• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

‘পুলিশের কাজে নেতাগিরি বরদাস্ত নয়’

প্রকাশ:  ৩০ অক্টোবর ২০১৮, ১০:২৪
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

পুলিশের কাজে তার সরকার কোনোরকম রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করবে না। এটাই সরকারের অবস্থান।

সোমবার (২৯ অক্টোবর) ভারতের কোচবিহারের প্রশাসনিক বৈঠকে এ কথা সাফ জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এদিন দিনহাটা-‌সিতাই-‌শীতলকুচি এলাকায় রাজনৈতিক অশান্তি বন্ধে কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী।

তিনটি এলাকার পুলিশ কর্তাদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, ‘এলাকায় কোনও নেতাগিরি চলবে না। আইনভঙ্গকারীদের প্রতি কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি কেউ কিছু বলতে আসে, তাহলে বলতে হবে সরকারি নির্দেশ।

বস্তুত, এদিন আইনশৃঙ্খলা থেকে শিল্পস্থাপন সব বিষয়েই কঠোর অবস্থান নিয়েছেন প্রশাসক মমতা। জানিয়েছেন, শিল্প গড়তে কোনও ঢিলেমি বরদাস্ত করা হবে না। এই প্রশ্নে একদিকে যেমন তিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছেন, তেমনই পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

ছিটমহলের বাসিন্দারা জমির নথি না পাওয়াতেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। দীর্ঘদিন আন্দোলনের নামে বিদ্যুৎ বিল না মেটানোয় নাম না করে ‘গ্রেটার কোচবিহার পিপল্‌স অ্যাসোসিয়েশন’ এর প্রধানকেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। জেনে নেন, জেলার পরিকাঠামো উন্নয়নে রাজ্যের উদ্যোগ কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে।

আসামে নাগরিকপঞ্জি নিয়ে পর পর আত্মহত্যার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মমতা। তার কথায়, এগুলো দুঃখজনক ঘটনা। আমরা উদ্বিগ্ন। কেন্দ্রীয় সরকারকে এর দায়িত্ব নিতে হবে।

এদিন কোচবিহারে নবনির্মিত প্রেক্ষাগৃহ ‘উৎসব ভবন’ এর উদ্বোধন করে প্রশাসনিক বৈঠকে যান মুখ্যমন্ত্রী। সভার শুরু থেকেই শিল্পায়ন নিয়ে তার অবস্থান বুঝিয়ে দেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।

জেলার শিল্পপতিরা অভিযোগ করেন, চকচকা শিল্পকেন্দ্রে শিল্প গড়তে চেয়ে জমি কিনতে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন ২৩ জন শিল্পোদ্যোগী। অথচ এখনও তারা জমির নথিপত্র পাননি। পশ্চিমবঙ্গ শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের ভূমিকাতেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন ব্যবসায়ীরা।

প্রসঙ্গত, এর আগেও বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর নজরে এনেছিলেন ব্যবসায়ীরা। তার ‘সদর্থক’ দৃষ্টিভঙ্গি সত্ত্বেও কাজ না হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সরাসরি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব আলাপন ব্যানার্জিকে বিষয়টি দেখতে নির্দেশ দেন তিনি।

জেলার শিল্পপতিরা কোচবিহারে পৃথক একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ার প্রস্তাব দেন। সেই প্রস্তাবেও ইতিবাচক সাড়া দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী শিল্পপতিদের কাছে জানতে চান, পার্কের জন্য জমি মিলবে কিনা। ‌তাকে জানানো হয়, জমি চিহ্নিত করাই আছে। মুখ্যমন্ত্রী অবিলম্বে তাদের জেলাশাসকসহ অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসার নির্দেশ দেন।

সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের জমির অধিকার নিয়েও কঠোর অবস্থান নেন। ভারতভুক্তির পর ছিটমহলের ৬০০০ একর জমির বাসিন্দারা এখনও জমির নথি হাতে পাননি জেনে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‌এটা তাদের অধিকার। তিনদিনের মধ্যে অর্ডিন্যান্স করে এই সমস্যা মেটাতে হবে। প্রশাসনিক ঢিলেমির জন্য মানুষের হেনস্থা বরদাস্ত করা হবে না।

বিদ্যুৎ বিল বয়কটের আন্দোলন প্রসঙ্গে নাম না করে গ্রেটার নেতা বংশীবদন বর্মনকে কড়া ভাষায় সতর্ক করেন মুখ্যমন্ত্রী। বংশীবদন অধুনা রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমির কর্মকর্তা। সরকারি কমিটিতে থেকেও তিনি ওই আন্দোলনে মদত জোগাচ্ছেন বলে খবর ছিল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।

তিনি বলেন, ‘যে নেতা এই আন্দোলনে মদত জোগাচ্ছেন, প্রয়োজনে তার কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিল আদায় করা হবে। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, রাজ্য সরকার কন্যাশ্রীসহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের পাশে সর্বতোভাবে দাঁড়ানো সত্ত্বেও কেন এই আন্দোলন!

বিদ্যুৎ দপ্তরের আধিকারিকদের তিনি নির্দেশ দেন, ভয় দেখিয়ে নয়, আন্দোলনকারীদের বুঝিয়ে প্রয়োজনে শিবির করে বিদ্যুৎ বিল আদায়ের চেষ্টা করতে হবে। সরকার কিছুটা বিল মকুব করতে পারে। ধাপে ধাপে বিপুল পরিমাণ বকেয়া বিল মেটানোর সুযোগও দেওয়া যেতে পারে।

বৈঠকে শিল্পপতিরা কোচবিহার বিমানবন্দরটি পুনরায় চালু করার দাবি জানালে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার যা করণীয় করেছে। এক্ষেত্রে দায়িত্ব কেন্দ্রের। যে সংস্থাকে বিমান চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা ব্যর্থ হয়েছে। মুখ্যসচিব মলয় দে জানান, অন্য সংস্থার সঙ্গে কেন্দ্র কথা বলছে। কয়েকমাস সময় লাগবে।

কোচবিহারের ভবানীগঞ্জ বাজারের পরিকাঠামো উন্নয়নের বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ব্যবসায়ী সমিতি। মুখ্যমন্ত্রী তাদের বলেন পুরসভা ও প্রশাসনের সঙ্গে বসতে। ব্যবসায়ীদের সাময়িকভাবে সরিয়ে বাজার সংস্কারের পর তাদের হাতে দোকান হস্তান্তরের প্রস্তাব দেন মুখ্যমন্ত্রী।

বৈঠকে ছিলেন- উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব, বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, কোচবিহারের সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়, জলপাইগুড়ির সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মনসহ জেলার বিধায়করা।

/অ-ভি

পুলিশ,কাজ,নেতাগিরি,ভারত,মুখ্যমন্ত্রী,মমতা ব্যানার্জি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close