলে দেয়ার দাবি জানান। সোয়াদ ফেশনের কর্মরত শ্রমিক আরিফ হোসেন জানান, কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে না জানিয়ে হঠাৎ বন্ধ করে দেয়। শুনতে পেরেছি মালিক অন্যত্র কারাখানা বিক্রি করে দিয়েছে। একই সাথে বিগত ৪ বছরের ছুটি, ফান্ড ও রিজার্ভের টাকাও আমাদেরকে পরিশোধ করা হয়নি।
একই কারখানার শ্রমিক মোঃ সবুজ জানান, আমরা বেপজার কর্মকর্তাদেরকে বিষয়টি অবহিত করেছি। তারা বলছে, এ ব্যাপারে তারা কিছুই জানে না। অথচ এর আগে মালিক পক্ষ বেতন নিয়ে গড়িমশি করলে আমরা বেপজার কাছে গেলে কারখানা এই সমস্যা সমাধানের জন্য তারা আমাদের বিভিন্ন ধরনের আশ্বাস প্রদান করেন। কিন্তু আজ তারা বলছে কিছুই জানে না। কেন তাদের মুখে আজকে এমন দায়িত্বহীন কথা শোনা যাচ্ছে ?
মোসাঃ বেগম জানান, আমাদের সম্পূর্ণ পাওনা পরিশোধ না করে কেন কর্তৃপক্ষ হঠাৎ কাউকে কিছু না জানিয়ে কারাখানা বন্ধ করে দিলো? আমরা ঘর ভাড়া দেবো কোথা থেকে আর খাবার যোগাবো কোথা থেকে? এছাড়া আমরা এই মুহুর্তে কোথায় চাকুরি পাবো ? আমরা আমাদের পরিবার নিয়ে খুবই হতাশায় আছি। আমরা আমাদের সব পাওনা চাই। আমাদের ৪ মাস ১৩ দিনের সম্পূর্ণ বেতন দিতে হবে। এজন্য আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নজরুল ইসলাম জানান, কারখানাটির মালিকানা পরিবর্তনের কারণে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে শ্রমিকদের পাওনার বেতন পরিশোধের বিষয়ে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সাথে আলোচনা চলছে।
ইন্ড্রষ্ট্রিয়াল পুলিশের নারায়ণগঞ্জ জোনের পুলিশ সুপার মো: জাহিদুল ইসলাম জানান, মালিকানা পরিবর্তনের কারণে নতুন মালিক কৃর্তপক্ষ শনিবার সকাল থেকে কারখানার বন্ধ করে লে অফ ঘোষণা করে। কিন্তু শ্রমিকরা কাজে এসে কারাখানা বন্ধ দেখে এবং বকেয়া পাওনার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে। পরে ইন্ড্রষ্ট্রিয়াল পুলিশ মালিক পক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করে আগামী ২২ অক্টোবর বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ তুলে নেয়। তিনি জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে ইপিজেড এলাকায় এখনো অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
/পি.এস