• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

বিসিএস ফরম পূরণে ‘ভয়াবহ’ প্রতারণা, দোকানি আটক

প্রকাশ:  ১৫ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:৫১
রাবি প্রতিনিধি

৪০তম বিসিএস পরীক্ষার ফরম পূরণের নাম করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রায় দুই লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন একজন দোকানি। অধিক মুনাফা লাভের আশায় অন্তত সাড়ে ৩শ’ আবেদনকারীর ফরম পূরণে প্রতারণার আশ্রয় নেয় সে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে তাকে আটক করে রাজশাহীর মতিহার থানা পুলিশ।

আটককৃত ওই দোকানির নাম মোস্তফা আহমেদ মামুন। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরের ‘স্পন্দন কম্পিউটার’ দোকানের মালিক। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে সে তার দোকানে কম্পিউটার কম্পোজ, ফরম পূরণের কাজ করে আসছে।

সম্পর্কিত খবর

    জানা গেছে, বাংলাদেশ কর্ম কমিশন (পিএসসি) থেকে বিসিএস ফরম পূরণের ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেদনের জন্য ৭শ’ থেকে ৫শ’ টাকা এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ১শ’ থেকে ৫শ’ টাকা ফরমের দাম নির্ধারণ করা হয়। মোস্তফা আহমেদের দোকানে শিক্ষার্থীরা বিসিএস পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে আসলে ফরম পূরণে সময় লাগে জানিয়ে সে আবেদনকারীদের রোল/রেজিস্ট্রেশন নম্বর লিখে রেখে তাদেরকে পরদিন এসে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করে নিয়ে যেতে বলতেন।

    পরে মোস্তফা ওয়েবসাইটে শিক্ষার্থীদের যাবতীয় তথ্য প্রদানের আগে একটি নকল প্রবেশপত্র বের করে আবেদনকারীদেরকে দিয়ে দেয়। এরপর আবেদনকারীদের প্রতিবন্ধী কোটা দেখিয়ে ওয়েবসাইটে তাদের ফরম পূরণ করে দেয়। এতদিন এভাবে প্রতারণা করে সে প্রায় সাড়ে ৩শ’ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৬ শো করে টাকা হাতিয়ে নেয়।

    ভুক্তভোগী আবেদনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার (১৪ নভেম্বর) রাতে এক আবেদনকারী তার প্রবেশপত্রের সঙ্গে মোবাইলে আসা ‘ইউজার আইডি’ কোডটির মিল না পেয়ে বিষয়টি তার এক বন্ধুকে জানায়। পরে তারা বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তাদের একই সমস্যা দেখতে পান। পরে বৃহস্পতিবার সকালে তারা মোস্তফার স্পন্দন কম্পিউটারে এসে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে খবর দেন।

    মোস্তফার প্রতারণার বিষয়টি টের পেয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং তাকে চড়-থাপ্পর মারেন। এ সময় মোস্তফাকে আটক করে প্রক্টর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে প্রক্টর দপ্তরে একে একে ২শ’৫০ জনেরও অধিক ভুক্তভোগী আবেদনকারী জড়ো হয়। তাদের মধ্যে একজন মামুনের ওপর চড়াও হন এবং তাকে কিল-ঘুষি ও লাথি মারেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের শান্ত করেন।

    শিক্ষার্থীরা বিষয়টির সমাধান দাবি করলে প্রক্টর পিএসসির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে বিষয়টি বিবেচনা করে কর্ম কমিশন থেকে শিক্ষার্থীদেরকে পুনরায় আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়।

    প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করে মোস্তফা আহমেদ বলেন, ‘আমি ইচ্ছা করে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় এ কাজ করেছি। আমার ভুল হয়েছে। আমি সব টাকা ফিরিয়ে দেবো।’ পরে প্রক্টর দপ্তরে সে নগদ ৮০ হাজার টাকা ফেরত দেয় এবং বাকি টাকা শীঘ্রই পরিশোধ করবে বলে জানায়।

    বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘স্পন্দন কম্পিউটারের মালিক মোস্তফা যেটি করেছে, তা গুরুতর অপরাধ। বিষয়টি নজরে না আসলে অসংখ্য শিক্ষার্থী অনিশ্চয়তায় পড়ে যেতো। আমি পিএসসি-তে যোগাযোগ করেছি। তারা শিক্ষার্থীদের পুনরায় আবেদন করার সুযোগ দিয়েছে।’

    জানতে চাইলে মতিহার থানার ওসি শাহাদত হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোস্তফা আহমেদ নামে একজনকে প্রতারণার ঘটনায় আমাদের কাছে সোপর্দ করেছে। সে এখন থানায় আছে। তবে এখনও তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি। মামলা করলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেবো।’

    ওএফ

    সারাদেশ

    অনুসন্ধান করুন
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close