‘আমাদেরকে দাসীর মতো ব্যবহার করা হতো’
সর্বশেষ সৌদি আরবের দুজন নারী দেশ ঘর ছেড়ে পালান। তাদের একজন ২৫ বছর বয়সী ওয়াফা বিবিসিকে বলেন, ‘আমাদের মুখ ঢেকে রাখতে হতো....রান্নাবান্না করতে হতো, যেন আমরা দাস। আমরা এটা চাই না, আমরা সত্যিকারের একটা জীবন চাই, আমাদের জীবন।
সর্বশেষ যে সৌদি নারী ওয়াফা তার বড় বোন মাহা আল-সুবায়ি সঙ্গে সৌদি আরব থেকে পালিয়ে এসেছেন। তারা এখন জর্জিয়ায় রাষ্ট্রীয় একটি আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন। টুইটারে জর্জিয়াসিস্টারস একাউন্ট থেকে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছেন।
সম্পর্কিত খবর
সৌদির এই দুই বোন জাতিসংঘের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, যেন তাদের তৃতীয় কোন নিরাপদ দেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়। সৌদি আরব থেকে তারা প্রথমে জর্জিয়ায় এসেছেন, কারণ এখানে আসতে সৌদিদের ভিসা লাগে না।
ওয়াফা বলেন, ‘আপনাদের সাহায্য দরকার, আমরা নিরাপত্তা চাই, আমরা এমন একটি দেশে যেতে চাই, যারা আমাদের গ্রহণ করবে এবং আমাদের অধিকার রক্ষা করবে।’ মনঃকষ্ট এবং ভীতসন্ত্রস্ত এই সৌদি তরুণীকে বৃহস্পতিবার বিকেলে র্জিয়ার অভিবাসন দফতরে নিয়েছেন কর্মকর্তারা।
স্থানীয় গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে সৌদির ওই দুই বোন বলেছেন, তারা জর্জিয়াতে নিরাপদ বোধ করছেন না। কারণ এখানে সহজেই তাদের পুরুষ আত্মীয়রা খুঁজে বের করতে পারবেন।
ওয়াফা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘জর্জিয়া ছোট একটি দেশ। আমাদের পরিবারের যে কেউ এখানে আসতে পারে এবং আমাদের ধরে ফেলতে পারে।’
কেন সৌদি আরবে নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন এমন প্রশ্ন কর হলে ওয়াফা বলেন, ‘কারণ আমরা নারী। আমাদের দেশে আমাদের পরিবার প্রতিদিন আমাদের হুমকি দেয়।’ তার বোন মাহা জানিয়েছেন, এর প্রমাণও আছে তাদের কাছে।
চরম রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত এই রাজতন্ত্রের দেশটি থেকে নারীদের পালিয়ে আসার সর্বশেষ উদাহরণ এই দুই বোন। দেশটিতে এখনো মেয়েদের কাজ করা বা ভ্রমণ করতে হলে পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে সৌদি আরব থেকে পালিয়ে আসা ১৮ বছর বয়সী কিশোরী রাহাফ মোহাম্মদ আল-কুনান আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিলেন যখন তিনি ফেরত পাঠানো ঠেকাতে থাইল্যান্ডের একটি হোটেলে নিজেকে আটকে টুইটারে সাহায্য চান। তাকে আশ্রয় দিয়েছে কানাডা।
গত মার্চে সহিংসতা এবং দমন পীড়ন থেকে বাঁচতে সৌদি দুই বোন পালিয়ে যান এবং হংকংয়ে ছয়মাস লুকিয়ে থাকেন। পরে তারা মানবিক ভিসা পেয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্য প্রাচ্য বিষয়ক পরিচালক সারাহ লেহ হুইটসন বলেন, ‘সৌদি আরবে নারীদের জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে পুরুষরা।’
তিনি বলেন, ‘জর্জিয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়া ওই বোনদের অধিকারকে সম্মান জানাবে, এটা সঠিক সিদ্ধান্ত এবং ভালো ব্যবস্থা। কিন্তু সৌদি আরবের নিয়মকানুনের কারণে নারীরা যে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, সেটার দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত। সেই সঙ্গে নির্যাতনের শিকার সৌদি নারীদের অর্থবহ এবং কার্যকরী সহায়তা দেয়া প্রয়োজন।’ সূত্র : বিবিসি বাংলা।
/এসএইচ