• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

আজ ১৯ ডিসেম্বর ভৈরব মুক্ত দিবস

প্রকাশ:  ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৯:৫৫
ভৈরব প্রতিনিধি

আজ ১৯ ডিসেম্বর ভৈরব মুক্ত দিবস। ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হলেও বন্দরনগরী ভৈরব তখনও হানাদার মুক্ত হয়নি। এর জন্য অপেক্ষা করতে হয় আরও তিন দিন। নানা কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে দিনটি আজ পালন করছে ভৈরববাসী ১৯৭১ সালের এ দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা মিত্র বাহিনীর সহায়তায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কবল থেকে ভৈরবকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে।

১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল ভৈরব উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের পানাউল্লারচর এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে খেয়াপারে অপেক্ষমান নিরস্ত্র-অসহায় পাঁচ শতাধিক সাধারণ মানুষকে ব্রাশ ফায়ারে হত্যার মধ্যদিয়ে ভৈরবের দখল নেয় পাকহানাদার বাহিনী। ১৪ এপ্রিলের পর থেকে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশিয় দোসররা কৌশলগত কারণে ভৈরবে শক্ত অবস্থান ধরে রাখে মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাস। ৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিক থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানী বাহিনী মুক্তিবাহিনীর কাছে পরাজিত হয়ে পিছু হঠতে থাকে। সে সময় ভৈরব পৌর এলাকার ভৈরব বাজার, রেলওয়ে হাই স্কুল, রেলওয়ে স্টেশন, জব্বার জুট মিল ছিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর শক্তঘাঁটি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের পর আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পরাজিত পাকবাহিনীর সদস্যরা পিছু হটে ভৈরবে এসে অবন্থান নেয়। ফলে জনবল ও অস্ত্রশস্ত্রে ভৈরবে পাকবাহিনীর শক্তি বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। ১০ ডিসেম্বর পাকহানাদার বাহিনী পূর্বদিক ব্রাহ্মণবাড়িয়া-আশুগঞ্জ থেকে এগিয়ে আসা মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর গতিরোধ করতে ভৈরবে অবস্থিত ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথের মেঘনা নদীর উপর নির্মিত ভৈরব রেলওয়ে সেতু শক্তিশালী ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়।

ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী রাজধানী ঢাকার দিকে দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকে। রাজধানীর দিকে যাওয়ার পথে একে একে বিভিন্ন এলাকা পাকহানাদার বাহিনীর দখলমুক্ত হয়। কিন্তু ভৈরবে পাকবাহিনীর খুবই শক্তিশালী ঘাটি থাকায়, যৌথবাহিনী ভৈরবকে মুক্ত করার কোন উদ্যোগ নেয়নি। এখানকার যুদ্ধে লোক ক্ষয় না করে আগে রাজধানী ঢাকা শহরকে মুক্ত করা কৌশলগতভাবে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে অগ্রসর হতে থাকে। তারা ভৈরব শহর পাশ কাটিয়ে পাশের এলাকা দিয়ে ঢাকার দিকে এগিয়ে যায়। তাই ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করলেও ভৈরব শহর অবরুদ্ধই থেকে যায়।

স্থানীয় জব্বার জুট মিলে আশ্রয় নেয়া প্রায় ১০ হাজার পাকবাহিনীকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-শস্ত্রসহ চারপাশ থেকে ঘিরে রাখে মুক্তি ও মিত্রবাহিনী। ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীও মিত্রবাহিনী পুরো ভৈরব শহর ঘেরাও করে পাকিস্তানী বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায়। ১৯ ডিসেম্বর সকালে ভৈরব রেলস্টেশনে মিত্র বাহিনীর মেজর মেহতা পাকবাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার মোঃ সায়দুল্লাহর সাথে আলোচনা করে পাক হানাদারদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করে।

সেই সাথে মুক্ত হয় শহীদ আতিক, নূরু, ক্যাডেট খোরশেদ আলম, আলকাছ মিয়া, আশুরঞ্জন দে, আক্তার মিয়া, নোয়াজ মিয়া, আবু লায়েছ মিয়া, সহিদ মিয়া, নায়েব আলী, মোঃ গিয়াস উদ্দিন, রইছ উদ্দিনসহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ও অগণিত সাধারণ মানুষের রক্তে রঞ্জিত ভৈরব শহর।

পিবিডি/পি.এস

ভৈরব,মুক্ত দিবস

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close